বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

লুঙ্গির জয়জয়কার

ঈদ বাজারে লুঙ্গির জয়জয়কার খবরটি প্রথম আলো পত্রিকা দেখা গেলো! এই লাইনটি পরেই প্রশ্ন জাগল, যাকাতে তো লুঙ্গি আর শাড়ি দেয়া হয় দরিদ্র জনগনের মাঝে! এই বছর বারিধারার  মানুষরা কি লুঙ্গির পরিবর্তে ফুল/ হাফ প্যান্ট দিচ্ছেন যাকাতে? তারা তো লুঙ্গী পরা একজন রিকশা চালককে নিজেদের এলাকায় ধুঁকতে দেন না! এর মানে উনারা লুঙ্গী নামক পরিধেয় বস্ত্রটিকে নিজেদের ঐতিহ্য থেকে মুছে দিতে চান!


দরিদ্র মানুষের কাছে লুঙ্গী হল সবচেয়ে আরামদায়ক কাপড়। শুধু  দরিদ্র নয় মধ্যবিত্তদের মাঝেও জনপ্রিয় সমান ভাবে। পুরান ঢাকার সেই সাদা লুঙ্গীর ঐতিহ্য আজো বহাল! যত ধনাঢ্য হন না কেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা সাদা লুঙ্গী পরতেই হবে এবং পরছেনও।

৮৫ হাজার গ্রামের দেশ বাংলাদেশ। কৃষি প্রধান দেশে আমাদের সোনার বাংলা। এই বাংলার গ্রামের শতভাগ মানুষ লুঙ্গী পরিধান করেই নিজেদের জীবন পার করে দিচ্ছেন। কোনো অনুষ্ঠান, পার্বণ ছাড়া পাজামা কিংবা প্যান্ট গ্রামের মানুষ পরিধান করে না।

আমাদের দেশের এই ঐতিহ্যবাহী  পোশাকটি বিদেশেও দারুন জনপ্রিয়। হানিফ সংকেতের পরিচালনায় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে একবার দেখানো হয়েছিল বিদেশীরা লুঙ্গীকে কিভাবে ব্যবহার করে! তাদের ভাষ্যটা ছিল ” অসাধারন একটি পোশাক, বোতাম, চেইন ছাড়া পরা যায়” ! আরামদায়ক, পাতলা পোশাক!

রমরমা চড় থাপ্পড়ের ব্যবসা

চমকে উঠার মত শিরোনাম! কোথায় হচ্ছে এই ব্যবসা! সারা বছর জুড়েই হচ্ছে তবে ঈদ কিংবা কোন বড় উপলক্ষ আসলে বেড়ে যায় ঐ চড় থাপ্পড় ব্যবসা কদর। উপচে পরা ভীর লক্ষ্য করা যায় সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে। বিয়ে শাদীতেও এই সেবা জমজমাট। গ্রামে গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ব্যবসা!

একটি সময় এই সেবা শুধু নারীরাই নিতে যেতেন। এখন নারী পুরুষ, ছেলে, মেয়ে সকল বয়সীরা এই সেবা নিতে আগ্রহী! সকলেই যায় যেতে হয় মতো অংশ হয়ে গেছে। কোথায় সেই চড় থাপ্পড় জায়গা যেখানে গিয়ে আমরা সেবা নেই?
- মেয়েদের জন্য বিউটি পার্লার
- ছেলেদের জন্য সেলুন
দুই নামে পরিচিত হলেও এখন সেবা অনেক মিল আছে।

এখানে কি হয়? ফেসিয়াল? পুরা অংশটাই চড় থাপ্পড় যাকে আমরা বলি মেসেজ! বডি ম্যাসেজ! রূপচর্চার জন্য রমরমা ব্যবসা। যেখানে প্রতারণা আর ধাপ্পাবাজি দিয়েই বেশীরভাগ সেলুন আর পার্লার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে।

ছেলেদের সেলুনে কি করা হয়? বর সাজানো, চুল কাটা, চুলে রঙ শেভ, ফেসিয়াল ইত্যাদি। মেয়েদের বেলায় তালিকাটা বেশ লম্বা! বউ সাজানো, চুল রঙ, চুল কাটা, নখ ভুরু কাটা, হাত পা পরিস্কার, চুলের তেল থেকে মেহেদী লাগান, রূপ চর্চার নানা দিক, স্পা আরও কতো কি! সকল সেবার সঙ্গেই চড় থাপ্পড় মারা ম্যাসেজ সেবা দিয়ে থাকে।
এইসব যায়গার আরও একটি মিল আছে যেটায় অনেকেই বিব্রত! সেবা নিতে গেলে দেখা যায় দায়িত্বরত কর্মীরা আলাদা ভাষায় কথা বলছে! যাতে সেবা গ্রহীতা বুঝতে না পারে। এটা নিয়ে নানা সময়ে অভিযোগ করা হলেও পরিবর্তন আসেনি।

পারসোনার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করে একজন ডাক্তার খুব আলোচিত হয়েছিলেন! যেখানে তারা গোপন ক্যামেরায় ধারন করছিলেন উক্ত সেবা গ্রহীতার ছবি! খুব আলোচিত, সমালোচিত হয়েছিল সেই খবরটি! পরবর্তীতে জানা গেছে অভিযোগ দাতার সঙ্গে মোটা অঙ্কের লেনদেন করে মামলা তুলে নেয়া হয়েছে! যার বিপরীতে পারসোনা ঘোষণা করলো যারা সেবা নিতে যাবে তাদের সাথে থাকা কোন মূল্যবান সামগ্রীর দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ নিবে না !  

সেলুনে ছেলেদের চুল কাটে ১০০/- ২০০/- বা ৩০০/- টাকার মধ্যেই। কিন্তু  মেয়েদের বিউটি পার্লারে চুলের মাথা ছাটতে পারা যায় না এই অঙ্কের  টাকায়। অথচ ছেলেদের চুল কাটার সময় এবং পরিশ্রম চোখে পরার মতো। তদ্রুপ একজন বউ সাজাবে – ৮০০০/- ১২০০০/- বা ১৬০০০/- টাকা নিচ্ছে! বলা হয় এক্সপার্ট, নতুন, মাঝামাঝি ধরনের মেয়ে দিয়ে বউ সাজানোর জন্য মূল্য আলাদা!

শেভ করতে দেখা যায় পুরু মুখ জুড়ে শেভিং ফোম মাখে(!)কিন্তু কেন? এর কোন উত্তর নেই(!), চুল কেটে ঘাড় পিঠ মাথায় কিছু চড় থাপ্পড় নামক ম্যাসেজ তেমনি মেয়েদের বেলায় ও ফেসিয়াল করতে গেলে শুরুতেই কিছু ম্যাসেজ আরাম তারপর শসা, আলু! উপটান তেলেসমাতি দিয়ে ব্যাস নানা নামকরণে নেয়া হয় নানা মূল্য! ফেসিয়াল শেষে কিছু কিল ঘুসি পিঠে যে ম্যাসেজ নামে পরে না এটি বলা বাহুল্য!


স্পা করতে গেলে তো মনে হয় মহারানী এসেছেন উনাকে বরণ করছেন। গল্প করছেন, জুস খাওয়াচ্ছেন আরও যে কতো কি! বিনিময়ে নিয়ে নিচ্ছে ৫-১০ হাজার টাকা ঘণ্টা অনুযায়ী! হাস্যকর হলেও সত্য এমন একটি সেবা আমি একবার নিতে গিয়েছিলাম। ৩০ মিনিটে ২০০০ টাকা দিয়ে! উদ্দেশ্য একটাই আসলে কি কি হচ্ছে ওখানে? তারপর থেকে আমার স্বামী বাসায় আসার পর আমাকে খেপাত ও তুমি ২০০০ টাকা দিয়ে এক গ্লাস জুস খেয়ে আসলা? মাসে কয় বার যেতে হবে? উত্তরে- মাসে একবার! ব্যাপার না যেও! এক গ্লাস জুস বলে কথা! এর পর আর যাওয়া হয়নি।
রূপচর্চা কোন বয়স থেকে দরকার? এর উত্তরে রূপ বিসেজ্ঞরা  বলেন মেয়েদের বয়স ৩০ বছর হবার আগে পার্লারে রূপচর্চা করতে আসার প্রয়োজন নেই! কিন্তু পার্লারে গেলে দেখা যায় কিছু কিছু প্যাকেজ- স্কুল, কলেজের ছাত্রীদের জন্য যেগুলু বরাদ্দ এবং মূল্য ২০০-৪০০ টাকা। এই মেয়েগুলুর বয়স তো ৩০ বছর এর ধারে কাছেও না! তাহলে আপারা কি করছেন? ক্যামেরার সামনে এক কথা বলছেন আর উনাদের দেয়া সেবা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভিন্ন চিত্র মিলে!
ঈদ উপলক্ষে তো এই চড় থাপ্পড় খেতে সকলেই হুমড়ি খেয়ে পরছে। কেউ কেউ চুল রাঙ্গানো আবার হাতে মেহেদী লাগানো কিংবা নিজেকে ঈদে নতুন রূপে সকলের মাঝে তুলে ধরতে!

ঠিকভাবে দরজা বন্ধ করেছি তো!

নিজের নিরাপত্তা, পরিবারের নিরাপত্তা নিজেকেই সংরক্ষণ করতে হবে। কারো উপর ভরসা করা মানেই জীবনের ঝুঁকি নেয়া! জেনে শুনে বুঝে এই ঝুঁকি যদি কেউ নিতে চায় তবে সেটা হয় খাল কেটে কুমির আনার সমতুল্য। আসলেই কি নিজের, পরিবারের, মালের  নিরাপত্তা নিজে জোরদার করতে আসলেই কতটা সক্ষম? সকলেই জানমালের নিরাপত্তা চায়। এমতাবস্থায় -

ঈদ উল ফিতরের লম্বা ছুটিতে ঢাকা শহরে বসবাসরত বেশীরভাগ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন নিজের নিকট আত্মীয় কিংবা সকল সদস্য একসাথে উপভোগ করতে। নগরের বাসাটির নিরাপত্তার জন্য ১/২ টি  তালা কি যথেষ্ট? বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী কি পারবেন সকল ধরনের অস্বাভাবিক অবস্থার মোকাবেলা করতে?


প্রতিটি ঘরের নিরাপত্তা দেয়া যাবে না, সকলে জেনো নিজ দায়িত্ব নিয়ে বাসা বন্ধ করে রেখে যায় এমন প্রস্তাব ইতিমধ্যে উপরমহল থেকে বিগত বছর গুলুতে এসেছে! এবারও একই প্রস্তাব আসবে ঈদে ঘরমুখো মানুষগুলুর প্রতি?
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং দেশের দায়িত্বরত দেশ প্রধানরা যদি জানমালের দায়িত্ব নিতে ৪/৭ দিনের জন্য এমন প্রস্তাব দেন তবে কার কাছে রেখে যাবে সকলে? তাহলে কি আল্লাহ্‌র মাল আল্লাহ ই দেখবে! এমন কথায় ভরসা করবে?

পাল্টাপাল্টি আক্রমন বন্ধ করে দল মত নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষকে মুসলমান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড়  উৎসব ঈদ-উল-ফিতর উদযাপনে সকলের মনোভাব হবে উদার এবং সহনশীল। দল মত নির্বিশেষে সকলেই এক হয়ে ঈদ আনন্দ উদযাপন করবে সেই প্রত্যাশা আশা  বাংলার সকল মানুষের !

বাড়ি গিয়ে ঈদ উৎযাপন করতে গিয়ে যদি বাসার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হয় ভাবতে হয় আসার সময় বাসার তালাটা সঠিক ভাবে লাগিয়েছিলাম তো? দরজা জানালাগুলু কি সঠিক ভাবে বন্ধ করেছি? চোর ঢুকল নাতো? চুরি হল কি? বাসায় ফিরে কি সব লণ্ডভণ্ড পাবো এমন দুশ্চিন্তায় ঈদের আনন্দ নিরানন্দ হয়ে যায় অনেকের!

নতুন জ্বালা, হ্যালো বন্ধুরা আমি …

১. ৩৩৩৩ থেকে কল আসলো! হ্যালো বন্ধুরা আমি তোমাদের প্রিয় হৃদয় খান বলছি… তোমরা যদি আমার সাথে কথা বলতে চাও দেখা করতে চাও তাহলে আমাকে কল করো ৩৩৩৩ এই নম্বরে!

২. ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায় ….  প্রিয় গ্রাহক আপনি যদি এই গানটি কলার টিউন করতে চান / বন্ধুকে পাঠাতে চান / ওয়েলকাম টিউন করতে চান/ মোবাইলের রিং টোন হিসাবে ব্যবহার করতে চান তাহলে এই এই এই ধাপের কাজগুলু করুন। মাসিক চার্জ প্রযোজ্য; বিস্তারিত পত্রিকায় দেখুন! ব্যাস  এমন # চাপা আর * চাপার ফাঁদে অনেকেই ইচ্ছে করে আবার অনেকেই অনিচ্ছাকৃতভাবে পা দিচ্ছেন! এদের মধ্যে বয়স্ক মানুষগুলু  অজান্তেই কাজটি করে থাকেন! তারপর বলেন দূর প্রতি মাসে আমার মোবাইল থেকে টাকা কেটে নিয়ে যায়! কে যেন একটা ফোন দিয়ে আমাকে গান শুনায় কোন কথা বলে না!


৩. কিছু মনে করবেন না আপু – আমরা কি জানতে পারি আপনি কোন মোবাইল অপারেটর এর সিম ব্যাবহার করেন! যদি গ্রামীণ ফোন গ্রাহক হন তবে কয়েকটা প্রশ্ন করবো! হুম আমি আমি গ্রামীণ ফোন গ্রাহক! আপা আপনার মোবাইল নম্বরটা প্লিজ!  আপনারা কে? আই ডি কার্ড দেখান! হুম একটি ইভেন্ত ম্যানেজমেন্ট থেকে এসেছে! বাহ্‌ এর পর আমাকে ফোন এসএমএস দিয়ে জালাবেন এই তো? না না আপা! বেশী হলে একটি কল যাবে আপনার ফোনে আমাদের অফিস থেকে। শুধু জানতে যে আমরা কাজটি করেছি কি না! তবে সবাইকে ফোন দেয় না। এই তালিকায় আপনি নাও থাকতে পারেন। বাহ্‌! তারপর! আপা  পুরু নাম, বাসার ঠিকানা বলবেন! ওরে বাবা আমার সব আপনাকে দিতে হবে! আমার নিরাপত্তা নিয়েই সংশয় জাগল! দুঃখিত ভাইয়া সাহায্য করতে পারলাম না! নিজের বিস্তারিত দিতে আমি অনিচ্ছুক!
কোথাও ফোন নম্বর দিতে গেলে চিন্তা ভাবনা করে দেয়া দরকার। নইলে নানারকম বিড়ম্বনায় পরতে হয়!

শুধু একটি দিনের উদাহরণ দেই একজন গ্রাহকের-
সকাল ১০ টায় – স্বপ্ন থেকে এসএমএস এসেছে দারুন অফারের

১২.১০ মিনিটে এসেছে – জিপি স্টার থেকে – গোল্ডেন সিম ৬৮% কমে কেনার অফার

১.০০ মিনিটি এ এসেছে  কিউবি থেকে – ঈদে তোলা ছবি নিয়ে প্রতিযোগিতা এবং জিতলে দুবাই যাওয়ার লোভনীয় অফার

৪.০৮ মিনিটে এসেছে প্রিন্স বাজার থেকে ঈদ শুভেচ্ছা!

এমন করে প্রতিদিন কল, এসএমএস নিয়ে আর কতো বলবে! আর কত জ্বালাবে!

ঈদের টিভি বিনোদন: ভিড়ে হারিয়ে যেতে যেন না হয়

কিছুদিন পর ই আসছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় উতসব ঈদ উল ফিতর। ঈদ আমেজ সবা জায়গায় চলে এসেছে! বাজার থেকে সুপারমল এমন কি ঘর দোর পরিস্কারের কাজগুলুও সেরে নিচ্ছে সকলে ইতিমধ্যে। আবার কেউ কেউ করছে।

ঈদ এর ছুটি আর আনন্দকে আরও বাড়তি করে আনতে আমাদের টি ভি চ্যানেল গুলুও পিছিয়ে নেই। ৬/৭ দিন পর্যন্ত টানা ঈদ অনুষ্ঠানের আয়োজন! নতুন চলচিত্র থেকে নাটক, কৌতুক, প্রতিযোগিতামুলক গান, নাচের অনুষ্ঠানের কমতি নেই। এই অনুষ্ঠানগুলু সত্যি উপভোগ্য এবং একটু হলেও আলাদা স্বাদ এনে দেয় আমাদের জীবনে।


একটি সময় ছিল – অনুষ্ঠানটি পরিবেশিত হচ্ছে রহিম টেক্সটাইল (কাল্পনিক নাম) সৌজন্যে ! অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে কিছু বিজ্ঞাপন প্রচার হতো …। বিগত কয়েক বছর যাবত বিজ্ঞাপনের বদৌলতে হারিয়ে যায় অনুষ্ঠানগুলু। ২০ এর অধিক বাংলা টি ভি চ্যানেল! প্রত্যেকটি চ্যানেল এর এই একই রকম বেহালদশা! অনুষ্ঠানের মধ্যে যে পরিমান বিজ্ঞাপন দেয়া হয় সেটির জন্য যেই ঘোষণা দেয়া হয়, ঘোষক নিজেই ক্লান্ত হয়ে পরেন পরিবেশিত হচ্ছে …. তারপর নামগুলু বলতে বলতে!
এবং
আমরা দর্শকরা ভুলেই যাই কোন অনুষ্ঠানটি দেখছিলাম কোন চ্যানেলে! নতুন একটি প্রহসন চালু হয়েছে। মেগা ধারাবাহিক বানাতে বানাতে উনারা এখন এক ঘণ্টার নাটক বানাতেই পারেন না! তাই পরিচালক মহোদয়রা ঈদে ৫-৭ পর্বের ধারাবাহিক নাটক বানিয়ে দর্শক জোর করে আটকে রাখার অপচেষ্টা করেন!

যারা বলছেন ভারতীয় নাটক ভারতীয় টি ভি চ্যানেল দেখবেন না, তারাই কিন্তু ভারতীয় আদলে সকল অনুষ্ঠান নির্মাণ করে দর্শকদের বুঝাতে চাইছেন ভারতীয় অনুষ্ঠান আমরাও  বানাতে পারি এবং অনুষ্ঠানের মান নিয়ে নেই কোনো ভাবনা! নেই নিজেদের সংস্কৃতির প্রভাব!

এবার ঈদে ব্যাতিক্রম সকল অনুষ্ঠান এবং ধারা প্রবরতিত হবে বলে আমরা নিরীহ বাংলার দর্শকরা আশা করতে পারি! এটা আমাদের দাবি। এটা আমাদের অধিকার! জোর করে নয় নিজেদের কাজের গুনগত মান দিয়ে বাংলার দর্শক বাংলামুখী করুন!

ঈদ আনন্দ আমরা বিজ্ঞাপনের ভিড়ে হারিয়ে যেতে চাই না ! চাই সুন্দর সুন্দর সুখকর অনুষ্ঠানে হারিয়ে যেতে !
সকলকে অগ্রিম  ঈদ মোবারক ….। সবার জীবনে ঈদ আনন্দ বয়ে আনুক! মুছে দিক গ্লানি এনে দিক অফুরন্ত আনন্দ!

টাকা দিয়ে বাতাস কেনা

টাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা খাবারের নামে বাতাস কিনছি! কিন্তু কেউ খেয়াল করছি আবার কেউ কেউ করছি না! সন্তানের আব্দার রক্ষার্থে কিংবা কান্না থামাতে আমরা প্রতিদিন এরকম করে ঠকে যাচ্ছি একজন সাধারন ক্রেতা হিসাবে। সেদিকে কর্তৃপক্ষ বলে যে কিছু আছে সেটির অস্তিত্ত বিলুপ্ত হয়ে গেছে কবে সেটি ও কারো জানা নেই।

শিশুদের পছন্দের খাবারের তালিকায় জুস, চিপস, আইসক্রিম ইত্যাদি অন্যতম! কিন্তু সেই খাদ্য কিংবা পানীয়টি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত এবং সঠিক মূল্য কিনা সেটা পিতামাতা, অভিভাবক কেউই ভেবে দেখছে না বলেই একের পর পর বিদেশী চিপস এবং সাথে দেশি চিপস কোম্পানি গুলু তালে তাল মিলিয়ে প্যাকেট ভর্তি বাতাস বিক্রি করছে! প্যাকেট খুললে পাওয়া যাবে ১০/১২ বেশী হলে চিপস এর অস্তিত্ব! কিন্তু ওজন এবং দামে সাথে ঠাসা প্যাকেটে কেড়ে নেয় শিশু অভিভাবকদের পকেটের টাকা !

লম্বা বড় জার এ বিক্রি হয় বিদেশী চিপস  PRINGELS জেটির বাজার মূল্য ২০০-২৫০ টাকা ! ভারতীয় চিপস LAYS , KURKURE একতরফা বাজার দখল করে রেখেছে ব্যাস কয়েক বছর যাবত ! বাজার মূল্য ১২০ – ১৫ টাকা পর্যন্ত আছে নানা স্বাদে নানা রঙের প্যাকেট বন্দি ! কিন্তু যেই মূল্য দিয়ে কেনা হচ্ছে প্যাকেট খুলেই জাদু দেখা যায় ! কারন প্যাকেট এর ভিতরের অর্ধেক এর বেশী অংশ ভরা থাকে বাতাসে ! কিন্তু মূল্য রাখা হয় ওজনে !

সম্প্রতি সেই ভিনদেশী চিপস এর  সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের দেশীয়  POTATO CRACKERS (PRAN, BOMBEY, BD), RING CHIPS, SUN, MERIDIANS, রুচি বেনানা চিপস, প্রাণ চিকেন বাইট, বোম্বে স্টিক ইত্যাদি চিপস এর প্যাকেটও বাতাস ভর্তি ! বোম্বে পটেট  স্তিক এর মূল্য ৫ টাকা মাত্র! কিন্তু প্যাকেটের আকার এবং ধরনে কি করে মাত্র ৫ টাকা মুল্যে বিক্রি করে মুনাফা হয় জানা নেই! কারন এই মূল্য সাধারন ক্রেতা পর্যায়ে!

খাবারে TESTING SALT ব্যাবহার  সকলের  শরীরের  জন্য খুব ক্ষতিকর ! কিন্তু বাজার থেকে কেনা কোন চিপস এই এউ অনুপস্থতি পাওয়া যাবে না! সব খাবারের প্যাকেটের দিব্বি জুড়ে দেয়া হচ্ছে  BSTI অনুমোদিত! দেয়া হচ্ছে নানা রকমের স্তিকার ফ্রি! ফলে বাচ্চারা ঝুঁকে পড়ছে বিষ খাদ্য খেতে। প্যাকেট চিপস-এ কি আসলেই আলু থাকে? কি কি উপাদান দিয়ে বানানো হয় সেটি খতিয়ে দেখতে গেলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসবে নিশ্চিত!

কোন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে বরং আমরা অভিভাবকরা সচেতন হয়ে সন্তানকে বিষ খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত রাখা ছাড়া আর  কোন পন্থা আমাদের দেশে নেই! দায়িত্বরতরা দেশের উন্নয়নে ব্যস্ত তাই আমাদের উন্নয়ন আমাদেরকেই করতে হবে। আমার সন্তানের দায়িত্ব আমি নিবো। টাকা দিয়ে বাতাস কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। সচেতন নাগরিক সমাজ পারে এই বাতাস কেনা থেকে নিজেদের বিরত রেখে অবস্থার পরিবর্তন করতে আনতে !
 


বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসারের কাণ্ড

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ঢাকা, ১৬ অগাস্ট ২০১৩ শুক্রবার। ইমিগ্রেশন রাতের ফ্লাইট এ অনেক যাত্রীর লম্বা লাইন! দায়িত্বরত  অফিসারদের দায়িত্ববোধ এবং  ইন্টারভিউ নেয়া বড় অদ্ভুত এবং বিব্রতকর। রাত ১২টা, ১টা বেজে যাচ্ছে কিন্তু লাইন আগাচ্ছে না শেষ হচ্ছেনা! যাত্রীদের লাইন ক্রমশ লম্বা হচ্ছে।

এক পরিবারের ৩ জন ৩ লাইনে গিয়ে দাঁড়ালো! যেই লাইনটা আগে আসে সেটাই সবাই গিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। ইমিগ্রেশন সম্পর্কে সবারই কম বেশী জানা আছে। ২/৩ টি লাইন বিদেশী পাসপোর্টধারীরা ফেস করে ৬/৭ টি লাইন বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীরা ফেস করেন!

বিদেশী পাসপোর্টধারী লাইন সম্পূর্ণ ফাঁকা এবং ওখানে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন অফিসের কেউ কেউ আছেন আবার কেউ কেউ আসন ত্যাগ করেছেন! ইতিমধ্যে নানা দেশের নানা ফ্লাইটের লোকজনের দীর্ঘ লাইনে  পুরু পরিবার নিয়ে ফেরত আসা বাবা মাকে তাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে নিয়ে খুব বিপদে পড়েছে! দাড়িয়ে থাকতে থাকতে চিৎকার কান্নায় মশগুল! ভিতরে এসিও খুব ভালো কাজ করছিল না। পরিবেশ তো বেশ নোংরা এবং অগোছালো যা অন্য একটি দেশের বিমান বন্দরের সাথে তুলনা করা চলেনা।

হুট করে আর একজন ইমিগ্রেশন অফিসার আসন ত্যাগ করলেন! বুঝা গেল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছেন। উনি টয়লেট গিয়ে আসলে কি করলেন উঁকি মেরে দেখা গেল – মুখ ওয়াশ করলেন ! ক্লান্তি, ঘুম কি কারনে তিনি আসন ত্যাগ করলেন বুঝা গেলো না ! তবে অগ্নিমূর্তি রূপ নিয়ে  অফিসার নিজের আসনে ফিরে এসেই দেখলেন সবাই লাইন বদলের দৌড় ঝাপ করছে! ওমনি উনি চিৎকার শুরু করলেন। যারা লাইন ত্যাগ করছেন তাদেরকে সহজে ছাড়ব না নানা রকম ভীতি প্রদর্শন করলেন উচ্চবাচ্য করে।

হুট করে একজন দায়িত্বশীল অফিসার কোথা থেকে জেনো এসেই চিৎকার শুরু করলেন ! কি ব্যাপার লাইন এত দীর্ঘ কেন ! আপনারা কি করছেন ? উনি চিৎকার করে বললেন – যাদের সাথে বাচ্চা আছে তারা সরে বিদেশী পাসপোর্ট ডেস্ক এ আসেন ! উনার এমন চিৎকার এবং আদেশে সকলেই নড়ে চড়ে বসলেন! মুহূর্তেই লাইনগুলু দীর্ঘ থেকে শুন্য হয়ে গেলো!

ইমিগ্রশন থেকে মুক্তি পেয়ে মহাআনন্দে ট্রলিতে করে নিজের হাতে করে নিয়া আসা ব্যাগগুলু নিয়ে এগুচ্ছেন একজন ভদ্রলোক! হুট করে পথ আটকে দাঁড়ালেন একজন ওয়াকিটকি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অফিসার! দাঁড়ান – আপনার এই ব্যাগে কি আছে? উত্তরে – কম্পিউটার! আচ্ছা যান তাহলে!

বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে পাবলিক গাড়ি। ট্যাক্সি খুঁজে বের করা অনেক দুঃসাধ্য। একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন ট্যাক্সি লাগবে কিনা জানতে চায়! আমাদের দেশের ট্যাক্সি ক্যাবগুলু দুর্যোগপূর্ণ বেহাল নোংরা অবস্থা এবং অকারনে উচ্চ ভাড়া হাঁকানো নিত্য ব্যাপার।

এভাবে যাত্রীদের হয়রানী কি আদৌই বন্ধ হবে? কোনো মহল কি আছেন যারা শক্ত হাতে সব কিছু নিয়ন্ত্রনণ করবেন?

একি দেশ! রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই?

১০ অগাস্ট ২০১৩, সন্ধ্যা ৭ টা বাজে। ট্যাক্সি ক্যাবে করে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরুতেই অবাক হতে হল! ঈদের পর দিন পুরো রাস্তা ফাঁকা! তবে কি ঈদের প্রভাব? রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই? গাড়িগুলো সব লেন মেনে চলছে। কোনো গাড়ি তার লেন বদলাচ্ছে না! কোনো গাড়ি অভারটেক করছে না! নেই কোনো হর্ণের শব্দ! সকল ধরনের গাড়িগুলোই হর্ন ছাড়া চলাচল করছে আপন গতিতে! গাড়ির গতিবেগ ৮০- ১০০ কি.মি। অবাক করার মতো গতি। যে গতি বুকে কম্পন ধরিয়ে দিতে সময় লাগেনা !

 অনেকটা পথ এগুতেই একটি ট্রাফিক সিগন্যালে এসে ক্যাবটি নিজে থেকেই থেমে গেলো! কোনো ট্রাফিক পুলিশ গাড়িটিকে আটকায়নি! রাস্তায় সার্জেন্ট নামক কোন সুপুরুষদের উপস্থিতিও শুণ্য! চারপাশে কোন ট্রাফিক পুলিশের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেলো না। নিয়ম মেনে সবুজ, হলুদ, লাল বাতির আইনে গাড়িগুলো এগুচ্ছে। দারুন অনুভূতি! প্রশ্ন জাগল – ট্রাফিক পুলিশ কি ছুটিতে নাকি কাজে ফাঁকি মারছে? আর পথ এগুতেই আরও একটি ট্রাফিক সিগন্যাল। এখানেও কোন ট্রাফিক পুলিশ হাত উচিয়ে একটি আলপিন নিয়ে দাঁড়িয়ে নেই !

কিছু কিছু ট্রাফিক সিগন্যালে ঘড়িও দেখা গেলো! সবুজ বাতি কত সেকেন্ড পর বন্ধ হবে কিংবা লাল বাতি কত সেকেন্ড পরে নিভে যাবে সেই সময়টা দেখাতে থাকে।

ফাঁকা রাস্তা উপভোগ করলাম দারুন গতিতে দক্ষ চালকের সাথে ভ্রমন! কিছুক্ষণ পর টের পেলাম  চালক আমার গন্তব্যে আমাকে পৌঁছিয়ে দিতে বার বার চেষ্টা করে পথ হারিয়ে ফেলছে! চালককে প্রশ্ন করা  হল – Taxi do not have the Benefit of GPRS ( General Pocket Radio Service)? উত্তরে –YES MAM I HAVE ! বলেই GPRS অন করলেন এবং গন্তব্য বলে দিতেই একজন মহিলার মিষ্টি কণ্ঠে বার বার নির্দেশ আসতে লাগলো ১০০ মিটার লেফট/ ২০০ মিটার রাইট ইত্যাদি! সহজেই চালক গন্তব্য খুঁজে পেলো। তবে এর আগে কেন চালক GPRS চালু করেনি সেটা জানা হয়নি!

এমনটি আমার সোনার বাংলায় হবার নয় এখনো! হয়েছে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে
কুয়ালালামপুর যাওয়ার পথে! বিদেশের মাটিতে প্রথম পা রাখার অদ্ভুত অনুভূতি আমার পুরো পরিবারকেই আনন্দিত করলো! অনুভব করা শুরু হল উন্নত দেশের মিষ্টি বাতাস আর আধুনিক প্রযুক্তি ও শৃঙ্খল জীবন যাত্রা! যেদিকে চোখ যায়, কি সুন্দর! কি সুন্দর! কি পরিকল্পিত দেশ! ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া গাড়ি চলাচল করছে প্রথম হতবাক হতে হল!

চালকদের মধ্যে নেই প্রতিযোগিতা, নেই তাড়াহুড়া! ট্যাক্সি চালকরা মিটার কিংবা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকায় যাতায়াত করে যে কোনো যায়গায়! যেতে মানা নেই! নির্দিষ্ট অঙ্কের বেলায় যাত্রীর টাকার অঙ্ক পছন্দ না হলেই ঐ ট্যাক্সিতে চড়া হয় না!

চালকদের পড়নে ধবধবে সাদা শার্ট। ট্যাক্সিগুলো পরিছন্ন একদম পরিপাটি! চালক শিক্ষিত মনে হল। শুদ্ধ উচ্চারণে গুছিয়ে ইংলিশে কথা বলছিল অনবরত! টুরিস্ট শুনে সন্মান বাড়িয়ে দিল দেশের অতিথিকে বরণ করতে! ট্যাক্সি চালক শুধু নিজের নাম পরিচয়-ই দিলেন না সাথে নিজের আইডি কার্ডও দেখালেন। খুব হাসিখুশি পুরো রাস্তা আমাদের দেখাতে দেখাতে নিয়ে গেলেন। ভ্রমনে যাওয়ার আগে অনেকেই বলেছিল – ঐ দেশের চালকেরা যখন টুরিস্টদের পায় তখন মিটারে টাকার অঙ্ক বাড়াতে রাস্তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়! সেই আতঙ্কে আগে থেকে জেনে নিয়েছিলাম আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে ফিক্সড অঙ্ক হলে কত টাকা নিবে কিংবা মিটারে গেলে কতো টাকা আসবে? দুইটা তথ্যই সঠিক ছিল। বাড়তি আয়ের জন্য আমাদের সাথে প্রতারণা করেনি! বাহ হোটেলে যেতে যেতে পুরো এক ঘণ্টার অধিক সময়ে অনেক কিছু দেখা হয়ে গেলো চালকের বন্ধুত্ব আচরনের সুবাদে!

* আমাদের ঢাকা আমাদের বাংলাদেশ কবে এমন পরিকল্পিত হবে! আমার সন্তান আমি কি দেখে যেতে পারবো? আমাদের দেশে কি কোন মাহাথির মোহাম্মদ কোনো দিন আসবে? যিনি নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে দেশকে গরিব থেকে উন্নত দেশে পরিনত করবে। আমাদের দেশে সম্পদ অভাব নেই। অভাব আমাদের জন্য একজন মাহাথির মোহাম্মদ! পুরু এক ঘণ্টার পথে বসে বসে এটাই ভাবতে হল আর হতাশা জাপটে ধরছে!
জানি না জানি না কেন এমন হয় ….

ঈদ সালামী বুমেরাং হয়ে যেতে পারে!

মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে ধর্মোৎসব হল ঈদ উল ফিতর এবং ঈদ উল আযহা। সকলেই মিলে মহা ধুমধামে ঈদ উৎযাপনে মগ্ন হয়ে যায়। ঈদের দিনের সকালের বিশেষ আকর্ষণটির  অপেক্ষা করে মুলত বাচ্চারা! সেটাই হল ঈদ! ঈদই সব সময় নগদ টাকায় দেয়া হয়ে থাকে। নতুন চকচকে টাকার নোট সে যত কম অঙ্কেরই হোক বাচ্চাদের কাছে সবচেয়ে বেশী কদর পায়! হাতে পেলে খুশীতে মেতে উঠে তারা।

অনেক পরিবারেই এক সময় ঈদে দেয়া নেয়ার প্রচলন ছিল না। কিন্তু এখন এই প্রচলিত স্রোতে নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছেন বাবা মা সন্তানের চাহিদা এবং বন্ধুদের সাথে গল্প করতে নিজের স্ট্যাটাস রক্ষা করতেই বলা যায়।

আমার সন্তান হাসিনের বয়স ৮ + বছর। এবারের ঈদে সেলামী পেয়েছে মামার কাছ থেকে চকচকে ১০০ টাকার একটি নোট! সেই টাকা পাওয়ার পর থেকেই তার হাবভাব বলদে গেছে! আমার এখন ১০০ টাকা আছে! ১০০ টাকা দিয়ে একেকবার একেটা খেলনা, হাবিজাবি কিনে ফেলছে! খুব যত্ন করে নিজেই টাকাটি লুকিয়ে রেখেছে! বাসার কাজের সহযোগী মেয়েটি চুরি করে নিয়ে যেতে পারে ভয়ে সে সব সময় সচেতন। প্রতিদিন টাকাটি জায়গা মতো আছে কিনে চেক করতেও ভুলে না।

রবিবার ঈদ-উল-ফিতরের পর প্রথম স্কুল খুলেব্ছে। ভালো ফুর্তিতে আছে! এক রাতে মা’কে এসে বলছে, “টাকাটা কাল স্কুলে নিয়ে যাবো! একটা ড্রয়িং খাতা লাগবে কিনে আনবো” ! মায়ের তো চোখ ছানাবড়া! তোমার খাতা লাগবে আমি এনে দিবো! তুমি আমি একসাথে গিয়ে কিনবো? বাবা আম্মুকে টাকাটা দিয়ে দাও! সে দিবে না! উত্তরে বলছে – বাহ রে টাকাটা যখন আমার আছেই তখন খরচ করবো না কেন? টাকা তো খরচ করার জন্যই! 

বুঝানো হল – বাবা টাকায় অনেক জীবাণু থাকে! কত মানুষ এই টাকা হাতে নেয়! মানল না মায়ের আদরের কথা! পরের দিন ভোর  বেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় মা লক্ষ্য করলেন আদরের ছেলে কি জেন প্যান্ট এর পকেটে নিলো একটা জিজ্ঞাসা করাতেই বলল না। হাত বের করে দেখালও টাকাটা! সেই চকচকে ১০০ টাকার নোট! সুন্দর করে বুঝিয়ে নিয়ে হল! বাবা আম্মু কি বলেছি তুমি আমি গিয়ে খাতা কিনবো ঘুরবো! হাল্কা মন খারাপ হলেও বাধ্য ছেলের মতোই কিছুই বলল না টাকাটা মায়ের হাতে দিয়ে স্কুলে চলে গেলো!

ঈদ উপলক্ষে বাচ্চাদের হাতে নগদ টাকা দেয়ার প্রচলনটা বন্ধ করা দরকার! এই যুগের বাচ্চাদের হাতে টাকা আসলেই এরা বিপথে চলে যেতে সময় লাগে না! কালক্ষেপণ করে না নিজেকে মাদকের রাজ্যে বিলিয়ে দিতে! হাসিন খুব ছোট তাই ঈদ দিয়ে কখনো খেলনা / খাতা / কিংবা এটি হট ডগ কিনতে চেয়েছে!

হাসিনের এহেন কাজ হয়তো মারাত্মক কিছুই না তবে সুদুর প্রসারীভাবে ভাবলে এমন অনেক কিছুই বের হয়ে আসে। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ঐশী কেইসটাই চলে আসে!  অভিভাবকের অসচেতনতা, হাতে অনবরত টাকা আসাই সঙ্গ দোষে ঐশীকে আজ সমাজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক খুনি গড়ে তুলেছে! যার প্রভাবে অনেক বাচ্চাই এখন জানতে পারছে অনেক ভিতরের তথ্য! পত্রিকাগুলু খুব ফলাও করে প্রকাশ করছে ঐশী কিভাবে কি করেছে! কিশোর বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে অজান্তে ছড়িয়ে পড়ছে কালো জগতের ঠিকানা তথ্য।

ছোট ঐশীর  বিচার, শাস্তি ও বাচ্চাদের উপরে প্রভাব ফেলবে। আমাদের দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আসলেই নজিরবিহীন! বাবা মা’কে খুন করেছে ক্রোধের বশে! নেশার টাকা পায়নি এই অভিযোগে নয়! নেশার জগত থেকে আটকে দিয়েছে বলে একা একা লোহমর্ষক বেদনাবিধুর ঘটনাটি।

আমাদের সকলের সন্তানদের নিয়ে ভাবতে হবে। ঐশী একটি বিচ্ছিন্ন গল্প একটি নতুন অধ্যায়। ইয়াবা, মদ, গাজা, হেরোইন ইত্যাদি নতুন কিছুই নয়! তাই আমাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে সন্তানের সঙ্গে তালা চাবিহিন বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে ! চাওয়া পাওয়ার গুরুত্ব দিতে হবে। ভুল হলে সুন্দর করে বোঝাতে হবে!

দুধ কি পদার্থ ?

ক্লাসে শিক্ষক এসে ছোট ছোট বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করলেন! বলতো – দুধ কি পদার্থ? ওমনি ক্লাসের সকল ছেলেমেয়ে একযোগে বলে উঠলো - স্যার দুধ হলো কুড়কুড়ে পদার্থ! স্যার চমকে গেলেন! একজন ছাত্র স্যারের হাতে একটি প্যাকেট এগিয়ে দিলো! হম এবার স্যার বললেন – সঠিক বলেছ – দুধ আসলেই কুড়কুড়ে পদার্থ!
রোমানিয়া বিস্কুটের একটি বিজ্ঞাপন ! শিক্ষক চরিত্রে আছেন আমাদের দেশের অতিপ্রিয় মুখ ড. ইনামুল হক আর একদল ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। বিজ্ঞাপনটি থেকে কিছুই শিখার নেই উল্টো বাচ্চাদের বিভ্রান্তি দেয়ার মতো শক্ত পক্ত একটি ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে।


দুধ তরল পদার্থ। একটি আদর্শ খাবার।

দুধ খাওয়ার পরিবর্তে দুধের তৈরি বিস্কুট খেলে যদি সত্যি দুধের চাহিদা মিটে যেতো তাহলে ডাক্তার, পুষ্টিবিদ থেকে কেউই বাচ্চাদের কষ্ট করে দুধ খাওয়াতে পরামর্শ দিতেন না! বাচ্চাদের জন্য এক গ্লাস দুধ আর ওদের মুখে তুলে দিয়ে গ্লাসের দুধ শেষ করানো অনেক কষ্টসাধ্য কাজ বেশীরভাগ বাচ্চাদের বেলায়।

মন্ত্রিসভায় ‘মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প শিশুখাদ্য আইন ২০১৩’ চুড়ান্ত অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এ ব্যাপারে নিষেধজ্ঞা দেওয় হয়েছে।

শিশু খাদ্য হিসাবে মায়ের দুধের বিকল্প হিসাবে গুঁড়া দুধকে পূঁজি করে সাধারণ মানুষের সামনে বিজ্ঞাপন দেয়া যাবেনা! একই সঙ্গে বিকল্প শিশুখাদ্য বিক্রির ব্যাপারে উত্সাহিত করতে কাউকে উপহার, মূল্যছাড়, সভা-সেমিনার আয়োজন, শিশুদের জন্য প্রতিযোগিতা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে শিশুখাদ্যের মোড়কে শিশু বা মায়ের ছবির ব্যবহার।

এ-সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের আওতায় বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯ অনুযায়ী বিচার করার বিধান রাখা হয়েছে।


মায়ের দুধের বিকল্প কোন খাবারই শিশুর জন্য হতে পারে না। এ নিয়ে বহুবছর যাবত নানা রকম প্রচারনা চলছে। শিশু জন্মের পর শাল দুধ খেতে দেয়া হতো না এক সময়! দেয়া হতো শিশুর মুখে মধু কিংবা খাঁটি সরিষার তেল! গ্রাম বাংলায় এখনো এই ধারা প্রচলিত আছে। যতই বলা হচ্ছে শিশু জন্মের পর দুই বছর মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে এবং প্রথম ছয় মাস শুধুই মায়ের বুকের দুধ খেতে দিতে হবে। কার্যত সেটির প্রচলন একেবারেই নেই বললেই চলে। নানা অজুহাতে মা এবং পরিবারের সকলের ঐক্য মতের ভিত্তিতে নবজাতকের মুখে তুলে দেয়া হয় কেনা খাবার যা শিশুর দৈহিক ও  মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ হয়।
মিডিয়ার চটকদার বিজ্ঞাপনের দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয় একটি বিশেষ মহল কিংবা শ্রেণী। যারা বিশ্বাস করেন চটকদার বিজ্ঞাপনের কথাগুলু! ফলে ছোট সোনামণির হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করেন না একটা মিল্ক ক্যান্ডি! একটি টেঁটরা প্যাঁক দুধ কিংবা চকলেট দুধ সাথে একটি স্ট্র! স্কুলের টিফিনেও দেখা যায় অনেকে দিয়ে দেন এক প্যাকেট চকলেট দুধ! আদর্শ খাবার বলে তালিকাটায় বিরাট একটি স্থান দখল করে রেখেছে বছরের পর বছর।
সকল মিডিয়াতেই দুধ নিয়ে ভ্রান্ত ও প্রলুব্ধকরণ আইন ও শাস্তির বিধান হলেও বন্ধ হয়নি এই সব বিজ্ঞাপন। দুধ খেলে শিশু ২/৩ ইঞ্চি লম্বা হয়! মেধা বিকাশ হয়, শক্তি হয়, পরীক্ষায় ভাল ফলাফল, খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়! দেশের বাজার ছেয়ে গেছে খ্যাত ও অখ্যাত নানা ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ! নিয়ন্ত্রনহীনভাবে সাধারন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে এইসব অস্বাস্থ্যকর দুধ!

এক সময় গুঁড়া দুধে মেলামাইনের অস্তিত্ব প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। সেই দিকটি সম্পূর্ণ ধামা চাপা পরে গেছে! অনুমদনহীনভাবে শিশু খাদ্য বাজারজাতকরণ হচ্ছে । এইসব কোম্পানিগুলু অন্যায় ভাবে/ মানুষকে ঠকিয়ে শিশু স্বাস্থ্য থেকে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যখাতের প্রতি কাচকলা দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা!

চিনে এরকম অনেক শিশু দুধে মেলামাইনের বিষে মৃত্যুবরণ করেছে ! 

দেশের আপামর জনসাধারনের স্বাস্থ্য রক্ষা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব হওয়া সত্ত্বেও – এই সব বিজ্ঞাপন, কোম্পানিগুলুর নিয়ন্ত্রণের সরকার কিছু করছে না কিংবা নিয়ন্ত্রণে নেই! উল্টো জিম্মি হয়ে আছে এই সকল প্রতারক খুনি চক্রের কাছে!