বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

ঈদ সালামী বুমেরাং হয়ে যেতে পারে!

মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে ধর্মোৎসব হল ঈদ উল ফিতর এবং ঈদ উল আযহা। সকলেই মিলে মহা ধুমধামে ঈদ উৎযাপনে মগ্ন হয়ে যায়। ঈদের দিনের সকালের বিশেষ আকর্ষণটির  অপেক্ষা করে মুলত বাচ্চারা! সেটাই হল ঈদ! ঈদই সব সময় নগদ টাকায় দেয়া হয়ে থাকে। নতুন চকচকে টাকার নোট সে যত কম অঙ্কেরই হোক বাচ্চাদের কাছে সবচেয়ে বেশী কদর পায়! হাতে পেলে খুশীতে মেতে উঠে তারা।

অনেক পরিবারেই এক সময় ঈদে দেয়া নেয়ার প্রচলন ছিল না। কিন্তু এখন এই প্রচলিত স্রোতে নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছেন বাবা মা সন্তানের চাহিদা এবং বন্ধুদের সাথে গল্প করতে নিজের স্ট্যাটাস রক্ষা করতেই বলা যায়।

আমার সন্তান হাসিনের বয়স ৮ + বছর। এবারের ঈদে সেলামী পেয়েছে মামার কাছ থেকে চকচকে ১০০ টাকার একটি নোট! সেই টাকা পাওয়ার পর থেকেই তার হাবভাব বলদে গেছে! আমার এখন ১০০ টাকা আছে! ১০০ টাকা দিয়ে একেকবার একেটা খেলনা, হাবিজাবি কিনে ফেলছে! খুব যত্ন করে নিজেই টাকাটি লুকিয়ে রেখেছে! বাসার কাজের সহযোগী মেয়েটি চুরি করে নিয়ে যেতে পারে ভয়ে সে সব সময় সচেতন। প্রতিদিন টাকাটি জায়গা মতো আছে কিনে চেক করতেও ভুলে না।

রবিবার ঈদ-উল-ফিতরের পর প্রথম স্কুল খুলেব্ছে। ভালো ফুর্তিতে আছে! এক রাতে মা’কে এসে বলছে, “টাকাটা কাল স্কুলে নিয়ে যাবো! একটা ড্রয়িং খাতা লাগবে কিনে আনবো” ! মায়ের তো চোখ ছানাবড়া! তোমার খাতা লাগবে আমি এনে দিবো! তুমি আমি একসাথে গিয়ে কিনবো? বাবা আম্মুকে টাকাটা দিয়ে দাও! সে দিবে না! উত্তরে বলছে – বাহ রে টাকাটা যখন আমার আছেই তখন খরচ করবো না কেন? টাকা তো খরচ করার জন্যই! 

বুঝানো হল – বাবা টাকায় অনেক জীবাণু থাকে! কত মানুষ এই টাকা হাতে নেয়! মানল না মায়ের আদরের কথা! পরের দিন ভোর  বেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় মা লক্ষ্য করলেন আদরের ছেলে কি জেন প্যান্ট এর পকেটে নিলো একটা জিজ্ঞাসা করাতেই বলল না। হাত বের করে দেখালও টাকাটা! সেই চকচকে ১০০ টাকার নোট! সুন্দর করে বুঝিয়ে নিয়ে হল! বাবা আম্মু কি বলেছি তুমি আমি গিয়ে খাতা কিনবো ঘুরবো! হাল্কা মন খারাপ হলেও বাধ্য ছেলের মতোই কিছুই বলল না টাকাটা মায়ের হাতে দিয়ে স্কুলে চলে গেলো!

ঈদ উপলক্ষে বাচ্চাদের হাতে নগদ টাকা দেয়ার প্রচলনটা বন্ধ করা দরকার! এই যুগের বাচ্চাদের হাতে টাকা আসলেই এরা বিপথে চলে যেতে সময় লাগে না! কালক্ষেপণ করে না নিজেকে মাদকের রাজ্যে বিলিয়ে দিতে! হাসিন খুব ছোট তাই ঈদ দিয়ে কখনো খেলনা / খাতা / কিংবা এটি হট ডগ কিনতে চেয়েছে!

হাসিনের এহেন কাজ হয়তো মারাত্মক কিছুই না তবে সুদুর প্রসারীভাবে ভাবলে এমন অনেক কিছুই বের হয়ে আসে। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ঐশী কেইসটাই চলে আসে!  অভিভাবকের অসচেতনতা, হাতে অনবরত টাকা আসাই সঙ্গ দোষে ঐশীকে আজ সমাজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক খুনি গড়ে তুলেছে! যার প্রভাবে অনেক বাচ্চাই এখন জানতে পারছে অনেক ভিতরের তথ্য! পত্রিকাগুলু খুব ফলাও করে প্রকাশ করছে ঐশী কিভাবে কি করেছে! কিশোর বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে অজান্তে ছড়িয়ে পড়ছে কালো জগতের ঠিকানা তথ্য।

ছোট ঐশীর  বিচার, শাস্তি ও বাচ্চাদের উপরে প্রভাব ফেলবে। আমাদের দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আসলেই নজিরবিহীন! বাবা মা’কে খুন করেছে ক্রোধের বশে! নেশার টাকা পায়নি এই অভিযোগে নয়! নেশার জগত থেকে আটকে দিয়েছে বলে একা একা লোহমর্ষক বেদনাবিধুর ঘটনাটি।

আমাদের সকলের সন্তানদের নিয়ে ভাবতে হবে। ঐশী একটি বিচ্ছিন্ন গল্প একটি নতুন অধ্যায়। ইয়াবা, মদ, গাজা, হেরোইন ইত্যাদি নতুন কিছুই নয়! তাই আমাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে সন্তানের সঙ্গে তালা চাবিহিন বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে ! চাওয়া পাওয়ার গুরুত্ব দিতে হবে। ভুল হলে সুন্দর করে বোঝাতে হবে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন