বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

দুধ কি পদার্থ ?

ক্লাসে শিক্ষক এসে ছোট ছোট বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করলেন! বলতো – দুধ কি পদার্থ? ওমনি ক্লাসের সকল ছেলেমেয়ে একযোগে বলে উঠলো - স্যার দুধ হলো কুড়কুড়ে পদার্থ! স্যার চমকে গেলেন! একজন ছাত্র স্যারের হাতে একটি প্যাকেট এগিয়ে দিলো! হম এবার স্যার বললেন – সঠিক বলেছ – দুধ আসলেই কুড়কুড়ে পদার্থ!
রোমানিয়া বিস্কুটের একটি বিজ্ঞাপন ! শিক্ষক চরিত্রে আছেন আমাদের দেশের অতিপ্রিয় মুখ ড. ইনামুল হক আর একদল ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। বিজ্ঞাপনটি থেকে কিছুই শিখার নেই উল্টো বাচ্চাদের বিভ্রান্তি দেয়ার মতো শক্ত পক্ত একটি ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে।


দুধ তরল পদার্থ। একটি আদর্শ খাবার।

দুধ খাওয়ার পরিবর্তে দুধের তৈরি বিস্কুট খেলে যদি সত্যি দুধের চাহিদা মিটে যেতো তাহলে ডাক্তার, পুষ্টিবিদ থেকে কেউই বাচ্চাদের কষ্ট করে দুধ খাওয়াতে পরামর্শ দিতেন না! বাচ্চাদের জন্য এক গ্লাস দুধ আর ওদের মুখে তুলে দিয়ে গ্লাসের দুধ শেষ করানো অনেক কষ্টসাধ্য কাজ বেশীরভাগ বাচ্চাদের বেলায়।

মন্ত্রিসভায় ‘মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প শিশুখাদ্য আইন ২০১৩’ চুড়ান্ত অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এ ব্যাপারে নিষেধজ্ঞা দেওয় হয়েছে।

শিশু খাদ্য হিসাবে মায়ের দুধের বিকল্প হিসাবে গুঁড়া দুধকে পূঁজি করে সাধারণ মানুষের সামনে বিজ্ঞাপন দেয়া যাবেনা! একই সঙ্গে বিকল্প শিশুখাদ্য বিক্রির ব্যাপারে উত্সাহিত করতে কাউকে উপহার, মূল্যছাড়, সভা-সেমিনার আয়োজন, শিশুদের জন্য প্রতিযোগিতা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে শিশুখাদ্যের মোড়কে শিশু বা মায়ের ছবির ব্যবহার।

এ-সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের আওতায় বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯ অনুযায়ী বিচার করার বিধান রাখা হয়েছে।


মায়ের দুধের বিকল্প কোন খাবারই শিশুর জন্য হতে পারে না। এ নিয়ে বহুবছর যাবত নানা রকম প্রচারনা চলছে। শিশু জন্মের পর শাল দুধ খেতে দেয়া হতো না এক সময়! দেয়া হতো শিশুর মুখে মধু কিংবা খাঁটি সরিষার তেল! গ্রাম বাংলায় এখনো এই ধারা প্রচলিত আছে। যতই বলা হচ্ছে শিশু জন্মের পর দুই বছর মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে এবং প্রথম ছয় মাস শুধুই মায়ের বুকের দুধ খেতে দিতে হবে। কার্যত সেটির প্রচলন একেবারেই নেই বললেই চলে। নানা অজুহাতে মা এবং পরিবারের সকলের ঐক্য মতের ভিত্তিতে নবজাতকের মুখে তুলে দেয়া হয় কেনা খাবার যা শিশুর দৈহিক ও  মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ হয়।
মিডিয়ার চটকদার বিজ্ঞাপনের দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয় একটি বিশেষ মহল কিংবা শ্রেণী। যারা বিশ্বাস করেন চটকদার বিজ্ঞাপনের কথাগুলু! ফলে ছোট সোনামণির হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করেন না একটা মিল্ক ক্যান্ডি! একটি টেঁটরা প্যাঁক দুধ কিংবা চকলেট দুধ সাথে একটি স্ট্র! স্কুলের টিফিনেও দেখা যায় অনেকে দিয়ে দেন এক প্যাকেট চকলেট দুধ! আদর্শ খাবার বলে তালিকাটায় বিরাট একটি স্থান দখল করে রেখেছে বছরের পর বছর।
সকল মিডিয়াতেই দুধ নিয়ে ভ্রান্ত ও প্রলুব্ধকরণ আইন ও শাস্তির বিধান হলেও বন্ধ হয়নি এই সব বিজ্ঞাপন। দুধ খেলে শিশু ২/৩ ইঞ্চি লম্বা হয়! মেধা বিকাশ হয়, শক্তি হয়, পরীক্ষায় ভাল ফলাফল, খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়! দেশের বাজার ছেয়ে গেছে খ্যাত ও অখ্যাত নানা ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ! নিয়ন্ত্রনহীনভাবে সাধারন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে এইসব অস্বাস্থ্যকর দুধ!

এক সময় গুঁড়া দুধে মেলামাইনের অস্তিত্ব প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। সেই দিকটি সম্পূর্ণ ধামা চাপা পরে গেছে! অনুমদনহীনভাবে শিশু খাদ্য বাজারজাতকরণ হচ্ছে । এইসব কোম্পানিগুলু অন্যায় ভাবে/ মানুষকে ঠকিয়ে শিশু স্বাস্থ্য থেকে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যখাতের প্রতি কাচকলা দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা!

চিনে এরকম অনেক শিশু দুধে মেলামাইনের বিষে মৃত্যুবরণ করেছে ! 

দেশের আপামর জনসাধারনের স্বাস্থ্য রক্ষা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব হওয়া সত্ত্বেও – এই সব বিজ্ঞাপন, কোম্পানিগুলুর নিয়ন্ত্রণের সরকার কিছু করছে না কিংবা নিয়ন্ত্রণে নেই! উল্টো জিম্মি হয়ে আছে এই সকল প্রতারক খুনি চক্রের কাছে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন