বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

একি দেশ! রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই?

১০ অগাস্ট ২০১৩, সন্ধ্যা ৭ টা বাজে। ট্যাক্সি ক্যাবে করে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরুতেই অবাক হতে হল! ঈদের পর দিন পুরো রাস্তা ফাঁকা! তবে কি ঈদের প্রভাব? রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই? গাড়িগুলো সব লেন মেনে চলছে। কোনো গাড়ি তার লেন বদলাচ্ছে না! কোনো গাড়ি অভারটেক করছে না! নেই কোনো হর্ণের শব্দ! সকল ধরনের গাড়িগুলোই হর্ন ছাড়া চলাচল করছে আপন গতিতে! গাড়ির গতিবেগ ৮০- ১০০ কি.মি। অবাক করার মতো গতি। যে গতি বুকে কম্পন ধরিয়ে দিতে সময় লাগেনা !

 অনেকটা পথ এগুতেই একটি ট্রাফিক সিগন্যালে এসে ক্যাবটি নিজে থেকেই থেমে গেলো! কোনো ট্রাফিক পুলিশ গাড়িটিকে আটকায়নি! রাস্তায় সার্জেন্ট নামক কোন সুপুরুষদের উপস্থিতিও শুণ্য! চারপাশে কোন ট্রাফিক পুলিশের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেলো না। নিয়ম মেনে সবুজ, হলুদ, লাল বাতির আইনে গাড়িগুলো এগুচ্ছে। দারুন অনুভূতি! প্রশ্ন জাগল – ট্রাফিক পুলিশ কি ছুটিতে নাকি কাজে ফাঁকি মারছে? আর পথ এগুতেই আরও একটি ট্রাফিক সিগন্যাল। এখানেও কোন ট্রাফিক পুলিশ হাত উচিয়ে একটি আলপিন নিয়ে দাঁড়িয়ে নেই !

কিছু কিছু ট্রাফিক সিগন্যালে ঘড়িও দেখা গেলো! সবুজ বাতি কত সেকেন্ড পর বন্ধ হবে কিংবা লাল বাতি কত সেকেন্ড পরে নিভে যাবে সেই সময়টা দেখাতে থাকে।

ফাঁকা রাস্তা উপভোগ করলাম দারুন গতিতে দক্ষ চালকের সাথে ভ্রমন! কিছুক্ষণ পর টের পেলাম  চালক আমার গন্তব্যে আমাকে পৌঁছিয়ে দিতে বার বার চেষ্টা করে পথ হারিয়ে ফেলছে! চালককে প্রশ্ন করা  হল – Taxi do not have the Benefit of GPRS ( General Pocket Radio Service)? উত্তরে –YES MAM I HAVE ! বলেই GPRS অন করলেন এবং গন্তব্য বলে দিতেই একজন মহিলার মিষ্টি কণ্ঠে বার বার নির্দেশ আসতে লাগলো ১০০ মিটার লেফট/ ২০০ মিটার রাইট ইত্যাদি! সহজেই চালক গন্তব্য খুঁজে পেলো। তবে এর আগে কেন চালক GPRS চালু করেনি সেটা জানা হয়নি!

এমনটি আমার সোনার বাংলায় হবার নয় এখনো! হয়েছে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে
কুয়ালালামপুর যাওয়ার পথে! বিদেশের মাটিতে প্রথম পা রাখার অদ্ভুত অনুভূতি আমার পুরো পরিবারকেই আনন্দিত করলো! অনুভব করা শুরু হল উন্নত দেশের মিষ্টি বাতাস আর আধুনিক প্রযুক্তি ও শৃঙ্খল জীবন যাত্রা! যেদিকে চোখ যায়, কি সুন্দর! কি সুন্দর! কি পরিকল্পিত দেশ! ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া গাড়ি চলাচল করছে প্রথম হতবাক হতে হল!

চালকদের মধ্যে নেই প্রতিযোগিতা, নেই তাড়াহুড়া! ট্যাক্সি চালকরা মিটার কিংবা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকায় যাতায়াত করে যে কোনো যায়গায়! যেতে মানা নেই! নির্দিষ্ট অঙ্কের বেলায় যাত্রীর টাকার অঙ্ক পছন্দ না হলেই ঐ ট্যাক্সিতে চড়া হয় না!

চালকদের পড়নে ধবধবে সাদা শার্ট। ট্যাক্সিগুলো পরিছন্ন একদম পরিপাটি! চালক শিক্ষিত মনে হল। শুদ্ধ উচ্চারণে গুছিয়ে ইংলিশে কথা বলছিল অনবরত! টুরিস্ট শুনে সন্মান বাড়িয়ে দিল দেশের অতিথিকে বরণ করতে! ট্যাক্সি চালক শুধু নিজের নাম পরিচয়-ই দিলেন না সাথে নিজের আইডি কার্ডও দেখালেন। খুব হাসিখুশি পুরো রাস্তা আমাদের দেখাতে দেখাতে নিয়ে গেলেন। ভ্রমনে যাওয়ার আগে অনেকেই বলেছিল – ঐ দেশের চালকেরা যখন টুরিস্টদের পায় তখন মিটারে টাকার অঙ্ক বাড়াতে রাস্তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়! সেই আতঙ্কে আগে থেকে জেনে নিয়েছিলাম আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে ফিক্সড অঙ্ক হলে কত টাকা নিবে কিংবা মিটারে গেলে কতো টাকা আসবে? দুইটা তথ্যই সঠিক ছিল। বাড়তি আয়ের জন্য আমাদের সাথে প্রতারণা করেনি! বাহ হোটেলে যেতে যেতে পুরো এক ঘণ্টার অধিক সময়ে অনেক কিছু দেখা হয়ে গেলো চালকের বন্ধুত্ব আচরনের সুবাদে!

* আমাদের ঢাকা আমাদের বাংলাদেশ কবে এমন পরিকল্পিত হবে! আমার সন্তান আমি কি দেখে যেতে পারবো? আমাদের দেশে কি কোন মাহাথির মোহাম্মদ কোনো দিন আসবে? যিনি নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে দেশকে গরিব থেকে উন্নত দেশে পরিনত করবে। আমাদের দেশে সম্পদ অভাব নেই। অভাব আমাদের জন্য একজন মাহাথির মোহাম্মদ! পুরু এক ঘণ্টার পথে বসে বসে এটাই ভাবতে হল আর হতাশা জাপটে ধরছে!
জানি না জানি না কেন এমন হয় ….

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন