মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০১৩

এতো তফাৎ কেন?

বড় বাপের পোলায় খায়, শাহী জিলাপি, ছোলা, পিঁয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ, শাহী কাবাব, স্বামী কাবাব, শিক কাবাব, ঘুগনি, হালিম, রেশ্মি জিলাপি, দই বড়া, পাকুরা, রায়তা, দই চিড়া, দই বুন্দিয়া, ভেলপুরি, লাচ্ছি, ফলের চাট, চিকেন টিক্কা, শাসলিক, ফিশ ফিঙ্গার, লাবাং, পরোটা কাবাব রোল, হরেক রকম শরবত, খেজুর, নানা রকম ফল ইত্যাদি আমাদের অনেকের দৈনিক ইফতারের তালিকায় থাকে। ইফতারের আয়োজন অনেকটা ফুর্তি একটি আনন্দঘন পরিবেশে খাওয়া দাওয়া সারাদিনের রোজা শেষে! আমাদের দেশে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্তরাও এরকমই করে
থাকেন। কেবল বাদ পরেন তারা যাদের বলা হয় দরিদ্র!
এরা কি করে?
আমাগো আবার ইফতার! গরিবের  লাইগা এগুলা না। আমরা গরীবরা ত সারা বছরই রোজা থাকি! আমরা কি আপ্নেগ বড় লকেগ মতো ডেইলি খাইতে পারি? পারিনা ! ইয়ার লাইজ্ঞা রোজা আমাগো লাইগা নতুন কিছু না, কষ্টের কিছু না, আনন্দের কিছু না। আমাগো ১২ মাস এক রকমই যায়। তয় হে রোজার মাস আইলে আপনেরা বড় লোকেরা দান খয়রাত দেন আমাগো লাইগা মোডা কাপড় আর কেউ কেউ ১/২ দিন ইস্তারি (ইফতার) খাওয়ায়। তাও যেই ধাক্কা মারামারি কইরা যাইতে হয় হেইডা শুইনা বুঝবেন না। তারপরও যহন জানতে চাইলেন শুনেন – আমরা ইস্তারে (ইফতারে) পানি খাই, পাইলে একটু বুট মুড়ি খাই যদি কেউ দেয় পাই নাইলে টেহা হাতে আইলে কিনি কিছু। ঘরের সকলে মিল্লা সব এক লগে ভাইংগা চুইরা মিলাইয়া ভাগ করে খাই!
পলিথিনের প্যাকেটে ছোলা, মুড়ি, একটি করে বেগুনি, জিলাপি এবং খেজুর। সব মিলিয়ে দাম ১০ টাকা। মাখানো এই ইফতারি অনেকেই কিনছেন। অনেকের এটারও সামর্থ্য নেই। ফুটপাতের ইফতারের দোকান থেকে ৫-১০ টাকার ইফতারি কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে রাজধানীর হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে। কেউ কেউ বাড়ির দরজায় ঘুরে ঘুরে কিছু ইফতার সংগ্রহ করে আবার পথ শিশুরা দোকানের সামনে হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকে ক্রেতা এবং বিক্রেতার পানে!
কিছু কিছু বিক্রেতা ওদের হাতে মাঝে মাঝে খাবার তুলে দিলেও কখনোই কোন ক্রেতাকে দেখা যায়নি ঐ দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটির  হাতে একটু খাবার তুলে দিতে! ছোট ছোট বাচ্চাগুলু দাঁড়িয়ে থাকে পেটের তাড়নায়। ধাক্কা মেরে ফেলে দিতেও তোয়াক্কা করে না। ক্রেতাদের একটা কথা খুব কমন-কাজ করে খেতে পারিস না? চল কাজ করবি বাসায়! ভিক্ষা করে খাওয়া তদের অভ্যাস হয়ে গেছে! থাপ্পড় মেরে/ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়াটাও নৈমিত্তিক দৃশ্য!
তবে দেশের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ফ্রি খেজুর ও পানি সরবরাহ করছেন সেই সব মানুষগুলুর জন্য যারা যানজট কিংবা কোন কারনে রাস্তায়/বাইরে রয়ে গেছেন! সেটির পরিমানও খুব নগণ্য! এছাড়া রোজায় রাজধানীর হাজার হাজার মানুষের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রতিদিন ইফতারের আয়োজন করছে। এই আয়োজন সকলের জন্যই।
দেশের বড় বড় নেতারাও একদিন এতিম কিংবা পথ শিশুদের নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকেন। সেখানেও থাকে কিছু সীমাবদ্দতা! গণমাধ্যমগুলুও তুলে ধরে কোথায় কি কি নামী দামি বিশেষ বিশেষ খাবার মিলে এবং দরদাম কতো! ইফতারে কি কি বানাতে হবে, কি করে বানাতে হবে এই নিয়ে সকল টিভি চ্যানেলেই চলে ইফতার তৈরির আয়োজন অনুষ্ঠান!
যেখানে দেশের এক শ্রেণীর মানুষ প্রতিদিন ইফতার করছেন নানা মুখরোচক খাবার দিয়ে সেখানে এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি দিন কেন আমাদের দেশপ্রেমিকরা বরাদ্দ করেন? প্রতিদিন নয় কেন? এই মানুষগুলুকেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে কারো অন্তরে লাগে না!
(!) কাজের সময় কাজী, কাজ ফুরালেই পাজী! / জোর যার মল্লুক তার!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন