বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

ডিজিটাল প্রযুক্তির বিড়ম্বনার আংশিক

তরুণ প্রজন্ম, বর্তমান প্রজন্ম, আমাদের প্রজন্ম, সকল প্রজন্মই এখন ডিজিটাল জীবনের স্পর্শে উৎফুল্লিত। কথায় আছে বেশি বাড়লে ঝড়ে পরে! তেমন কিছু বিড়ম্বনার আংশিক কিছু কিছু দৃশ্যে সকলেই বিরক্ত, বিব্রত। প্রযুক্তি ব্যবহারে সুফল কুফল দুই দিক এ আছে। স্মার্ট মোবাইল আর ইন্টারনেট। দুইটি আলাদা প্রযুক্তি হলেও বেশ ক বছর হল দুইটির সমন্বয়ে একটা প্রযুক্তিগত আমুল পরিবর্তন এসেছে।

মোবাইল সমাচার

- গতকাল ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। একটি ছেলেকে যতই EXCUE ME EXCUSE MEকরতেছি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! বিরক্ত হয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে ছেলেটাকে পাশ কাটালাম। সামনে গিয়া ঘাড় ফিরে দেখলাম নিরব পথচারীর মুখ খানা। উনি মনের সুখে হেড ফোন লাগায়ে গান শুনতে শুনতে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে আর ঝাল মুড়ি খাচ্ছে। বয়সও খুব বেশি না। শুরুতে রাগলেও পরে হাসলাম। বেচারা একটু ফুর্তি-ই তো করছে!

- আমার বাসার আমার কাজের সহযোগী মেয়েটির খুব শখ মোবাইল ফোনে রেডিও শুনবে! তার মনের আশা আমি পূর্ণ করলাম। ব্যাস এখন আর টি ভি দেখেনা। সব সময় কানে বীচি! আমি মজা করে হেড ফোনকে বীচি বলি! ফলাফল যা হল মেয়েটা সব সময় কানে হেড ফোন লাগায়ে কাজ করে। একদিন আমি ডাকছি শুনতে পায় না তো পায়-ই না। পরে কাছে গিয়ে দেখি কানে বীচি। হাসলাম। বললাম এটা কি সারাদিন শুনতে হয়? এর কিছুদিন পর মেয়েটার খুব মাথা ব্যথা। রীতিমতো বমিও করে! আমার স্বামী পেশায় চিকিৎসক তাই উনি চেক করে দেখলেন বড় কোন সমস্যা নয়।

তবে কেন এত ব্যথা এত বমি! পরবর্তীতে আবিস্কার হল আমার সহযোগী রাত ২/৩ টা পর্যন্ত রেডিও শুনে। ঘুমায় না। এটি সারাদিন কানে হেড ফোন লাগিয়ে রাখার প্রভাব। গত কয়েক দিন যাবত রেডিও শুনে না মেয়েটা সুস্থ আছে! তবে তাকে ঔষধ খেতে হচ্ছে। কারন রোগ বাঁধায়ে ফেলছে। আমি অকে নির্দেশ দিয়েছি রেডিও শুনবি লাউড স্পিকার দিয়ে।

- বাসে যখন চলাচল করি চালক সাহেবের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলেই বুক কাঁপতে থাকে! কিন্তু তখন উনি আমার অধীনে না। অগণিত যাত্রীর ভিড়ে আমি একজন মহিলা আসনের যাত্রী কিংবা দাঁড়িয়ে যাওয়া যাত্রী মাত্র। ভীষণ ভয় পাই। গাড়ি চলন্ত অবস্থায় কানে ফোন লাগায়ে দিব্যি কথা বলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে। কিছু দিন আগে এ বিষয়ে দেশে আইন হয়েছিল। চালক গাড়ী চালানোর সময় ফোন এ কথা বলতে পারবেনা ! কিন্তু বাস্তবায়ন শূন্যের কোঠায়!

- যখন সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় উঠি তখন চালক আমার অধীনেই বলা যায়। তাকে বলে দেই ভাইয়া মোবাইল বেজে উঠলেও আমাকে নামায়ে দেয়ার আগে ফোন রিসিভ করতে পারেবন না এতে আমি যেমন দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচব তেমনি চালকের পরিকল্পিত ছিনতাই থেকেও মুক্তি পাবো।

ফেসবুক সমাচার !

সব চেয়ে বহুল আলোচিত বিতর্কিত একটি ডিজিটাল সাইট ! ব্লগ এবং ফেসবুক ! যেই দুটির ব্যবহার এখন সম্পূর্ণ ঋণাত্মক অবস্থায় করছে!

- ফেসবুকের কারনে দেশে ডিভোর্সের হার বেরে গেছে।

- বেড়ে গেছে অনৈতিক সম্পর্ক।

- অপরিচিত মানুষগুলো বন্ধু বেশে ঢুকে পড়ছে অহরহ।

- বাবা মাকে সময় না দিয়ে দরজা বন্ধ করে বন্ধু বান্ধব নিয়া চ্যাট করতেই বেশী আনন্দ পায় তরুণ প্রজন্ম!

- নানা রকম পেজ শেয়ার দিয়ে তো ঘটে গেল রামুতে ভয়াবহ কাণ্ড!

- ব্লগ নিয়া তো লিখার প্রয়োজনই নাই!

ইন্টারনেট সমাচার !

কিছু ওয়েব সাইট আছে যেগুলুর কিছু চ্যাট সাইট, কিছু ছবি শেয়ার দেয়া ভিডিও শেয়ার দেয়ার সাইট। যেগুলুর নাম অনেকের-ই জানা আছে। তাই আমি এখানে লিখে অজানাদের জানলাম না। যার মাধ্যমে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে সাইবার জগতে একটা ব্ল্যাক মেইল গল্প। চ্যাট থেকে বন্ধুত্ব। সেখান থেকে প্রেম অথবা অনৈতিক সম্পর্ক! নোংরা ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং পরবর্তীতে এগুলু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে ব্ল্যাক মেইল করা হুমকি নানা রকম ফায়দা লুটে নেয়া। অতঃপর ছবি ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড করে দিয়ে নানা জনকে বিব্রত করা। এটা নতুন কিছু না। অনেক পুরানো। কিন্তু শুরু থেকে আজ চলছে।

এইসবে নেই কোন নিয়ন্ত্রণ ! যার ইচ্ছা হল যা সে সেটাই করল । আবার নিজেরা আজকাল নানা রকম সফটওয়্যার দিয়া কপি পেস্ট করে কত কিছু বদলায়ে ফেলে। এমন একটি ঘটনার জন্য কিছুদিন আগে আমার একজন সহকর্মীর চাকরি চলে গেছে।

আমাদের রুচিবোধ, মানসিকতা দিন দিন এত নিন্মগামি হচ্ছে সেটা বলা বাহুল্য। প্রযুক্তি ব্যবহারে সকলের রুচিবোধ মার্জিত করা উচিত পাশাপাশি জনসচেতনটা জরুরি এবং ছোটদের প্রযুক্তি ব্যবহারে ভালো দিকগুলু সুন্দর করে তুলে ধরতে হবে। আর যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারা নিজ দায়িত্বে নিজেদের শুধরে নেয়া দরকার!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন