বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

প্রয়োজনে না খেয়ে থাকবো!

রানা প্লাজা ধস থেকে বেঁচে যাওয়া নারী শ্রমিকদের চিৎকার কান্না দেখতে পেলাম টিভিতে। প্রতিদিনই এই করুণ দৃশ্য দেখছি। দেখতে কষ্ট হলেও দেখছি। আহত নারী শ্রমিক সকলের শেষ কথা একটি! প্রয়োজনে না খেয়ে থাকবো, ভিক্ষা করে খাব, না খেয়ে মরবো, তারপরও গার্মেন্টসে কোনদিন চাকরী করব না। মৃত্যু কি জিনিস কত কষ্টের বিভীষিকার হতে পারে ভবনের নীচে আটকা পরে বুঝতে পেরেছি, বলেই কেউ কেউ হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলেন, আবার কেউ কেউ ক্লান্ত শরীরে মুখ ফিরিয়ে নিলেন!
১০০ ঘণ্টা কোন বধ্য জায়গায় আটকে থেকে যদি কেউ মুক্ত হয় তবে সে সেই জীবনে কোনদিনই প্রবেশ করবে না। কেন করবে? যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই, পরিবারের নিরাপত্তা নেই, নেই তেমন কোনো সুযোগ সুবিধাও। তারপরও বেঁচে থাকার টিকে থাকার জন্য সকালে ৮ টা থেকে রাত ১০ টা আবার মাঝে মাঝে নাইট ডিউটি ও করে, করেছে, করছে…।
গার্মেন্টস শ্রমিকরা কখনোই তাদের ন্যায্য পাওনা পায় নি। শ্রমিক আইন মানেনি কোন গার্মেন্টস মালিক। একদিন পরই আছে ১ লা মে ! সেদিন কত কথা কত জনে বলবে! কিন্তু কেউই মানছে না আইন। শ্রমিক আইন। ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিত আমাদের দেশের সকল গার্মেন্টস শ্রমিক এমনকি আমরাও।
এত ভয়ংকর বিপদ থেকে বেঁচে যারা ফিরেছেন তারা কতোটা স্বাভাবিক জীবন পাবেন সেটাই সন্দেহ! কেউ হাত কেউবা পা হারিয়ে পঙ্গু জীবন নিয়ে বেঁচে নিতে হবে। একটি মেয়ে বলছিল ” দোয়া কইরেন যেন আমার পা দুইটা বাইচা যায় , আমি যেন আগের মতো হেঁটে চলে খেতে পারি “ ! কি নিষ্ঠুর নিয়তি! যেই  মেয়েটি ২৪ এপ্রিল সকালেও হেঁটে গার্মেন্টস গেল কাজ করতে সে ২৮ এপ্রিল পঙ্গু জীবন থেকে মুক্তির জন্য আকুতি করছে।
যেই মা তার সন্তানকে বাসায় রেখে বলে গিয়েছিলেন মা বিকেলেই ফিরে আসবো! সেই মা লাশ হয়েও সন্তানের কাছে ফিরে আসে নাই, ছয় দিন হয়ে গেলও! জানেনা তারা তাদের মা কে পাবে কি না জীবিত / মৃত / কিংবা গলিত!
এই মানুষগুলোর যারা মারা গেল, পঙ্গু হল তাদের দায়িত্ব কে নিবে? কেউ নিবে না। দাফনের ২০,০০০/- টাকা দাফনের কাপড়, এক কালীন টাকাই সব! সন্তানের কাছে মা কে ফিরায়ে দেয়া হবে? মায়ের কোলে সন্তানকে ফিরিয়ে দেয়া হবে? বিধবার সাদা কাপড় রঙ্গিন করা হবে? একটি পরিবারের আনন্দ ফিরায়ে দিবে?
আর যারা বেঁচে গেলেন তাদেরই বা কি হবে? এরা কি মানসিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারবে! নতুন কোন গার্মেন্টসে কাজে যোগ দিবে? কিংবা নতুন ধরনের কাজে যোগ দিতে পারবে? ভিতরের আতঙ্ক দূর করবে কে?
তাজরিন গার্মেন্টস আগুন লাগার পরই অনেকে আতংকিত ছিল। তারপর এইবার নিশ্চিত করে দিল রানা প্লাজা ধস। আসলেই যদি কেউ কাজ করতে না আসে! তাহলে ত আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের ধ্বংস নিশ্চিত, পাশা পাশি বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে! বেড়ে যাবে দারিদ্রতা! সেই নিরুপায় অসহায় মানুষগুলো এক সময় লিপ্ত হবে সমাজ বিরোধী কাজে।
একটি মহলের অবহেলার জন্য কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে আমাদের অর্থনীতি। আমাদের সমাজ! বলা সহজ করা কঠিন। সেই সহজ কাজটি সকলে করে। কিন্তু কঠিন কাজটি কেউ করে না। তাই আমরা আজ দরিদ্র দেশ। দুর্নীতি যুক্ত দেশ। এই দেশ কলঙ্কের কালি কবে কিভাবে ঘুচাবে কেউই জানে না। কারন যারা দায়িত্তে আছেন তারা বলতে বলতে ক্লান্ত। করতে গেলেই সময় লাগে কখনো ১৯৯০ সালে দাড়িঁয়ে ২০০০ সালের স্বপ্ন আবার ২০০০ সালে দাঁড়িয়ে ২০২০ সালের সপ্ন এর কথা বলে শেষ করে দেন। কাজ হবে সেদিন। ২০২০ সালে এসে শুনব ২০৩০ সালের মহা পরিকল্পনা! এভাবেই চলতে থাকবে বলার পালা! পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে হবে, করবে করবে, কিন্তু আদৌ হবে বলে কেউই নিশ্চয়তা দিবে না !
সবাই স্বপ্ন দেখতে ভালবাসেন। অতিতের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সকলে মরিয়া। কিন্তু বর্তমান, ভবিষ্যতের সাথে তাল মিলিয়ে যে চাহিদা, যে প্রয়োজন কেউ বলে না, বুঝে না! বুঝলেও আগামির স্বপ্ন দেখায়। ১৯৯০-২০০০-২০২০- ২০৩০ এভাবেই কেটে যাবে বাবা মায়ের স্বপ্ন স্বামীর স্বপ্ন, শ্বশুর শাশুড়ির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে! সন্তানের স্বপ্ন কেউ পূর্ণ করছে না!
সকলে সৎ হোক, দায়িত্বশীল হোক এটাই প্রত্যাশা করছি আজকের পর থেকে। লাল সবুজের সোনার বাংলাকে আর রক্তাক্ত দেখতে চাইনা। কোন নিরপরাধ প্রাণ অকালে ঝরে পড়বে না সেই আশা আমরা ব্যক্ত করতে চাই মনে প্রাণে!
২৯-০৪-২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন