বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

ভাঙ্গা গড়ার খেলার পালা …বেলায় বেলায়

অফিস ছুটি শেষে বের হয়ে চারপাশটা কেমন ঝকঝকে ফকফকে লাগছে। ঠিক বুঝে ওঠার উপায় নেই। ঘড়িটার দিকে আবার তাকালাম। ছয়টা বেজেছ তো! নাকি আগে ভাগে ভুল করে বের হয়ে পড়লাম। হাত ঘড়ি, মোবাইল সব ঘড়ির সময় ঠিক আছে। বাইরের আবহাওয়া অন্যদিনের মতোই। তবে কি হল প্রশ্ন করতে করতে একটু এগিয়ে দেখলাম – আচ্ছা এই কথা ! অফিসের পাশের ফুটপাতে যেই ছালা দিয়ে ঢাকা চায়ের টং দোকানটি ছিল সেটি আজকে নেই, নেই গাঁদা গাঁদা চা, সিগারেট খাওয়া মানুষদের আড্ডা। তাই তো এত পরিস্কার।
গুলশান-১ নম্বর মোড় আসতেই ওমা! কি দেখছি! গুলশান ডিসিসি মার্কেটের সামনেটাও ফকফকা আলোয় ঝলমল করছে! সব ফুলের দোকানগুলু, রাস্তায় তৈরি করা ছালা দিয়ে ঢাকা চিকেন ফ্রাইয়ের দোকানগুলু কিছুই নেই! বাহ দারুন তো! সুন্দর পদক্ষেপ। আয়েশে হাঁটতে পারছি কোন ঝামেলা নেই ফুটপাতে। অবশ্য এটাও ভাবছি আহা বেচারা দোকানদারগুলুর কি হবে? এদের ব্যবসা তো লাটে উঠলো। অত শত ভাবতে ভাবতেই নিজের গন্তব্যে চলে গেলাম।
২/৩ দিন পর …..
আরেহ আমার অফিসের পাশের চাচা আবার টং নিয়ে বসে পরেছেন! কিন্তু ছাদ নেই! সবই আছে কেবল ছাদবিহীন যেকোনো সময় যেন গুটিয়ে দৌঁড় মারতে পারেন সেইভাবে সব সাজিয়ে বসেছেন। আরেহ তাজ্জব ব্যাপার ! ডিসিসি মার্কেটের সামনে কে ফুল বাগান লাগাল? এত সুন্দর বাগান আগে তো চোখে পরেনি? কেউ লাগায়নি! ফুল ব্যবসায়িরা আবার দোকান পেতে বসেছেন ছাদ দেয়াল ছাড়া! তাই শুধু ফুল বাগান মনে হচ্ছে!
হোম চিকেন ফ্রাই, আলুর চপ, ভাতের হোটেলও চলে এসেছে। সবাই ছাদবিহীন! সবার চোখে মুখে ফুর্তি, ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই!
কিন্তু এভাবে আর কতদিন? প্রায়শই ঢাকা শহরের নানা জায়গায় এভাবে হামলা দিয়ে দোকান পাট সাময়িক উঠিয়ে দেয়া হয় কিন্তু কিছুদিন না যেতেই আবার গড়ে উঠে সেইসব দোকানপাট। যার জন্য দোকান মালিকদের একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা প্রতিদিন একটি মহলকে দিতে হয়। এই অস্থায়ী ভাঙ্গা গড়ার খেলায় সরকার, সিটি কর্পোরেশন, দোকান মালিকরা কোন ভাবেই লাভবান হয়না হবেও না। লাভবান হয় একটি গোষ্ঠী, দল, সংগঠন কিছু প্রভাবশালী আমলা যারা এই আইন চালু থাকার ফলে এইসব দোকান থেকে চাঁদা তুলে নিজেরা দাপটে চলাফেরা করে।
এইসব দোকানপাট সম্পূর্ণরূপে তুলে ফেলার জন্য সঠিক পদ্ধতি কোনদিনই প্রয়োগ করা হয়নি। ফলে ভাঙ্গা গড়ার খেলায় পালায় পালায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অনেক মানুষ, অনেক পরিবার। এদের জন্য একসময় ফ্রাই ডে মার্কেট বানানো হলেও তেমন কোন সুফলতা আসেনি বলে ওই মার্কেটের অস্তিত্ব বাস্তবে এখন আর নেই। কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় না যে তা নয়! ওখানে তারা স্থায়ী আসন-ই গেড়ে নিয়েছে খোলা আকাশের নীচে। এই মানুষগুলুর জন্য পাশে কেউ নেই!
আসছে ঈদ! এখন তো চলবে আরও ভাঙ্গাচুড়ার খেলা! পুলিশ আসছে পুটলি গুটিয়ে দৌঁড়! করুন দৃশ্য! কিন্তু ওই একই জায়গায় অবৈধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বড়লোকের ছোট গাড়িটি। প্রাইভেট কার। ওটার দিকে ফিরেও তাকায় না। ফুটপাত পরিস্কার মানে শুধু যেন হকার/অস্থায়ী ব্যবসায়িরা কেবল না হয়। এদের উঠিয়ে একটি জায়গা দিতে হবে কম ভাড়ায়।
ভাঙ্গা গড়ার খেলার পালা বেলায় বেলায় আতঙ্কিত ব্যবসায়িদের পাশে এসে সকলেই দাঁড়াতে হবে এবং সঠিক সমাধান খুঁজে বের করে তাদের দৌঁড় দৌঁড় খেলা বন্ধ করে শান্তিতে ব্যবসা করে পরিবার নিয়ে বাঁচার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন