বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

শহরে নতুন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার আবির্ভাব!


অতি সম্প্রতি ঢাকা শহরসহ দেশের আরও নানা জায়গায় নতুন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার আবির্ভাব হয়েছে। যার সঙ্গে বাস চালক, ট্র্যাক চালক কিংবা কোন বড় যানবাহনের চালক জড়িত নয় এবং তাদের দায়িত্বহীনতায় এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে না! যার প্রতিকার প্রতিরোধ জনগণের নিজেদেরই উপর নির্ভর করছে!

কয়েক মাস আগে পর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল সায়দাবাদ এবং বাসাবোতে। মোটর সাইকেল চালকের পিছনের আসনে বসেছিলেন ৫০ বছর ঊর্ধ্ব বড় বোন। একটি সময় বুঝতে পারলেন পিছনে কেউ নেই! মোটর সাইকেল থামিয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলেন বোন রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছেন রাস্তায়! চলন্ত একটি গাড়ির নিচে তিনি পরে গিয়েছিলেন মোটর সাইকেল চালকের মোবাইল ফোনে কথা বলার অসতর্কতার জন্য।

সায়দাবাদ মা’কে নিয়ে মোটর সাইকেল দিয়ে দূরে কোথাও যাওয়ার সময় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। তিনি ছেলেকে ধরে রাখতে পারেননি শক্ত করে। মোটর সাইকেলের গতি ছিল এবং মা সেই গতিতে নিজেকে আসনে শক্ত রাখতে না পেরে পিছন দিক থেকে ছিটকে পরে দিয়ে প্রাণ হারান।

আজকাল চলতি পথে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গান শুনার প্রবনতা লক্ষণীয়! কিন্তু সেটি অসহনীয় কিংবা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে কেবলমাত্র “ হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনে পথ চলার জন্য “ ! সেই হেড ফোন লাগিয়ে বাইরে চলাচলের কারনে মারা যাচ্ছেন অনেকেই। কারন তারা গানের বাদ্য ছাড়া আশেপাশে কি ঘটেছে কেউ কি ডাকছে শুনতেই পান না!

০১-০১-২০১৩ কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে রাজধানীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক কিশোর নিহত হয়েছে।

১৫ফেব্রুয়ারী ২০১৩ হেডফোন কানে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবক ভালোবাসা দিবসে বান্ধবীকে নিয়ে ‘হেডফোন’ কানে দিয়ে রেললাইনে হাঁটার সময় যশোরে ট্রেনে কাটা পড়ে আজাদ (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। চুড়ামনকাটির সানতলা রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

১০মার্চ ২০১৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশনের অদূরে মহাডাঙ্গা নামক স্থানে কানে হেড ফোন লাগিয়ে মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে রেল লাইন পার হবার সময় আমনুরা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী শাটল ট্রেনের ধাক্কায় ট্রেনের নিচে পড়ে মারা যায়।

২৬ মে ২০১৩ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় চলন্ত ট্রেনের বাতাসে খলিলের লুঙ্গি হাওয়ার দাপটে উড়ে যায়| এই ঘটনায় ব্যাপক লজ্জিত হওয়ায় মনের দুঃখে জ্বলন্ত ফ্যানের সাথে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে ফ্যান ভেঙ্গে ফ্যানের দুটি পাখায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে তার মৃত্যু হয়!

৪ জুন ২০১৩ কানে হেড ফোন লাগিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন এক যুবক। হয়তো প্রিয় গানের উচ্চসুরে অন্য কোনো দিকেই তার খেয়াল ছিল না। হঠাৎ পেছন থেকে ছুটে আসে ট্রেন। এ সময় সব পথচারী রেললাইন ছেড়ে দিলেও তিনি হাঁটতে থাকেন আপন মনে। বারবার চিৎকার করেও তাকে সতর্ক করতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারও একই পরিনতি হয়।

১৫.০১.২০১২ কানে হেডফোন লাগিয়ে মুঠোফোনে গান শুনছিল দুই বন্ধু। গান শুনতে শুনতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ধরে হাঁটছিল। পেছন থেকে কখন যে ট্রেন চলে এসেছে, টেরই পায়নি তারা। একপর্যায়ে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় একজনের।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে এবারে বি.কম পাস করেছিলেন মির্জা মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী (২৪)। আরও উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। কানে হেডফোন লাগিয়ে বেখেয়ালে রেললাইনের ওপর হাঁটার সময় দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় !

৫ নভেম্বর, ২০১২ কানে হেডফোন লাগানো। রেল লাইনের ওপর দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন লোকমান (৩০)। আপন মনে গান শুনছিলেন তিনি। গানের মাঝে হারিয়ে ফেলেছিলেন নিজেকে। পেছন থেকে ধেয়ে আসছে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুত গতির পারাবত এক্সপ্রেস। তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় লোকজন আর্তচিৎকার করলেও তিনি শুনতে পান নি !

এই প্রজন্মের কথা, যখনই মন খারাপ হয় তখনই কানে হেডফোন দিয়ে ভলিউম হাই করে দেই, মেটালিকা আমার সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।’

কৌতুক করে বলা যায় – বিমান চলছে। এক পেসেঞ্জার হঠাৎ করে হুরমুর করে প্লেনের চালকের ঘরে ঢুকে পড়লো। চালকতো অবাক। চালককে আরোও অবাক করে দিয়ে লোকটা চালকের হেডফোনটাকে ছিনিয়ে নিল। তারপর লোকটা বলল, “হারামজাদা! আমরা টাকা দেব আর তুমি এইখানে বইসা কানে হেডফোন লাগাইয়া গান শুনবা, এইটা হইবো না!”

এখন প্রত্যেকের কানে লাগানো থাকে আইপডের হেডফোন। বিশেষত ইউরোপ ও আমেরিকায় আইপড নেই এমন কোনো তরুণ পাওয়া দুরূহ। প্রতিটি আইপডে সর্বনিম্ন এক হাজারটি গান নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। ইউরোপে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে ১৪ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘণ্টারও বেশি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনে।

বাইরে ঘোরাফেরা করার সময় কিংবা বাস ভ্রমনের সময় হেডফোন দিয়ে গান শোনার জুড়ি নেই। হেডফোন দিয়ে আইপড, এমপি থ্রি অথবা মোবাইলে গান শুনছে। হেডফোনে গান শুনতে শুনতে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজও করছে। এটা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়ে। আমাদের কান একটি নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দের ওপর অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। তাই যদি আপনার কাজের জায়গায় এমন হয় যে সেখানে সব সময় ভারী মেশিনপত্রের আওয়াজ শুনতে হয়, তাহলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কানে তুলা ব্যবহার করতে পারেন।* হেডফোন বা ইয়ার ফোনে উঁচু আওয়াজে বেশিক্ষণ গান শোনাও কানের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

শহরে নতুন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার আবির্ভাব!
7 বার পঠিত
Published by সুধা রেজা in সড়ক দুর্ঘটনা কি চলতেই থাকবে? on জুন 15th, 2013

অতি সম্প্রতি ঢাকা শহরসহ দেশের আরও নানা জায়গায় নতুন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার আবির্ভাব হয়েছে। যার সঙ্গে বাস চালক, ট্র্যাক চালক কিংবা কোন বড় যানবাহনের চালক জড়িত নয় এবং তাদের দায়িত্বহীনতায় এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে না! যার প্রতিকার প্রতিরোধ জনগণের নিজেদেরই উপর নির্ভর করছে!

কয়েক মাস আগে পর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল সায়দাবাদ এবং বাসাবোতে। মোটর সাইকেল চালকের পিছনের আসনে বসেছিলেন ৫০ বছর ঊর্ধ্ব বড় বোন। একটি সময় বুঝতে পারলেন পিছনে কেউ নেই! মোটর সাইকেল থামিয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলেন বোন রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছেন রাস্তায়! চলন্ত একটি গাড়ির নিচে তিনি পরে গিয়েছিলেন মোটর সাইকেল চালকের মোবাইল ফোনে কথা বলার অসতর্কতার জন্য।

সায়দাবাদ মা’কে নিয়ে মোটর সাইকেল দিয়ে দূরে কোথাও যাওয়ার সময় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। তিনি ছেলেকে ধরে রাখতে পারেননি শক্ত করে। মোটর সাইকেলের গতি ছিল এবং মা সেই গতিতে নিজেকে আসনে শক্ত রাখতে না পেরে পিছন দিক থেকে ছিটকে পরে দিয়ে প্রাণ হারান।

আজকাল চলতি পথে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গান শুনার প্রবনতা লক্ষণীয়! কিন্তু সেটি অসহনীয় কিংবা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে কেবলমাত্র “ হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনে পথ চলার জন্য “ ! সেই হেড ফোন লাগিয়ে বাইরে চলাচলের কারনে মারা যাচ্ছেন অনেকেই। কারন তারা গানের বাদ্য ছাড়া আশেপাশে কি ঘটেছে কেউ কি ডাকছে শুনতেই পান না!

০১-০১-২০১৩ কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে রাজধানীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক কিশোর নিহত হয়েছে।

১৫ফেব্রুয়ারী ২০১৩ হেডফোন কানে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবক ভালোবাসা দিবসে বান্ধবীকে নিয়ে ‘হেডফোন’ কানে দিয়ে রেললাইনে হাঁটার সময় যশোরে ট্রেনে কাটা পড়ে আজাদ (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। চুড়ামনকাটির সানতলা রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

১০মার্চ ২০১৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশনের অদূরে মহাডাঙ্গা নামক স্থানে কানে হেড ফোন লাগিয়ে মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে রেল লাইন পার হবার সময় আমনুরা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী শাটল ট্রেনের ধাক্কায় ট্রেনের নিচে পড়ে মারা যায়।

২৬ মে ২০১৩ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় চলন্ত ট্রেনের বাতাসে খলিলের লুঙ্গি হাওয়ার দাপটে উড়ে যায়| এই ঘটনায় ব্যাপক লজ্জিত হওয়ায় মনের দুঃখে জ্বলন্ত ফ্যানের সাথে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে ফ্যান ভেঙ্গে ফ্যানের দুটি পাখায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে তার মৃত্যু হয়!

৪ জুন ২০১৩ কানে হেড ফোন লাগিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন এক যুবক। হয়তো প্রিয় গানের উচ্চসুরে অন্য কোনো দিকেই তার খেয়াল ছিল না। হঠাৎ পেছন থেকে ছুটে আসে ট্রেন। এ সময় সব পথচারী রেললাইন ছেড়ে দিলেও তিনি হাঁটতে থাকেন আপন মনে। বারবার চিৎকার করেও তাকে সতর্ক করতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারও একই পরিনতি হয়।

১৫.০১.২০১২ কানে হেডফোন লাগিয়ে মুঠোফোনে গান শুনছিল দুই বন্ধু। গান শুনতে শুনতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ধরে হাঁটছিল। পেছন থেকে কখন যে ট্রেন চলে এসেছে, টেরই পায়নি তারা। একপর্যায়ে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় একজনের।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে এবারে বি.কম পাস করেছিলেন মির্জা মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী (২৪)। আরও উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। কানে হেডফোন লাগিয়ে বেখেয়ালে রেললাইনের ওপর হাঁটার সময় দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় !

৫ নভেম্বর, ২০১২ কানে হেডফোন লাগানো। রেল লাইনের ওপর দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন লোকমান (৩০)। আপন মনে গান শুনছিলেন তিনি। গানের মাঝে হারিয়ে ফেলেছিলেন নিজেকে। পেছন থেকে ধেয়ে আসছে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুত গতির পারাবত এক্সপ্রেস। তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় লোকজন আর্তচিৎকার করলেও তিনি শুনতে পান নি !

এই প্রজন্মের কথা, যখনই মন খারাপ হয় তখনই কানে হেডফোন দিয়ে ভলিউম হাই করে দেই, মেটালিকা আমার সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।’

কৌতুক করে বলা যায় – বিমান চলছে। এক পেসেঞ্জার হঠাৎ করে হুরমুর করে প্লেনের চালকের ঘরে ঢুকে পড়লো। চালকতো অবাক। চালককে আরোও অবাক করে দিয়ে লোকটা চালকের হেডফোনটাকে ছিনিয়ে নিল। তারপর লোকটা বলল, “হারামজাদা! আমরা টাকা দেব আর তুমি এইখানে বইসা কানে হেডফোন লাগাইয়া গান শুনবা, এইটা হইবো না!”

এখন প্রত্যেকের কানে লাগানো থাকে আইপডের হেডফোন। বিশেষত ইউরোপ ও আমেরিকায় আইপড নেই এমন কোনো তরুণ পাওয়া দুরূহ। প্রতিটি আইপডে সর্বনিম্ন এক হাজারটি গান নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। ইউরোপে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে ১৪ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘণ্টারও বেশি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনে।

বাইরে ঘোরাফেরা করার সময় কিংবা বাস ভ্রমনের সময় হেডফোন দিয়ে গান শোনার জুড়ি নেই। হেডফোন দিয়ে আইপড, এমপি থ্রি অথবা মোবাইলে গান শুনছে। হেডফোনে গান শুনতে শুনতে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজও করছে। এটা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়ে। আমাদের কান একটি নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দের ওপর অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। তাই যদি আপনার কাজের জায়গায় এমন হয় যে সেখানে সব সময় ভারী মেশিনপত্রের আওয়াজ শুনতে হয়, তাহলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কানে তুলা ব্যবহার করতে পারেন।* হেডফোন বা ইয়ার ফোনে উঁচু আওয়াজে বেশিক্ষণ গান শোনাও কানের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
শহরে নতুন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার আবির্ভাব!
7 বার পঠিত
Published by সুধা রেজা in সড়ক দুর্ঘটনা কি চলতেই থাকবে? on জুন 15th, 2013

অতি সম্প্রতি ঢাকা শহরসহ দেশের আরও নানা জায়গায় নতুন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার আবির্ভাব হয়েছে। যার সঙ্গে বাস চালক, ট্র্যাক চালক কিংবা কোন বড় যানবাহনের চালক জড়িত নয় এবং তাদের দায়িত্বহীনতায় এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে না! যার প্রতিকার প্রতিরোধ জনগণের নিজেদেরই উপর নির্ভর করছে!

কয়েক মাস আগে পর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল সায়দাবাদ এবং বাসাবোতে। মোটর সাইকেল চালকের পিছনের আসনে বসেছিলেন ৫০ বছর ঊর্ধ্ব বড় বোন। একটি সময় বুঝতে পারলেন পিছনে কেউ নেই! মোটর সাইকেল থামিয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলেন বোন রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছেন রাস্তায়! চলন্ত একটি গাড়ির নিচে তিনি পরে গিয়েছিলেন মোটর সাইকেল চালকের মোবাইল ফোনে কথা বলার অসতর্কতার জন্য।

সায়দাবাদ মা’কে নিয়ে মোটর সাইকেল দিয়ে দূরে কোথাও যাওয়ার সময় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। তিনি ছেলেকে ধরে রাখতে পারেননি শক্ত করে। মোটর সাইকেলের গতি ছিল এবং মা সেই গতিতে নিজেকে আসনে শক্ত রাখতে না পেরে পিছন দিক থেকে ছিটকে পরে দিয়ে প্রাণ হারান।

আজকাল চলতি পথে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গান শুনার প্রবনতা লক্ষণীয়! কিন্তু সেটি অসহনীয় কিংবা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে কেবলমাত্র “ হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনে পথ চলার জন্য “ ! সেই হেড ফোন লাগিয়ে বাইরে চলাচলের কারনে মারা যাচ্ছেন অনেকেই। কারন তারা গানের বাদ্য ছাড়া আশেপাশে কি ঘটেছে কেউ কি ডাকছে শুনতেই পান না!

০১-০১-২০১৩ কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে রাজধানীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক কিশোর নিহত হয়েছে।

১৫ফেব্রুয়ারী ২০১৩ হেডফোন কানে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবক ভালোবাসা দিবসে বান্ধবীকে নিয়ে ‘হেডফোন’ কানে দিয়ে রেললাইনে হাঁটার সময় যশোরে ট্রেনে কাটা পড়ে আজাদ (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। চুড়ামনকাটির সানতলা রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

১০মার্চ ২০১৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশনের অদূরে মহাডাঙ্গা নামক স্থানে কানে হেড ফোন লাগিয়ে মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে রেল লাইন পার হবার সময় আমনুরা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী শাটল ট্রেনের ধাক্কায় ট্রেনের নিচে পড়ে মারা যায়।

২৬ মে ২০১৩ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় চলন্ত ট্রেনের বাতাসে খলিলের লুঙ্গি হাওয়ার দাপটে উড়ে যায়| এই ঘটনায় ব্যাপক লজ্জিত হওয়ায় মনের দুঃখে জ্বলন্ত ফ্যানের সাথে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে ফ্যান ভেঙ্গে ফ্যানের দুটি পাখায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে তার মৃত্যু হয়!

৪ জুন ২০১৩ কানে হেড ফোন লাগিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন এক যুবক। হয়তো প্রিয় গানের উচ্চসুরে অন্য কোনো দিকেই তার খেয়াল ছিল না। হঠাৎ পেছন থেকে ছুটে আসে ট্রেন। এ সময় সব পথচারী রেললাইন ছেড়ে দিলেও তিনি হাঁটতে থাকেন আপন মনে। বারবার চিৎকার করেও তাকে সতর্ক করতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারও একই পরিনতি হয়।

১৫.০১.২০১২ কানে হেডফোন লাগিয়ে মুঠোফোনে গান শুনছিল দুই বন্ধু। গান শুনতে শুনতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ধরে হাঁটছিল। পেছন থেকে কখন যে ট্রেন চলে এসেছে, টেরই পায়নি তারা। একপর্যায়ে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় একজনের।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে এবারে বি.কম পাস করেছিলেন মির্জা মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী (২৪)। আরও উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। কানে হেডফোন লাগিয়ে বেখেয়ালে রেললাইনের ওপর হাঁটার সময় দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় !

৫ নভেম্বর, ২০১২ কানে হেডফোন লাগানো। রেল লাইনের ওপর দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন লোকমান (৩০)। আপন মনে গান শুনছিলেন তিনি। গানের মাঝে হারিয়ে ফেলেছিলেন নিজেকে। পেছন থেকে ধেয়ে আসছে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুত গতির পারাবত এক্সপ্রেস। তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় লোকজন আর্তচিৎকার করলেও তিনি শুনতে পান নি !

এই প্রজন্মের কথা, যখনই মন খারাপ হয় তখনই কানে হেডফোন দিয়ে ভলিউম হাই করে দেই, মেটালিকা আমার সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।’

কৌতুক করে বলা যায় – বিমান চলছে। এক পেসেঞ্জার হঠাৎ করে হুরমুর করে প্লেনের চালকের ঘরে ঢুকে পড়লো। চালকতো অবাক। চালককে আরোও অবাক করে দিয়ে লোকটা চালকের হেডফোনটাকে ছিনিয়ে নিল। তারপর লোকটা বলল, “হারামজাদা! আমরা টাকা দেব আর তুমি এইখানে বইসা কানে হেডফোন লাগাইয়া গান শুনবা, এইটা হইবো না!”

এখন প্রত্যেকের কানে লাগানো থাকে আইপডের হেডফোন। বিশেষত ইউরোপ ও আমেরিকায় আইপড নেই এমন কোনো তরুণ পাওয়া দুরূহ। প্রতিটি আইপডে সর্বনিম্ন এক হাজারটি গান নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। ইউরোপে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে ১৪ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘণ্টারও বেশি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনে।

বাইরে ঘোরাফেরা করার সময় কিংবা বাস ভ্রমনের সময় হেডফোন দিয়ে গান শোনার জুড়ি নেই। হেডফোন দিয়ে আইপড, এমপি থ্রি অথবা মোবাইলে গান শুনছে। হেডফোনে গান শুনতে শুনতে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজও করছে। এটা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়ে। আমাদের কান একটি নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দের ওপর অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। তাই যদি আপনার কাজের জায়গায় এমন হয় যে সেখানে সব সময় ভারী মেশিনপত্রের আওয়াজ শুনতে হয়, তাহলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কানে তুলা ব্যবহার করতে পারেন।* হেডফোন বা ইয়ার ফোনে উঁচু আওয়াজে বেশিক্ষণ গান শোনাও কানের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন