বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

চলতি পথে হঠাৎ থামিলাম! (বিড়ম্বনা-৬)

গায়ে হলুদ (!) বাংলার বিয়ের অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় একটি অংশ ! যেই অনুষ্ঠানটি দিয়ে বিয়েবাড়ির প্রথম আনন্দ বেজে ওঠে। সেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি যখন অপরের ফুর্তি, শান্তি কেড়ে নেয় তখন? আমরা আমোদপ্রিয় জাতি। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের অহংকার, অলঙ্কার। কিন্তু কে যেন এসে কালিমা মেখে দিয়েছে আমাদের ঐতিহ্যে। নইলে কেন এতো ভোগান্তি, অশান্তি চারিদিকে চারপাশে!
প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার কর্মদিবসের শেষ দিন। সেই দিনটিকেই বিয়ে বাড়ির লোকজন গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত দিন এবং রাতের বেলাটি হয় মহেন্দ্রক্ষণ ! গত কয়েক বছর যাবত আবহমান গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের ধরণ বদলে অসভ্যতায় পরিনত হয়েছে এটি বলতে দ্বিমত পোষণ করার কোন যুক্তি নেই।
গত বৃহস্পতিবারের কথা, দূর থেকে ভেসে আসছে নানা রকম গান বাজনার শব্দ! ধুম ধারাক্কা হিন্দি বাংলা, উর্দু, ইংরেজি , কোরিয়ান গেংনাম স্টাইলসহ নানা উচ্চমূর্ছনার গান! সন্ধ্যা থেকে শুরু হল রাত ১২  টা বেজে, ১টা বেজে গেলো ও আল্লাহ! এখন তো রাত দুইটা বাজে কিন্তু গানের শব্দে দরজা জানালা বন্ধ করেও চোখের দুইপাতা এক করতে পারছিনা ! সাই এর GENTLEMAN  বাজছে ! কখন শেষ হবে এই আনন্দ! কখন আমার বাসায় থাকা অসুস্থ মা ঘুমাতে পারবেন? কখন আমার ছোট ছেলেটি চিৎকার করে জেগে উঠবে! কখন-ই বা আমি একটু হাফ ছেড়ে বিছানায় গা ফেলব! পাশের বাসার গানের শব্দ, ছেলে মেয়দের চিৎকার এতো উচ্চ যে আমি মূর্ছা যাই যাই করছি। বাধ্য হয়ে ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দিলাম গায়ে হলুদের যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারছি না। অপরের সুখ কিভাবে নিজের সুখ কেড়ে নেয় এটা হারে হারে টের পাচ্ছি !

এরা কারা? এরা কি কালো টাকার মালিক? কালো মানিক সাহেব? যারা আমাদের রাতগুলুকে কালো করে দিয়ে আগামীকাল সকালে কালো গাড়ি করে বিয়ে করতে যাবেন! আমাদের সকলে জীবনে কাল নামিয়ে কোন মহাকালের আনন্দে ওরা এভাবে মেতে উঠে?
DJ পার্টি নামক একটি শব্দ খুব জনপ্রিয়! আহ একটু হার্ড ড্রিঙ্কস আর ধুঁয়া টানা ছেলে মেয়ে এক হয়ে সেই মহা আনন্দে মিশে একাকার হয়ে যাওয়ার দৃশ্য নিজেই দেখেছি!
” হলদি বাট মেন্দি বাট, বাট সাজের কনে “ ! এই গানটি না শুনতে শুনতে ভুলেই গেলাম গানের কথাগুলু! কি না সুন্দর ছিল সেই গান এবং অনুষ্ঠান। আমরা যেন ইচ্ছা করেই ঝেড়ে তেড়ে বিদায় করে দিচ্ছি বাঙালির মধুরতম সংস্কৃতিকে। আর বিপরীতে আমদানী করছি বিজাতীয় নোংরা সংস্কৃতিকে।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান আর গায়ে হলুদের মানে বদলে ফেলেছে এরা! হাঁসি পায় গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝে কাঁচা হলুদ বাটা যখন ছোট একটি পাত্রে দেখতে পাই। কেউ কারো গায়ে হলুদ মাখে না! কেউ হলুদ শাড়ি পড়ে না। হলুদের গান কেউ গায় না! হলুদের জন্য খাওয়া দাওয়া চার্টটাও যখন দেখি একটু বেশি আধুনিক! কেউ আগের মতো বাংলার নাচ নাচে না। সবাই ইয়া ধুম ইয়া ঘুম নিয়ে লাফায়! এ যেন এক উন্মাতাল দৃশ্য! কোনভাবেই গায়ে হলুদ নয়!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন