বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

শহুরে ব্যাঙের ছাতা

সত্যিকারের ব্যাঙের ছাতা যেখানে সেখানে গজানো এখন আর দেখা যায় না বললেই চলে। গ্রামে গিয়ে খুঁজে পাইনা একটিও! কিন্তু শহরে এসে পাই ব্যাঙের ছাতার মত করে গজিয়ে ওঠা কিছু প্রতিষ্ঠান। প্রতারনা কে কিভাবে করছে কারা করছে?
১. স্কুল
২. কলেজ
৩. বিশ্ববিদ্যালয়
৪. মেডিকেল কলেজ
৫. ব্যাংক
৬. হাসপাতাল
৭. ডায়াগনস্টিক সেন্টার
৮. মার্কেট
৯. আর অনেক কিছুই আছে সব উল্লেখ করতে গেলে তো উপন্যাস লিখা হয়ে যাবে। যেই হারে গার্মেন্টস হচ্ছে। যদিও এই সেক্টরটি বর্তমানে হুমকির মুখে।
স্কুল
কোন এলাকা বাদ দেই? রাস্তা অলি গলি বাদ নেই খুঁজলে স্কুল, প্রি স্কুল পাওয়া জাবেনা। এদের মান, পরিবেশ নিয়ে আছে অনেক ঘাপলা! এরা শিক্ষা দানের নামে অর্থ উপার্জন করছে। এমন স্কুলের সংখ্যাই বেশি। কেউ নিচ্ছে নিজেদের নামের প্রভাব খাটিয়ে ভর্তি করতে বিরাট অঙ্কের টাকা। আবার কেউ বা বাইরে দিয়ে ফিটফাট দেখিয়া নিচ্ছে বেতন ও আনুসাঙ্গিক খরচ বাবত টাকা। ২০১৩ সালের আমি আমার সন্তানকে এমনি একটি চকচকে ঝকেঝকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছি ক্লাস টু তে। ভর্তি পরীক্ষা তাৎক্ষনিক হল। ফলাফল তাৎক্ষনিক। ভর্তি বাবদ নিল ৩০,০০০/- টাকা। মাসিক বেতন ১৬০০/- টাকা এবং স্কুলের বাস বাবদ ২২০০/- টাকা। আমি সব জেনে শুনেও নিলাম। সবাই বলল খুব ভাল খুব ভাল। তাই টাকার খরচের দিকে তাকালাম না। পরবর্তী বছরে ভর্তি পরীক্ষায় দৌড়াতে হবে না ভেবে আমাদের পরিবারের সকলেও মহা খুশী! কিছুদিন জেতে না যেতেই খেয়াল করলাম একটি লিফলেট দেয়া হয়েছে ব্যাগ এ। বাসায় শিক্ষক লাগবে! নাম ফোন নাম্বার সব আছে। তখনও কিছু বুঝিনি।
১/২/৩ মাস গড়িয়ে গেল কোন হোম ওয়ার্ক নাই, ক্লাস কি পড়ায় বুঝতে পারলাম না। যাক মার্চ মাসের শেষ একটা পরীক্ষা হল। কি পরীক্ষা জানি না। অতি সম্প্রতি আমার ছেলে স্কুল থেকে শিখে এসেছে ” CATERPILLAR”  মানে “ ছেঙ্গা পোকা “ … আমি আমার পুরু পরিবার হতভম্ব ! ” CATERPILLAR”  মানে  তো  ” শুঁয়োপোকা “  । তবে কি শিখাল? কারা শিক্ষক? কি পড়ায় ? WEDNESDAY .. এর উচ্চারণ কি  WED NES DAY   নাকি অয়েস্নডে! এটা শুনেও হতভম্ব! আমাকে সবাই যখন জিজ্ঞাসা করে ছেলে কোন স্কুলে পড়ে? নাম শুনলে মুগ্ধ হয়ে যায়। এতো ভাল স্কুল? উত্তরে বলি ভাই এতো বেশি ভালো যে পরের বছর আমি ঐ স্কুলে ছেলেকে পড়াব না। নাম প্রকাশ করলাম না স্কুলটি আর্থিক দুর্নাম হবে সরাসরি তাই।
কলেজ
গুনগত মান, পরিবেশ, স্থান, কিছুই পুরণ না করে আবাসিক ভবনেও অসংখ্য কলেজ সবার নজর এরিয়ে যাবার কথা নয়! আমার বান্ধবী এমন একটি গোলক ধাঁধায় পরে নিজের বারি ছেড়ে ভাড়া করা বাড়িতে গিয়ে উঠছিল ভালো কলেজ মেয়েকে পরাবে বলে। চটকদার বিজ্ঞাপন আমাদের দৃষ্টি ঝলসে দিচ্ছে প্রতিনয়ত। আমরা হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য হয়ে ভুল করছি নাকি ঠিক করছি সেই দিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোন এলেকায় নেই? সর্বত্র আছে।  UGC  অনুমোদন কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে? সনদ পত্রের মূল্যায়ন কি সঠিক ভাবে হবে? কিন্তু হচ্ছে পাশ করার পরে!  বিশেষ করে যারা  ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পরছেন, পাশ করছেন। তারা কি পাশ করার পর সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়াদের সমমানে কাজ করতে পারছে? না পারছেনা? বেশীর ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলু এই প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করছে। শিক্ষক, শিক্ষা দান নিয়েও যথেষ্ট ঘাটতি।
লক্ষ টাকা খরচ করে আমার এক ভাই এখন হায় হায় করছে। কি করলাম এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা করে? আমি তো MIEB মেম্বারশিপ পাবো না কখনো। এতো কষ্ট করে পড়াশুনা করে কি লাভ হল আমার? একটা সনদ পেলাম, কষ্ট করলাম কিন্তু কোন মূল্য নেই!
মেডিকেল কলেজ
যদিও বেশ ক বছর যাবত সকল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা একসাথে হয়। অপেক্ষমান তালিকা থেকে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে তো টাকার খেলা। সহজেই সবাই পাশ করে যায়। যেসব ডাক্তারদের মান নিয়ে সংশয় দেখেছি! আমার চেনাজানা অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল থেকে পাশ করা ডাক্তার আছে যারা শুধু নামের আগে ডা. কথাটি লাগানোর জন্য পরাশুনা করেছে টাকার জোরে। তবে পাশ করার পরে ঠিকই দিব্যি সেবা দিয়ে যাচ্ছে আনাড়ি জ্ঞান দিয়ে।
ব্যাংক
কিছুদিন আগে বেশ কয়েকটি ব্যাংক অনুমোদন পেল। ব্যাংকও যে একটি ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা ও সবার জানা। গত সপ্তাহে কোন একটি দৈনিক পত্রিকায় দেখলাম ১০/১১ টি ব্যাংককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক! কারণ তারা অতিরিক্ত মুনাফা দিয়া টাকা জমা নিচ্ছে এবং গ্রাহক বাড়াচ্ছে। আর ক্রেডিট নামক ব্যবসা তো পুরুদস্তর কালোবাজারি। ব্যাংকগুলু থেকে যে বা যারা ১০/২০ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছেন তারা জানেন কিভাবে সুদের হার এবং এই সেই বিল ধরিয়ে দেয় প্রতিদিন!
হাসপাতাল
এটা তো দারুন খবর! ঢাকা শহরের একটি খুব নামি দামি হাস্পাতালে আমার বড় ভাই গেলেন আলট্রাসনগ্রাম করতে। করলেনও। রিপোর্ট পেয়ে আমরা পুরো পরিবার হতবাক! কারন বহু বছর আগেই ভাবীর ডান অভারি কেটে ফেলা হয়েছে! আর রিপোর্ট দেখা যাচ্ছে ডান অভারি ভাল আছে?
একটি হাসপাতালে একটি মৃত বাচ্চাকে ফ্রিজে রেখে দীর্ঘদিন তারপর বলা হয়েছে সে মারা গেছে! তার আগে বলা হয়েছিল  ICUতে আছে বাচ্চাটি ! কিন্তু পরিছন্নতার জন্য আত্মীয় সজনকে কাছে যেতে দেয়া হচ্ছেনা!
কিছু কিছু হাসপাতাল চালু হয়েছে  :MASTER HEALTH CHECK UP ” নামক সেবা। যেখানে প্যাকেজ মূল্য দেয়া আছে। কিন্তু হিসাব করে দেখা গেছে
০১. আলাদা করে উক্ত টেস্টগুলো করালে এতো টাকা আসেনা
০২. অনেকগুলো টেস্ট আছে যেগুলো না করালে কিছু আসে যায় না !
বাচ্চা প্রসবে চালু আছে প্যাকেজ। অবাঞ্চিত অঙ্কের টাকা। কেন কি দরকার! কেউ কারো জানা নেই। আমাদের অনেকেই আছেন ভাব দেখাতে ঐ সব হাসপাতালে গিয়ে থাকেন।
নেই অভিজ্ঞ ডাক্তার। ডাক্তারদের বাধ্য করা হয় অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করাতে দিতে রোগীর লোককে। বাধ্য করা হয় লিস্টটেড কোম্পানির ঔষধ লিখতে। একজন রোগী ভর্তি হলে তাকে সহজেই ছেড়ে দিবে এমনটি আশা করা ভুল। আসার সময় ধরিয়ে দেয়া হয় লম্বা বিল !
ICUতে মৃত রোগী রেখে দীর্ঘদিন বলেছে বেঁচে আছে! তারপর একদিন মৃত ঘোষণা করলো! বিরাট অঙ্কের টাকা বিল ধরায়ে দেয়া হল গরিব আত্মীয় সজনের কাছে। টাকা না দিলে লাশ দিবে না। হাসপাতালের নামে উল্লেখ করলাম না। দৈনিক পত্রিকা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার 
যেখানে সেখানে পাবেন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যাদের নেই দক্ষ কর্মী, নেই প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা, নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি । শুধু একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কিছু অসৎ ডাক্তারের সহজগিতায় এরা মানুষকে ঠকানোর ব্যবসা করে যাচ্ছে দিনের পর দিন!
একটি গল্প আছে ” আপনি যদি মিনারেল ওয়াটার নিয়া দিয়া  PREGNANCY TEST  করতে দেন তবে দেখবেন রিপোর্ট আসবে পজিটিভ! আপনি মা/বাবা হতে চলেছেন ! ” হা হা হা ! 
এটি একেবারে কাল্পনিক গল্প হলেও এর থেকে ভাল কিছু করে না যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো !
  ” সাবধান হুঁশিয়ার
*** ভাল ডাক্তার খুঁজবেন? কিভাবে পাবেন? সব চেয়ে ভালো পথ হল চেনাজানা এমন কোন আত্মীয় ডাক্তারকে প্রশ্ন করুন একমাত্র তিনিই আপনাকে বলে দিতে পারবে কে আসল ডাক্তার কে নকল ডাক্তার। কে ভালো আর কে ভুয়া ডাক্তার! ”
একগাদা ডিগ্রি লিখে সাইন বোর্ড ভরে ফেলছে তার মানেই সে ভালো ডাক্তার নয়। কারন হল -

০১. আদৌই কি সে উক্ত ডিগ্রিগুলোর মালিক? তিনি অর্জন করেছেন নাকি টাকা দিয়ে কিনেছেন?
০২. যেই পদমর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে আসলেই তিনি সেই পদে আছেন কি না?
০৩. ডাক্তারের সনদ ঠিক আছে তো?
০৪।  উনি ডাক্তার তো ?
মার্কেট
কোন বাছ বিচার নেই। আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে বাণিজ্য কেন্দ্র। কোন এলেকায় নেই উচু উচু সুপার মার্কেট/ শপিং মল। এগুলুর দিকে নজর পরবে কাদের? কার না পড়ে! চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বড় বড় মার্কেট তৈরি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় সব নকল পণ্যে ভরপুর।
আমাদের রাজধানীতে বলতে পারব না কোনটি আবাসিক এলাকা! কোন বাণিজ্যিক এলাকা!  কালোবাজারি, অসৎ লোকে ভরপুর ঢাকা। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, কিডন্যাপের শহর ঢাকা। গার্মেন্টসের শহর ঢাকা। সকল বাণিজ্যের কর্মসংস্থানের শহর ঢাকা ।
ঢাকা ভালো স্কুল আছে, কলেজ আছে, বিশ্ববিদ্যালয় আছে, বিনোদনের জায়গা আছে। আমি ঢাকা থাকি এটা আমার অহঙ্কার ! আমি ঢাকাবাসি ! এমনটি ভাবনা যারা ঢাকা বাস করে!
গান আছে  ” ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে ” হায়রে লাল লাল নীল নীল বাতি দেইখা নয়ন জুরাইছে “……।
……।। “ ভিতর বাহির সবই খোলা তবু না রেখেছে ঢাকা ……।

সকলেই ঢাকা অভিমুখী। ঢাকা গেলে কাজ পাওয়া যাবে। জীবিকা নির্বাহ হবে। ঢাকায় সব কিছু পাওয়া যায়! সস্তাও অনেক।
সর্বোপরি
রাজধানী ঢাকা বলতে:
মসজিদেরশহর ঢাকা !
যানজটের নগরী ঢাকা !
জনবসতিপূর্ণ ঢাকা !
সংক্ষেপে সবকিছু তুলে ধরার একটি ছোট প্রয়াস মাত্র।


১০-০৪-২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন