বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

আমাদের মাতৃভূমি

গুলশান-১, পোস্ট অফিসের সামনে বসে থাকা এক অন্ধ ভিক্ষুক মহিলাকে গতকাল সকাল ৮.৫০ এর দিকে একজন পথচারী ছেলে  যার বয়স ২৫-৩০ হতে পারে সে তার পরনে থাকা সুয়েটার তা খুলে দিয়ে গেল! এরকম নিরব মানবিক সাড়া আমাকে একটু চমকে দেয়। বাইরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা তারপর ছেলেটা হন হন করে চলে গেল। আমি তাকে পিছন দিক দিয়ে দেখতে পেলাম। কিন্তু পর মূহুর্তে দুঃখজনক ও অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। কোথা থেকে যেন একটা ১৫-২০ বছরের মেয়ে অন্ধ মহিলাটির কাছ থেকে সুয়েটারটি কেড়ে নিয়ে ছেলেটির পিছন ছুটল! ছেলেটি অই মেয়েটিকে বলল যে সে অন্ধ মহিলাটিকে ওটা দিয়ে দেয়েছেন। কিন্তু বিধি বাম। সেই কথা শুনে ১৫-২০ বছরের মেয়েটি সুয়েটারটি নিয়া দৌঁড়ে পালিয়ে গেল ! অন্ধ মহিলাটি কিছুই করতে পারল না। আমার কিছু করার ছিল কিনা আমি তখন বুঝতে পারি নাই। কেবল তাকিয়ে দেখলাম ! আজ সকালেও দেখলাম অন্ধ মহিলাটি ওই জায়গায়ই বসে আছে। আমি তার ছবি দুটি তুললাম এবং কিছু টাকা দিয়ে আসলাম। আমি খুব একটা ভিক্ষা দেই না। ভিক্ষাবৃত্তি আমার খুব অপছন্দ; বরং যারা কাজ করে খায় তাদের বাড়তি টাকা দেই তার প্রাপ্য থেকে।
যেই দেশে একটি মানুষের নিরাপদ আবাস নেই। মাথা গুজার ঠাই নেই। প্রচণ্ড শীতে মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। না খেয়ে দিন কাটায় হাজার হাজার মানুষ। সেই দৃশ্য কি সহ্য করার মত? ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছি খুব ভাল। অনেক উন্নতির পরিকল্পনা করছি। সড়কপথ উন্নয়ন করতে গিয়া ভেঙ্গে পড়ছে বহদ্দরহাট উড়াল পথের স্প্যান, কখনো আবার গার্মেন্টসে আগুন লেগে পুড়ে মারা যাচ্ছে নিরীহ দরিদ্র মানুষ। যাদের উপর নির্ভর করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। হোক কৃষক কিংবা গার্মেন্টস কর্মী। এরাই বেশি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে। আধুনিকতার উন্নতি এদের স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারেনা। দু বেলা দু মুঠো ভাত আর মাথা গুজার একটা ঠাই এই যুদ্ধে লিপ্ত মানুষগুলোর দিকে কেউ তাকানোর নেই। বড় বড় বক্তৃতা, আন্দোলন, অবরোধ, খুনাখুনি, সভা, সমাবেশ, আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণ , কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো করতে বিদেশ ভ্রমন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। তাঁরা অসুস্থ হলে ছুটে যায় মাউন্ট এলেজাবেথ হাস্পাতাল কিংবা ব্যাংকক !
আমাদের দেশে কি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল কিংবা ব্যাংককের মত উন্নত চিকিৎসা চালু করা যায়না? ক্ষুদ্র আয়ের মানুষগুলোও ছুঁটে বেড়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে। যে হারে প্রতি বছর দেশ থেকে মেধা পাচার হচ্ছে এটা যে কত ক্ষতি হচ্ছে কেউ কি জানে খোঁজ রাখে ? যেই মেধা থেকে রেমিটেন্সও আসেনা! কারন তারা ওখানে স্থায়ী হয়ে যায়।
আমাদের কত বড় সমদ্রু সৈকত কক্সবাজার,পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম বীচ। সেটা ফেলে আমরা দেখতে যাই থাইল্যান্ড পাতায়া বীচ দেখতে। যেটা একটা সাধারন লেক মাত্র! থাইল্যান্ড কিংবা মালায়সিয়ার মত দেশ প্রতি বছর পর্যটন খাত থেকে যে পরিমান অর্থ উপার্জন করে, আমরা সেটার ধারে কাছেও না। কেন এমন হচ্ছে? আমাদেরও আছে অনেক সম্পদ আছে যেগুলো কাজে লাগালে আমরা দরিদ্র দেশ এই কথাটি চিরতরে মুছে যাবে ।
ফারজানা নাজনীন
২৭-১২-২০১২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন