বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

গ্রামগুলো আর আগের মত নাই !!!!!!!

আবাদি জমিগুলো ছেঁয়ে গেছে সবুজ ফসলে। বর্ষা শুকায়ে যাবে আর সবুজ ধান গাছগুলো পেকে আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে মাটিতে নুয়ে পড়বে । এই স্বাভাবিক দৃশ্যটা যে কতদিন হয়ে গেল দেখিনা !!!…

জমিতে চাষি চাষ করেনা লাঙ্গল দিয়া !!! পোকা আর আগাছা নিধন করে বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে। মাটির উর্বরতা হারাচ্ছে দিন দিন।

বর্ষার পানি কমে যাবে আর মাছ ধরার হিড়িক পড়বে এটাও ছিল একটা নিত্য নৈমিত্তিক দৃশ্য।
ঝাঁকে ঝাঁকে পুটি, কই, বোয়াল, শোল, খলসে, ভেটকি ইত্যাদি মাছে ভরে যেত ! সবই আজ স্মৃতি ! কারন আজ আর সেই মাছের ঝাঁক নেই! হারিয়ে গেছে। পুকুরে নেই জিয়ল মাছ । এর পরিবর্তে চাষ করা হচ্ছে হাইব্রিড পাঙ্গাস,তেলাপিয়া, সিলভার কাপ, গ্লাসকাপ। দেশীয় মাছ রক্ষায় নেই কোন পদক্ষেপ নাই। মৎস মন্ত্রণালয়ের কাজ দেখি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে আর বছরে একবার মৎসপক্ষ পালন করতে ।

রাস্তার পাশে নাই সারি সারি গাছ । গড়ে উঠেছে সারি সারি বাড়ি । আবাদি জমি গুলো ও ঢেকে যাচ্ছে নতুন নতুন বাড়িতে । সবাই ব্যস্ত নগর পরিকল্পনা নিয়ে! কিন্তু যেভাবে দ্রুত আবাদি জমি কমে যাচ্ছে একের পর বাড়ি তুলে সেদিকে কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ।

গ্রামের বাতাসও ছেঁয়ে গেছে দুষিত কালো ধোঁয়ায় । কিভাবে বাতাস রক্ষা হবে?? কোথায় গেলে একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো আমরা? এই মহাবিবর্তন নিয়ে কি কেউ ভাবে?? আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ কি? তারা কোন পরিবেশ রক্ষা করে? কই আমি তো আমার গ্রামের বাতাশ, জমি রক্ষা করার সাহায্যে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখি নাই। আশা করছি আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটা গ্রামেরই এরকম বেহাল দশা !!!

পাল্কিতে চড়ে এখন আর বউ শশুর বাড়ি যায়না । কারন গ্রামের মানুষের গায়ে লেগেছে আমাদের যান্ত্রিক জীবনের ছোঁয়া ।

বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়নাই আজও । পারিবারিক কলহ বেড়েই চলেছে। আমার ছেলেবেলার সাথী সালমা ছিল! যাকে তার স্বামী ও জা মিলে মেরে ফেলেছে । পলি আরেক বান্ধবি যার সাথে দেখা হয়না ৬/৭ বছর। এমন আর অনেক গ্রামের বান্ধবী আছে যাদের নেই কোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট যেখান থেকে তাদের খুঁজে নিব। হয়ত কোন একদিন দেখা হলেও হতে পারে! মাঝে মাঝে এইসব কারন গুলোর মাঝে খুঁজে পাই গ্রামকে।

ছোঁয়া লেগেছে মোবাইল ফোনের , ডিশ এন্টেনার । পশ্চিমা সংস্কৃতির জোয়ার লেগেছে শহর গ্রাম সবখানে। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব দেশীয় ঐতিহ্য ।

যেই গ্রামে কাটিয়েছি জিবনের অর্ধেকটা সময়। আমার গ্রামের স্কুলের ভবনটি আজ আগের মত দাঁড়িয়ে আছে। যেই বিদ্যালয়টি থেকে আমি ও আমার বাল্য বন্ধুটি এক সাথে পড়াশুনা করেছি সেটি আজ কালের সাক্ষী আমাদের দুজনের কাছে। কারন আমার সেই বাল্য বন্ধুটি’ই আজ আমার জীবন সঙ্গী। তার সঙ্গেও কেটে যাচ্ছে আমার জীবনের দশটি বছর!!! শশুর বাড়ি, বাবার বাড়ি পাশাপাশি হওয়াতে আমাকে অনেক বেশি গ্রামে যেতে হয় এবং আমি যেতে ভালোবাসি। আমাদের গ্রামে এখন আর আমাদের পরিবারের কেউ থাকেনা। তবুও আমি যাই। হেঁটে চলে আসি। দূর থেকে সালাম করে আসি আমার দুই বাবা’র (নিজের বাবা, শশুর বাবা) কবর।

ফিরে যেতে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে। কিন্তু পারিনা যেতে কারন নিজেকে বুঁনে নিয়েছি এই নগর জীবনের সাথে। মাঝে মাঝে ভাবি হয়ত একদিন ফিরে যাব । আদৌ কি যাব ?? যেতে পারব?? জানিনা। সবই অজানা। তবুও ভেবে নিজেকে দেই পলাতক শান্তনা ।

আমি আমার গ্রামদেশকে খুব ভালবাসি। আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি । কারন আমার গ্রামের বাড়ি আছে, ছিল এবং ইনশাল্লাহ থাকবে। আমি গ্রামের মেয়ে এইটা বলতে আমার লজ্জা লাগেনা! উল্টো গর্বে বুক ভরে যায়! কারন আমি মাটির ছোঁয়া পেয়েছি ।

শহরের বসবাসকারি অনেকেরই গ্রামের বাড়ি নাই। না থাকাটা কোন অপরাধ না। কিন্তু অবাক হই, করুনাও হয়, তাদের যখন দেখি খুব দম্ভ দিয়া বলে…আমি কখন গ্রামে যাইনি । আমাদের গ্রামের বাড়ি নাই। যারা এই দম্ভ নিয়ে কথা বলেন তারা হয়ত জানেনই না যে তাদের কি নেই?? আমি বুঝি কিছুই নেই!

আসুন আমরা আমাদের দেশকে, গ্রামকে রক্ষা করি নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সোচ্চার হই………

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন