বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

কর্মজীবী পিতামাতার সন্তানকে নিয়ে আর কত দুর্ভোগ ?

আমি এই ব্যস্ত শহরের একজন কর্মজীবী মা । আমার স্বামী সরকারী চাকরিজীবী যার সুবাদে ওর কর্মস্থল ঢাকার বাইরে। বাসায় আমি আর আমাদের ছেলে, সাথে আছে একজন ভাল সাহায্যকারী মেয়ে লিমা (আমরা যাদেরকে কাজের মেয়ে বলে চিনি জানি, কিন্তু আমি বলতে চাইনা)… কিন্তু মেয়েটি লেখাপড়া জানেনা ।

ভোর বেলায় উঠে বাচ্চাকে রেডি করি নিজে রেডি হই তারপর বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে নিজে অফিস যাই । আমার ছেলেকে স্কুল থেকে আনে লিমা তারপর থেকে পুরোটা দিন কাটায় ঐ লিমা’র সাথেই। হুট করে একদিন লিমা চলে যাবে তারপর আমার কি হবে?? সব সময় তো লিমাদের পাওয়া যায়না । (লিমা খুব ভাল মেয়ে) কিন্তু বড় তাই ওর বাবা-মা ওকে বিয়ে দিবে এটাও স্বাভাবিক !! তারপর ও কি কিছু শিখতে পারছে লিমার কাছ থেকে ?

আমাদের দেশে প্রতিটা কর্মস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে ডে কেয়ার সেন্টার (crèche) থাকা দরকার। কারন শুধু বাচ্চার নিরাপত্তার কথা ভেবে কার কাছে থাকবে রাখব ভেবে প্রতিমাসেই চাকরি ছাড়ছে আমার একাধিক সহকর্মী মেয়ে। হাতে গনা যে কয়টা ডে কেয়ার সেন্টার আছে হয় এগুলো খুব নিন্মমানের অথবা সাধারনের ক্ষমতার বাইরে! সার্ভিস চার্জের টাকার অংকটা এত বেশি এ হয় যে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো এর সুবিধাটা ভোগ করতে পারে না।।

বাচ্চার পড়াশুনা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে আমিও ভাবছি চাকরিটা হয়ত ছেড়ে দিব। কিন্তু তারপর! কেউ জানে না আমিও জানি না কি হবে? …

মাতৃত্বকালিন ছুটি ৬ মাস করাটাই শুধু একজন মায়ের কর্মজীবন টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আসল ভুমিকা পালন করেনা বলে আমি করি। কারন সন্তান জন্মাবার পর থেকে প্রতিটি দিনই খুব গুরুত্বপূর্ণ । আর সেই ক্ষেত্রে মা’কেই ছাড়তে হয় চাকরি ।

একজন মা , একজন কর্মজীবী নারী হিসেবে আমার চাওয়াটাও যে খুব বেশি তা নয়। আমি কাজ করতে চাই। এটা রাষ্ট্রের কাছে আমার অধিকারও। আমি আমার সন্তানকে একটা সুন্দর জীবনের পথ দেখাতে চাই যেখানে মায়ের আদর থাকবে সাথে থাকবেনা আর্থিক টানাপোড়নের ভয়ংকর হিসেবের খেলা! আমরা কি আদৌ কোনদিন পাব ? বা পেতে পারি মা ও শিশুর এইটুকু মানবিক সুবিধা ?? যেখানে থাকবেনা দুঃচিন্তায় ভরা একটা জীবন। আমাদের সরকারগুলি কবে এইসব জরুরি মানবিক বিষয়গুলির দিকে নজর দিবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন