বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

নকলকে অবাধে আসল করার কৌশল

সরকারি/বেসরকারি যেকোনো কাজেই কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হয় একজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটড সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে! এটার কতটা প্রয়োজন আছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন
গ্রামে যে বা যারা বাস করে তাদের হাতের নাগালে কে বা কারা প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা এটা অনেকের-ই জানা নাই। তদ্রুপ ঢাকা শহরে আমাদের চারপাশে কয়জনকে আমরা চিনি যে যিনি প্রথম শ্রেণীর গেজেটড সরকারি চাকরিজীবী? অনেক জায়গাতেই দরকার হয় উক্ত ব্যক্তির স্বাক্ষর সিল। যেটা ছাড়া প্রমান মিলে না যে আসল কাগজের ফটো কপি কিনা! কিন্তু আদৌ কী কোন দরকার আছে এই ধরনের একটা হয়রানির মুখোমুখী করার? কারন এর থেকেও তো বেরিয়ে আসছে দুর্নীতি! কারন, যাদের কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হয় তাদের প্রত্যেকের কাছেই একজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার একটি করে নকল সিল তৈরি করা আছে। স্বাক্ষর নিজের মত করে দিয়ে নেয়! এটাই এখন প্রচলিত নিয়ম।
বেশীরভাগ মানুষ এমন করে যে উক্ত সিল ও যার অস্তিত্ব/পরিচয় দেয়া হয়েছে সেই নামের কেউ নেই! চারিত্রিক সনদ পত্র? এটার বেলায়ও চলে আরেক ধোঁকাবাজি!
সরকারী অফিসে গেলে বুঝা যায় দুর্নীতি কাকে বলে আর কত রকমে দুর্নীতি করা হয়! এদের মধ্যেই কেউ কেউ অন্যদের চারিত্রিক সনদ পত্র (প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার) দিতে ব্যস্ত । তার চরিত্রের সনদটা যে কে দিবে ?! এরাই আসলকে আর নকলকে আসল করে তোলার একটা চক্র! অনেক সময় প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা টাকার বিনিময়েও সত্যায়িত করেন। কারন তার ভাষ্য হল অযথা এত কষ্ট করব কেন আপনার জন্য? আবার কেউ কেউ নিজের চরিত্রের আসল রূপটা যে কত নোংরা সেটা প্রদর্শনে ব্যস্ত ঘুষ আদান প্রদান করে।
সেদিন গল্প শুনলাম একজন লোক যিনি তার এসএসসি পরীক্ষার সনদ নকল করেছেন বন্ধুর সনদের আদলে। কারন তার পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ ছিল। এবং তিনি উক্ত নকল সনদ দিয়ে সত্যায়িত করেই ” ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ ” করে ফেলেছেন বহু আগেই।
বহু বছর আগে আমার এক পরিচিত মেয়ে এইসএসসি পাশ না করেও নকল সনদ দিয়ে রীতিমত ইডেন কলেজেও ভর্তি হয়েছিল।
নকল জন্ম সনদ অহরহ মিলছে! নকল জাতীয় সনদ হচ্ছে! যেখানে গলা কাটা পাসপোর্ট এর গল্প আমাদের পুরানো গল্প।
নকল কি নেই ! নকল বন্ধের কৌশল এবং পথ প্রদর্শনের দিক নির্দেশনায় পরিবর্তন আনা দরকার।
অনেক দুই নম্বর প্রেস আছে যারা নকল সনদ, মার্ক সীট দিয়ে থাকে। তবে সেটার প্রয়োজন এখন আর নেই বললেই চলে। কারন এখন এই  প্রক্রিয়া আরও অনেক সহজ। একটি স্ক্যানার আর ফটোশপ নামক সফটওয়ারেই যথেষ্ট।
সরকারী অফিস এত ফাইল এক ইঞ্চিও চলে না টাকা ছাড়া। যারা এভাবে ফাইল নাড়াচাড়া করাচ্ছেন তারাও একসময় নিজের চরিত্র ভাল এমন একটা কাগজ দাখিল করে চাকরি নিয়েছিলেন (হয়ত বা ঘুষের বিনিময়ে)। তাদের মত লোকদের কাছে জিম্মি লক্ষ কোটি মানুষ! নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থিকে চারিত্রিক সনদ পত্র নির্বাচন কমিশন জমা দিতে লাগে না। আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের চারিত্রিক আসল রূপটা আমরা দেখতে পাই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে !
কাগজ সত্যায়িত করার অমুলক হয়রানী বন্ধ করা দরকার। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা দ্বারা সনদ ও অন্যান্য কাগজ পত্র সত্যায়িত করে প্রমাণ করতে হবে যে দাখিল করা কাগজগুলুর আসল কপি সঠিক। এটা শুধুই বিব্রতকর ও অপ্রয়োজনীয় একটি কাজ !
দুর্নীতি বন্ধ করতে গিয়ে যদি দুর্নীতি বেড়ে যায় বা বাড়ানো হয় অথবা দুর্নীতির কৌশল শিখানো হয় সেটা আরও অনেক ভয়ংকর। তবে কি এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারা যায় না যেটি সহজ এবং সরাসরি? চলমান পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় আমাদেরকে দিয়ে ভূয়া সত্যায়িত করাতে বাধ্য করা অবাঞ্ছনীয় এবং হয়রানী মাত্র! সরকার কবে এই কাজগুলোকে জরুরি মনে করবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন