বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

ঔষধের নাম এবং মান নিয়ে বিড়ম্বনা!

একটি গল্প দিয়ে শুরু করি -
সেদিন ছোট ভাইকে দোকানে পাঠালাম ‘নউমি’ ট্যাবলেট আনতে। সে গিয়ে দোকানে বলে ভাই ‘প্রমি ‘আছে ‘প্রমি’! ঔষধ দোকানদার বলল ভাইয়া আমি ট্যাবলেট এর নাম ভুল বলছেন। অথবা আপনি কোন মুদি দোকানে যান ওখানে পাবেন। কারন প্রমি নামে বাজারে একটি জুস আছে। ভাইয়ের ভুলের কারন আমাদের অভিজ্ঞতা ও বিড়ম্বনাগুলু আমার ভাইও জানে! তাই ভেবেছে ঔষধের নামে কোনো ভুল করেনি সে।
এবার আসি মুল কথায়। ছোটবেলা থেকে আমরা ঔষধের নামে জেনে এসেছি এর জেনেটিক নাম অনুসারে। যেমন PARACETAMOL এর সকল ঔষধ এর নাম এমন PARAPYROL PARACETAMOL ! পরবর্তীতে NAPA , ACE, ইত্যাদি বাজারে এসেছে। যেগুলু মেনে নেয়া যায় বোঝাও যায় ।
কয়েক বছর আগে থেকে ঔষধ বাজারে এমন কিছু ঔষধ এসেছে যার জেনেটিক নামের সাথে কোন মিল তো নেই ই উল্টো মানুষের নাম দিয়ে বাজারজাত করা হয়েছে। যেটা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না এমন নামের ঔষধ হতে পারে!
আর একটি গল্প বলি –
দৃশ্য -১
সেদিন আমার স্বামী আমাকে বলছে ! সুধা “ রুপা “ এনে দাও ! আমি খাবো। প্রথমে ভাবলাম মজা করছে। কারন আমার রুপা আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। ফাজলামো করে বললাম তাইলে তুমি রুপাকে চাও! ছিঃ ছি তুমি এত খারাপ ! পরে বলল দূর ছাই ! ট্যাবলেট “ রুপা “ দাও ! হাঁচি দিতে দিতে সর্দি ঝড়তে ঝড়তে আমার জীবন যায় আর তুমি মজা করতেছ। ভুলে গেছ নাকি “ রুপা “ নাম যে একটি ট্যাবলেট আছে আমার ব্যাগে!
দৃশ্য -২
চিৎকার করে বলছি কাজের সহযোগী মেয়েকে  আঁখি ভাবির জন্য  “রেবেকা “ নিয়ে আয় তো ! আঁকলি হেসে বলল ভাবি মজা করতেছেন? আমি কই থেকে রেবেকা আনব? বললাম ঔষধের ঝুড়িতে দেখো আছে!
দৃশ্য -৩
ভাবী “রেবেকা”  নাই “রেব”  আছে ! মজা করে এইবার আমি বললাম আঁকলি আস্তে বল ! পাশের বাড়ি থেকে কেউ যদি জানতে পারে আমি রেব খেয়ে ফেলছি তবে খবর আছেরে আমার !
দৃশ্য-৪
আমার স্বামী আমাকে রাতের বেলায় বলছে -  সুধা সিয়েস্তা ঘুমের আগে খাবো ! সিয়েস্তা খাবা মানে? তাও ঘুমের আগে?  তুমি আমাকে ইংলিশে এতো গাধা ভাবছ? সিয়েস্তা মানে আমি জানি না ভাবছ? সিয়েস্তা মানে দিবানিদ্রা!
এবার সেইসব ঔষধগুলু নাম এবং জেনেটিক নামে তুলে ধরছি। তবে ঔষধ কোম্পানির নাম উল্লেখ করছিনা। খুব প্রয়োজনীয় কিছু নয় এবং এটি কোন দুর্নীতি নয় যে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নাম প্রয়োজন আছে। কেবল জনমনে সাময়িক বিভ্রান্তি হচ্ছে বলে তুলে ধরছি। হয়তো এতদিনে অনেকেই জেনে গেছেন। কেউ কেউ নতুন জানছেন।
বর্তমান জেনেটিক নাম
CAPSULE PRODEP
Fluxetine
PARAPYROL
PARACETAMOL
APA
NAPA
Paracetamol
NIPA
Paracetamol 500mg/tablet
RESET
paracetamol tablet
রেব ২০
Rabeprazol Sodium INN 20 mg
রেবেকা ২০
Rabeprazol Sodium
Rabeprazol Sodium
রুপা
Rupatadine
ক্লোন
ক্লনাজিপাম
ক্লরন
ক্লনাজিপাম
সিয়েস্তা
ব্রমাজিপাম
Simple-3
Azithromycin
কিন্তু বাস্তবে এমন ঔষধও আছে বাজারে -
Clonium
clonazepam Bp
Omep -20
omeprazole BP
Napadol
Paracetamol
AZ -500
Azithromycin
এই বিড়ম্বনা কিংবা কৌতুক থেকে কি আমাদের বের হওয়া দরকার? নাকি এভাবেই সব ঔষধ  রেবেকা, রুপা, দীপা, নিপা হয়ে যাবে!  আবার নাম ভেদে বাজার মূল্যও হেরফের হয়। একই জেনেটিক নামের ট্যাবলেট কিংবা ক্যাপস্যুলের দাম কোম্পানি ভেদে আলাদা হয়ে থাকে। কিন্তু এটির দিকেও কারো নজর নেই! কিন্তু কেন এই তারতম্য? এই প্রশ্নটি আমি করেছিলাম একটি ঔষধ কোম্পানির কর্মকর্তাকে। উনার উত্তর অনুসারে – হ্যাঁ আমাদের কোম্পানির ঔষধ মূল্য কম। ফলে বিক্রি ও কম। কারন ক্রেতা রা ভাবেন মূল্য কম মানে ঔষধের গুনগত মান নিয়ে সংশয় আছে ! এটাও বললেন উনি ! আসলে একটি ট্যাবলেট তৈরি করতে জেই পরিমান খরচ হয় তার সাথে  মুনাফা যোগ করে অনেকে বেশি দাম হাঁকাচ্ছে ! কারন এরা অনেক নাম করা কোম্পানি ! তবে আমরা যে খারাপ করছি তা নয় !
প্রশ্ন করলাম আপনাদের কোন ঔষধ এখন মানুষের নামে আনেনি কেন ! উত্তরে – সঠিক উত্তর তা আমি দিতে পারছিনা ! সেটির উত্তর কেবল এম ডি স্যার জানেন ! তবে স্যার খুব সচেতন বাজারজাত করন নিয়ে !
এবার আমি আমার কথা বলি ! নিজের চাকরির সুত্র ধরে আমি নিজে দেশের অনেক নামকরা ঔষধ কোম্পানি তে যাওয়ার সুজুগ পেয়েছি ! অবাক হয়েছি তাদের ভিতরের পরিবেশ দেখে ! যদিও ফ্যাক্টরি নয় হেড অফিস এ গিয়েছি তাতে কি ! এদের অফিস যদি এত এলোমেলো নংরা হয় ! তবে কি উনারাও যে তথাকথিত পাউরুটি গুলুর মতো বলতে পারি যে উনারা ও ঔষধ বানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে !
সাফাই গাইছিনা ! গত দুই  সপ্তাহ যেই ঔষধ কোম্পানির হেড অফিস এ গিয়েছিলাম ! সেটির পরিবেশ দেখে আমি হতভম্ব ! খুব পরিস্কার পরিছন্ন !!
আমার স্বামী পেশায় একজন চিকিৎসক ! উনার ভাষ্য মতে ! দেশে কত গুলু ” ডিব্বা ” কোম্পানি আছে ! যারা আমার মাথাটা ছিরে খেয়ে ফেলে অদের ঔষধ লিখতে ! বাবার বয়সি একজন লোক প্রতিদিন আমার সামনে এসে বসে থাকে ! কিন্তু আমি উনাদের ঔষধ লিখি না ! কারন একজন মানুষ আমার কাছে এসেছে সেবা নিতে ! বিনিময়ে আমি মূল্য হিসেবে একটি ভাল অঙ্কের টাকা ফি হিসেবে নিচ্ছি ! তাই তার প্রতি আমার অবিচার করা ঠিক হবেনা ! মানুষ টি দ্রুত সেরে উঠুক এটি আমার লক্ষ্য ! অই সব ডিব্বা কোম্পানিরা ভুয়া ! বিদেশ থেকে কি সব ঔষধ এনে ভিটামিন কিংবা এতা ওটা বলে বিক্রি করে ! জেগুলুর মান নেই ই !
আবার দেশে অনেক   ফার্মাসিউটিকেলস   কোম্পানি আছে  যারা ডাক্তারদের উপহার দিয়ে কিংবা বড় রকমের প্রলোভন দিয়ে তাদের ঔষধ লিখাতে বাধ্য করে !
আবার  “ডিব্বা কোম্পানি”  আছে যারা প্রান নাশের হুমকি ও দেই ! এমন হুমকি স্বয়ং আমার স্বামী মুখোমুখি হয়েছে। পিওন  বলেছে ” তোর স্যারকে দেখে নিবো ” কেন আমাদের ঔষধ লিখেনা ! এই ঘটনাটি ঘটেছে যখন আমার স্বামী সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময় ! ওর ভাষ্য মতে ” একজন মানুষ কতোটা সমস্যায় থাকলে এতো লম্বা লাইন ধরে সরকারী হাসপাতালে আসে ! তাদের কে কেন ভিটামিন দিতে গিয়ে বিদেশী ডিব্বা লিখবো ! জেগুলুর মূল্য ৫০০/৬০০ টাকা ! যেখানে আমাদের দেশীয় ঔষধ গুলু র মূল্য অনেক কম এবং মান অনেক ভালো !
এর মানে কেউ মান বজায় রেখে করে , কেউ করেনা ! এই দিকে উপর মহলের  নজর জরুরী। আমাদের স্বাস্থ্য সেবা যারা ব্যবসা করছেন তাদের বলবো শুধু ব্যবসা না ভেবে মানব সেবাটাও মাথায় রাখুন!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন