বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

ভবনের লুকোচুরি গল্প!

” রানা প্লাজা ” ভাঙ্গার পর নরে চড়ে বসেছে অনেকেই! অনেকেই ঝাঁকি খাচ্ছেন মনে হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতি সব জায়গায় হচ্ছে। স্পেকট্রাম, তাজরিন ঘটনায় কেন জাগ্রত হলনা বিজিএমইএ? রাজউ ! এতদিন  কোথায় ছিল? ৭ তলা ভবন ৯ তলা নির্মাণ হল কারো খোঁজ ছিলনা ! হাজার হাজার নিরীহ খেঁটে খাওয়া মানুষের প্রাণ চলে গেলো!
এই প্রসঙ্গে আমার ৮ বছর বয়সী ছেলের একটি কথা বলতে হচ্ছে ” আম্মু রানা প্লাজার ” রানা পালায়ে গেছে? আর প্লাজাটি ভেঙ্গে পড়ছে?” তাই না আম্মু! এই কথাটি কিন্তু একেবারেই সত্য! যদিও বাচ্চাটি না বুঝেই বলেছে অথবা ওর বোধ থেকেই বলেছে। নিষ্ঠুর ভবন মালিক কোথায় নাই? কেউ জানে না!
বিজিএমইএ, রাজউক এখন সকল ভবনের নকশা খতিয়ে দেখছেন দেখেবেন! কিন্তু যে ভবনগুলো নির্মাণ হয়ে গেছে এর ভিতরের কি নির্মাণ সামগ্রী দেয়া হয়েছে সেটা নকশা দেখে বুঝার উপায় নেই! যে ভবনগুলো নির্মাণ হচ্ছে সেগুলুর দিকে প্রতিদিন না হোক হুটহাট মনিটর করতে হবে! দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে!  কারন যেকোনো সময় নির্মাণ সামগ্রী কম/ ফাঁকিঝুকি দিয়ে ভবন তৈরি করতে পারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ভবন মালিক!
রাজউক থেকে অনুমোদন নেয়া হয় আবাসিক ভবনের অনুমোদন। কিন্তু তৈরি করা হচ্ছে বাণিজ্যিক। এমন অনেক ভবন ঢাকা শহরে আছে। আবার আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে আবাসিক ভবন তৈরি করে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে রাজধানীর প্রভাবশালী এলাকা গুলুতে।
আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যাবহার করছেন অনেক স্থপতিরা। আর উনারা বসে বসে টিভিতে টক শো করেন! বাংলাদেশ স্থপতি সংসদের বই থেকে যোগার করলেই মিলবে তাদের অফিস এর ঠিকানা।  তাদের অফিস গড়ে তুলছেন আবাসিক ভবনে। ধানমণ্ডি, গুলশান, বনানী। উত্তরা, লালমাটিয়া এইসব এলাকাগুলোর বেশিরভাগ ভবনেই দেশের বেশির ভাগ স্থপতিদের অফিস। এই সব এলাকা গুলোতেই আবার গরে উঠেছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়!
বায়িং হাউজ তো আছেই! আছে নানা রকমের বুটিক দোকান, খাবার দোকান, ক্লিনিক, হাসপাতাল!
রাজউক থেকে অনুমোদন নেয়া হয় ৬ তলার, আর বানানো হয় ৯ তলা! এটা অতি প্রাচীন গল্প। ভবন নির্মাণে নির্মাণ সামগ্রী ফাঁকি দেয়াটা হল ঠিকাদারি ব্যবসার মুনাফা অর্জনের সব চেয়ে বড় পথ।
৮ তলা ভবনে অবশ্যই থাকতে হবে বিকল্প সিঁড়ি, থাকতে হবে লিফট। কিন্তু এই দুইটির কোনটি মিলবে না! বহু উঁচু ভবন অনেক দেখা যায় যেখানে লিফট নেই কিন্তু ৮ তলা / ১০ তলা।
আধুনিক এপার্টমেন্ট তৈরির ব্যবসা এখন খুব জমজমাট। কারন কি? নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য তো অনেক উচ্চ! তাহলে তারা কি করে রমরমা ব্যবসা করছে? কোন শুভঙ্করের ফাঁকি দিচ্ছে ক্রেতাদের? এটা যারা ভুক্তভুগি তারাই জানেন।
একটি দুর্বল ভবন নির্মাণে স্থপতি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ভবন মালিক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, রাজউক, পৌরসভা সকলেই সমান দায়ী। মাঝে ফেঁসে যায় যে বা যারা ঐ সকল ভবন ক্রয় করে থাকেন। ক্রেতা সাধারন যেহেতু টেকনিক্যাল কেউ নন তাই তারা শুভংকরের ফাঁকির অনেক দিক জানেন না বুঝেন না! পরে কিনে বিপদে পড়েন। অনেকে সর্বস্বও হারায়!
অনেক সময় অজ্ঞ মানুষ দ্বারা ভবনের নকশা করে একজন প্রকৌশলী দ্বারা অনুমোদন করা হয়! উক্ত প্রকৌশলী কিছু অঙ্কের বিনিময়ে নিজের দস্তক্ষত বিক্রি করে থাকেন। এমন অসৎদের কারনেও গড়ে উঠছে দুর্বল ভবন।
ভবন নির্মাণ আইন তো কেউই মানে না। রাজউকের আইন অনুযায়ী ভবনের পিলারগুলো তোলা হয় সত্যি কিন্তু ঝুলন্ত অবস্থায় ভবনের আকার বৃদ্ধি করা হয় জেই যায়গাটি এসে পরে রাজউক আইনের বহির্ভূত জায়গা।
রাজউক, পৌরসভা দুর্নীতিযুক্ত জনবলের কারনে অনেক সময় আইন বহির্ভূত ভবন পাশ হয়ে নির্মাণ হচ্ছে। দুর্নীতি দূর না হলে কোন তদন্ত কমিটি দিয়ে কাজ হবে না। একজন ইঞ্জিনিয়ারের হাতে নির্ভর করে অনেকগুলো মানুষের জীবন। তাই ভবন  নির্মাণের  সাথে জড়িত সকলকে সৎ হতে হবে, দায়িত্বশীল হতে হবে। তবেই এই ধরনের ভবন ধস দুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব।
 ”সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা”
“মানুষ মানুষের জন্য”
“সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্তকে আমরা পরের তরে”
“দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ”
আসুন দেশ গড়ি,  মানুষ হত্যা বন্ধ করি!
সুধা রেজা
২৮-০৪-২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন