বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

অর্থনৈতিক সমাধান কে দিবে?

শফিক সাহেব একজন  সরকারী চাকুরিজীবী। প্রথম শ্রেণীর বিসিএস কর্মকর্তা। যিনি ১০০% দুর্নীতি মুক্ত চাকরী করেন। চাকরির বয়স ৮ বছর শেষ হল। সবার চোখে সবার কাছে তিনি সন্মানের এবং লোভনীয় চাকরির অবস্থান। কিন্তু বেতন কতো পান! একদম সম্পূর্ণ অঙ্ক বলতে না পারলেও এটা জানি যে উনার বেতন হল ২৫ হাজার থেকে বেশি এবং ৩০ হাজার থেকে কম।
বিবাহিত ও  এক সন্তানের জনক।  স্ত্রী রুবিনা  ও কর্মজীবী। তিনি কাজ করেন বেসরকারি এবং দেশীয় ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিতে। তিনি ভাল বেতন পান। দুইজনের আয় দিয়ে সংসার ভালই চলছিল। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি সাথে সাথে বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়ানোর তোপে পরিবারটির অবস্থা বেশ নাজুক।
শফিক, রুবিনার মতো এমন অনেক পরিবার আজ অর্থনৈতিক টানাপোড়নে দিন কাটাচ্ছে। কখনো দাম্পত্য কলহ আবার কখনো ছাড়া ছাড়ি কিংবা শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে সৎ জীবন থেকে অসৎ জীবনে প্রবেশ করছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে একটি মাথা গুজার উন্নত মানের পায়রার খোপে আশ্রয় নেন।
দেশে যেমন বেড়েছে শিক্ষিত মানুষের হার তেমনি বেড়েছে শিক্ষিত বেকার এর হার ! কমে যাচ্ছে কর্ম সংস্থান। যদিও কর্মসংস্থান ব্যাংক নামে একটি ব্যাংক আছে। ওখানে গেলে দেখা যায় উনারা কে কি করছেন। এই ব্যাংকের কাজ নিয়ে আছে সংশয়। কেউ কি জানেন? অনেকেই এখন আর জানেও না এমন একটি ব্যাংকের কথা। কর্মসংস্থান কমছে আরও কমে যাবে। এটাই স্বাভাবিক।
আমার বেশ কিছু চেনা জানা মানুষ আছেন। যাদের কেউ কেউ দাপট নিয়া চাকরি করছেন। আবার কেউ কেউ ব্যবসা করছেন। এমন সকলের কাছেই আমি গিয়েছিলাম ২/৩ মাস আগে। ছোট বোনের জন্য একটি চাকরির আবদার করতে। তারা আমাকে কথাও দিয়েছিলান। কিন্তু বিধিবাম! তারপর দেশে শুরু হল যুদ্ধ! হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও জ্বালাও পোড়াও যুদ্ধ!
গেল সপ্তাহে ফোন দিলাম একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়িকে ফোন দিলাম। স্যার আমার বোনের…! উনি উত্তরে আমাকে যেই কথাগুলো বললেন এমন যে আমি কোন আবদার কি উত্তর না দিয়ে বললাম জি স্যার! “  দেখো সুধা গত কয় মাস যাবত দেশের এমন অবস্থা যে ব্যবসা তো পুরো আমার লাটে উঠেছে! দোকান পাট খুলতে পারতেছিনা। বিক্রি বন্ধ। চিন্তায় আছি কি করে কর্মচারীদের বেতন দিব। আর আমার যেমন অবস্থা আমার বন্ধুদেরও একই অবস্থা। এই অবস্থায় যদি আমি ওদের কাউকে বলি তোমার বোনের কথা তাহলে তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত হবেন। বলবে কথায় খরচ কমাব ভাবছি আর তুই আসছিস আমার খরচ বাড়াতে? “ আমি শুধু হ্যাঁ বললাম। না ঠিক আছে স্যার। আমার বোনের কথাটা মাথায় রাইখেন।
আমার বোন খুব উৎকণ্ঠায় আছে। আমি ওকে বুঝাই, এত ভাবিস কেন? তোর ভাইয়া, ভাবী আছে। আমি আছি তোর দুলাভাই আছে। তোর তো অর্থনৈতিক সমস্যা  নাই। কিন্তু এমন অনেক মানুষ অনেক পরিবার আছে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কয়েকটি পরিবারকে দেখালাম। কয়েকজন বেকার মানুষকে দেখালাম। বললাম দেখ তুই ওদের থেকে ভাল আছিস। তুই আমার দিকে তাকা। দেখ তো আমার চাকরী চলে গেলে কিংবা না থাকলে কতো কষ্টে পড়ব! কতো ঝামেলা হবে! তুই তো চাকরি চাস পড়াশুনা করে ঘরে বসে আছস বেকার জীবন ভাল লাগেনা, সময় কাটে না বলে।
চাকরি পাওয়ার জন্য দরকার অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা কোথায় পাবে? একটি চাকরি তো পায় না যারা।
আবার কেউ কেউ চাকরি দিয়ে যেই বেতন দিচ্ছে আর শুষে নিচ্ছে পুরো মানুষটাকে। নেই কোন বিধিমালা। কাজের সময় ৮ ঘণ্টা নির্ধারণ করা থাকলেও কেউ মানছে না সেই বিধিমালা। ৮ ঘণ্টার জায়গায় ১০/১১ ঘণ্টা কাজ এবং সাপ্তাহিক ছুটি থেকে বঞ্চিত হয়ে মাস গেলে যেই বেতন ধরিয়ে দেয়া হয় সেটি দিয়া বাসা ভাড়া আর খাওয়ার বিল দিয়েই শেষ! (কিছুদিন আগে সজিব তৌহিদ নামে একজন ভাইয়া এই ব্লগ এই লিখেছিলেন নিজের ১১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার বাজে অভিজ্ঞতা যার সাথে মিশে ছিল ম্যানেজারের বকা এবং দিন শেষে প্রাপ্ত টাকার পরিমান)।
দেশের সকল ভাবনা সকলেই ভাবছে। সকলের ভাবনা, টক শো দেখে আমি বিমুগ্ধ। কিন্তু সমাধান অনুভব করছি না। ভোগ করছি না। কবে আমাদের মধ্যে আসবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ! বেকারত্ব ঘুচবে কবে? কবে সকলের হাতের নাগালে আসবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম। একটু শান্ত জীবন, স্বস্তির জীবন পেতে লড়াই করতে করতেই কি জীবন শেষ হয়ে যাবে!
৮ বৈশাখ ১৪২০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন