বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্য পুস্তকের মহাপরিবর্তন- হতবাক করা তথ্য!

বছরের শুরুতে আমার এক সহকর্মী আমাকে একদিন কথার ছলে বলেছিল আপা আপনি কি জানেন ক্লাস সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত বইয়ে পরিবর্তন হয়েছে। আমি বললাম এটা তো প্রতি বছরই হয়। সরকার পরিবর্তন মানেই তো ইতিহাস পাল্টে যায়। উনি আমাকে বললেন আপা এগুলু না। কিছু প্রাপ্ত বয়স্কদের কথা ঢুকানো হয়েছে বলে উনি থেমে গিয়েছিলান। এর কারন সেদিন আমি বুঝিনা নাই। আর খুব একটা মাথায়ও রাখি নাই।
আজ আমি একটি দৈনিক পত্রিকায় দেখতে পেলাম বিশদ বিবরণ। কি কি পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কোন শ্রেণীতে কোন বিষয়গুলুকে কত নোংরাভাবে তুলে ধরা হয়েছে কোমল মতি ছেলে মেয়ে গুলুর সামনে।
অষ্টম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের ৮৬ পৃষ্ঠার শেষের প্যারাতে জা যেভাবে লিখা হয়েছে সেটা আমি এখানে তুলে ধরতে চাচ্ছিনা !
৮৬ নং পৃষ্ঠায় মদ , জুয়া খেলে, গাঁজা খায় নোংরা ছবি ।
৮৪ নং পৃষ্ঠায় তুলে ধরা হয়েছে কিশোর অপরাধের নানা দিক।
৮৫ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে কিভাবে বাচ্চারা ছেলে মেয়ে গুলু অল্প বয়সে বাজে পথে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে।
৮২ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে হারাম সম্পর্কে। সেখানে ৭ নং বলা হয়েছে হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, আফিম সেবন করা।

ষষ্ঠ শ্রেণীর শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয় বইটিতে - ছেলে মেয়েদের বয়ঃসন্ধি কালের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ! বইটির ৪র্থ অধ্যায়টি হল “ আমাদের জীবনে বয়ঃসন্ধি কাল “ এখানে বয়ঃসন্ধি কালে পরিবর্তন ও করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে !
৩৯ নং পৃষ্ঠায় ছেলে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনগুলু আলাদা আলাদা করে পয়েন্ট দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে একবারে খোলা মেলা ভাবে।
৪০ নং পৃষ্ঠায় মানসিক পরিবর্তন শারীরিক চাহিদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
৪১ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে ছেলেদের, মেয়েদের  শরীরের বিশেষ পরিবর্তনের কথা।
৪২ নং পৃষ্ঠায় কাজ-১ বলা হয়েছে  ছাত্র ছাত্রীরা তাদের সমস্যাগুলু এক গ্রুপ করে বোর্ড লিখতে হবে। এরপর অন্য দল আলোচনা করবে।
কাজ-২ তে বলা হয়েছে বয়ঃসন্ধি কালের সুবিধা, অসুবিধা, জানা অজানাগুলু পোষ্টার লিখতে।
৪৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ছেলেরা কিভাবে রেজার দিয়ে দারি গোঁফ কামাবে, আফটার সেভ ব্যবহার করবে ইত্যাদি বিষয়গুলু অভিভাবক থেকে জেনে নিতে।
৪৭ নং পৃষ্ঠায়  বয়ঃসন্ধি কালের ঝুঁকি শিরোনামে যেসব  ২ নং পয়েন্ট বলা হয়েছে কৌতূহলের বশে কিভাবে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরে। ৩ নং পয়েন্ট এ বলা হয়েছে  প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয় জ্ঞান থাকা না থাকার কারনে কিভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
৪৮ নং পৃষ্ঠায় বঃসন্ধি কালে ঝুঁকির নিরাপত্তার জন্য অভিভাবকদের উদ্দেশে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারা কিভাবে তাদের সন্তানদের খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখবেন !

( একটি দৈনিক পত্রিকা থেকে নেয়া আংশিক তথ্য )
পুরো লিখাটা পড়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। এ কোন দেশে বসবাস করছি! যেখানে মাধ্যমিক স্তরের বই ইয়ের ভিতর পুরো পর্ণ তথ্যে ভরপুর। যেখান থেকে ছেলে মেয়েরা আর জানবে আগ্রহী হয়ে উঠবে। পাঠ্য পুস্তকের নামের সাথেই বা কতটুকু সামঞ্জস্যতা আছে বইয়ের ভিতরের তথ্যের। আদৌ কি জানে কে দিল। কে মুদ্রণ করলো বইগুলু। কার মাথায় ঢুকল এত নোংরা চিন্তা? আমার সন্তানটি এই বই পরতে হবে স্কুল এ গিয়ে? বেতন দিয়ে?
পাঠ্য পুস্তকে যেই ভাষায় ব্যাপারগুলু তুলে ধরা হয়েছে, সেটার কোন প্রয়োজন ছিলনা। কিংবা এত সব বিষয়ের সাথে এইসব কোমলমতি বাচ্চাগুলুকে পরিচয় না করালেও কোন সমস্যা ছিলনা। পর্ণগ্রাফি, ব্লু ফ্লিম শব্দগুলু ব্যবহার করা কতোটা প্রয়োজনীয় এই যুগে? কিছূ শারীরিক পরিবর্তনের কথা লিখা যেত। আগেও আমরা জিববিদ্যা বিষয়ে পড়াশুনা করে এসেছি।
শিক্ষা মন্ত্রনায়লের মাননীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলের জ্ঞাতার্থে আমি একজন অভিভাবক আবেদন জানাচ্ছি, পাঠ্য পুস্তকে এমন করে কোন শিক্ষাদান পদ্ধতি রাখা দরকার নাই। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করছি এতে আমাদের সন্তানদের ক্ষতি হবে। আমার সন্তান বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনা করে। কিছুদিন পর তাকেও এই বইটি পড়তে হবে। দয়া করে সিলাবাস থেকে বদলানো হোক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন