বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

বোনাস অফার! ফ্রি অফার! কাড়াকাড়ি মূল্য ছাড়!

একটি হারপিক কিনলে সাথে একটি আর এফ এল মগ ফ্রি(!) দুইটি শার্ট কিনলে একটি শার্ট একদম ফ্রি(!) দুইটি টিশার্ট কিনলে ১০% মূল্য হ্রাস(!) হরলিক্স কিনলে বিস্কুট, পেন্সিল বক্স ফ্রি (!) ৫০০০/- টাকার বাজার করলে তিনটি সাবান ফ্রি(!) ২০০০/ – টাকার পণ্য কিনে জিতে নিতে পারেন ব্যাংককের বিমান টিকেট (!) প্লট কিংবা ফ্ল্যাট বুকিং দিলে গাড়ি ফ্রি(!) আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ল্যাপটপ ফ্রি (!) …….
প্রতিদিন চারিদিকে এরকম হাজার রকমের ফ্রি-এ ছড়াছড়ি। এই ফ্রি অফার যে কর্পোরেট অফিসেও এসেছে কিন্তু একটু ভিন্ন ভাবে(!) ! খাবার দোকানের কুপন ৯৯৯/- টাকা দিয়ে কিনলে এক বছর অর্ধেক মূল্য ডাবল খাবার খাওয়া যাবে(!) এই বইটির বাজার মূল্য ৫০০০/- টাকা ! শুধু আজকের জন্য ৮০০/- টাকা (!) সাথে যোগ দিয়েছেন ব্যাংকের লোন দাতা এবং ক্রেডিট কার্ড দানকারীরা(!) আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড করুন বাৎসরিক কোন চার্জ নেই, এবং আপনি পেয়ে জেতে পারেন বিমান টিকেট(!) আমরাই একমাত্র ব্যাংক যারা সবচেয়ে কম সুদে লোন দিচ্ছি(!)
এই লোনের ছোবলে পরে অনেকেই দিশেহারা! আমার অফিসের বস সেদিন শুনলাম চিৎকার করছে! “ব্যাটা তর বাপের ব্যাংক! হুট করে টাকার উপর এত সুদ বৃদ্ধি কেন আমাকে না জানায়ে?” তোদের ধরে মাইর দেয়া উচিত ইত্যাদি ইত্যাদি ! আমার আরেক বস আছেন জিনি এপার্টমেন্ট কিনেছেন। তিনিও হাউজ লোন, বেতনের পরিবর্তে লোন নিয়ে এখন মাথার চুল সব ঝেড়ে টাক মাথায় কাক বসায়ে রেখেছেন!
একজন সহকর্মী ইনি ব্যাংক লোন নেন না তবে ৫ এর অধিক ক্রেডিট কার্ড এর গর্বিত মালিক! যিনি এখন ঘুমাতে পারছেন না। ছাড়তেও পারছেন না। কি যে করছেন জানি না ! তবে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে এই ফাঁদে পা দিবেন না !
একটু আগে একজন ভদ্র লোক আসলেন ! মধুর হাসি দিলেন আমিও হাসি দিলাম ! ভাবলাম আমাদের কোন একজন হবেন যারা আমাদের এখানে বসেন না ! তারপর এটা কে এটা কে করছেন ! প্রশ্ন করলাম – আপনি কোথা থেকে এসেছেন? উত্তরে – আমি ব্যাংক লোনের ব্যাপারে সাহায্য করতে এসেছি! সুন্দর শব্দ! বললাম আমি আগ্রহী না এবং বাকি দুজন অতিথি। এখনও ওই দুজন অতিথি আছেন ! কারন উনারা ডিজিটাল ইন্টার্ভিউ দিতেছেন চাকরি পেতে আমাদের কোম্পানিতে! পরে ঐ  ভদ্রলোক চলে গেলেন।
এই সকল ফ্রি অফার বোনাস অফার সাহায্য করতে এসে এরা যে কি শুভঙ্করের ফাঁকি গুপ্ত রেখে যাচ্ছেন আমাদের অসুবিধার জন্য এটা যারা ভুক্তভুগি তারাই জানেন। সবাই-ই কেনা দামে বিক্রি করে! তাহলে মুনাফা অর্জন ছাড়া কি এরা মানব সেবায় নেমেছে? একটি কিনলে অপরটি ফ্রি কিভাবে দেয়া জায়? তখনই দেয়া যায় যখন ১০০ টাকার পণ্য ৩০০ টাকায় বিক্রি করে; তখন আরেকটি পণ্য ফ্রি দিলেও ১০০ টাকা মুনাফা থাকে(!) কিংবা খাবার হলে ওজনে কম দিয়ে মান নিন্ম করে সাথে ফ্রি কিছু দেয়(!)
ফ্রি নেই কোথায়? খাবারের দোকানেও ফ্রি আছে। আমাদের এই খাবারটা খেলে সাথে কোক/ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ফ্রি! পার্লার গেলে বউ সাজালে একজন সঙ্গী ফ্রি সাজুগুজু(!) ল্যাপটপ কিনলে ব্যাক প্যাঁক ফ্রি(!) মোবাইল কিনলে মগ, শেভিং জেল কিংবা এসডি কার্ড ফ্রি (!)
কিছুদিন আগে দোকানে গিয়ে ৫০ কেজি নাজিরশাইল চাল কিনলাম ! দোকানদারকে বললাম সাথে কি এক কেজি পোলাউ চাল ফ্রি দেয়া জায় না(!) হেঁসে বলল আপা আপনি আগে তো বলেন নাই! এর মানে আমি আগে বললে উনি ৫০ কেজি চাল এর ভিতরে পোলাউর চাল এর মূল্য টা এমন করে পাঞ্চ করতেন যে আমি খুশী হয়ে চলে আসতাম (!)
কখনো ফোনে, এসএমএস, সরাসরি, রাস্তা ঘাটেও এমন করে এরা ফ্রি অফার দিতে জেঁকে ধরে মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আমিও জেঁকে ধরি বলি ভাইয়া আপা আমাকে আর কোনোদিন মনে রাইখেন না। আমার ওইসবে ছিটেফোঁটা আগ্রহ নাই !
এই সব ফ্রি অফার, মূল্য ছাড়, ধামাকা অফার, কাড়াকাড়ি, ফাটাফাটি, নামক অফার এবং উপহারের আড়ালে লুকিয়ে আছে প্রতারণার বিরাট একটি অন্ধকার জগত। একটু ভাল করে হিসাব নিকাশ করলেই পাওয়া যাবে বা যে কেউ পেয়ে যাবে এই শুভঙ্করের ফাঁকির খেলা! যেটাকে প্রতারণা বলেই আখ্যায়িত করা সমীচীন হবে, যথার্থ হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন