বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

বিনোদন কেন্দ্র কোথায়?

সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা যে কোন ছুটিতেই সকলে চায় ব্যস্ত নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে দূরে কোথাও কিংবা আশেপাশে কোথাও পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে যেতে। কিছুটা সময় আলাদা করে কাটিয়ে আসতে। কিন্তু দমবন্ধ হয়ে পড়া নাগরিকরা যাবে কোথায়?
পার্ক?
ওরে বাবা সেটা কি সম্ভব ছেলে মেয়েকে সাথে করে নিয়া যাওয়া? পার্ক তো দখলে নানা জন দের!
কেউ পার্কে বসে এমন করে চুটায়ে প্রেম করছে দেখলেই বাচ্চাকে নিয়া দৌঁড়ে পালাতে হয়। কিংবা একদল ছেলে একত্র হয়ে সিগারেট বা গাঁজার ধোঁয়ায় ফুর্তি করছে। মাদকাসক্তদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা এই পার্ক। সেখানে কি সম্ভব পরিবার নিয়ে যাওয়া? তারপর খাবার দোকান, ছিনতাইকারি, হকারদের যন্ত্রণা তো কিলবিল করছে। নিরাপত্তা নাই বললেই চলে।
খাবার দোকান?
খেতে যাবো কোথায়? কিছুদিন আগে একটি নামকরা ফাস্টফুড দোকানে গিয়েছিলাম খেতে। এর আগেও অনেক বার ওই দোকানে খেয়েছি। একটা লম্বা বিরতির পর সেদিন গিয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম, কোথায় এসেছি? অন্ধকার, ভিতরে চেয়ার টেবিল নাই! নিচে আসন পাতা! ছেলেমেয়েগুলো জড়াজড়ি করে বসে হুক্কা টানছে! খাবার দোকানে সবার সামনেই বিক্রি হচ্ছে সীসা কিংবা বিয়ার, মদ নামক পানীয়গুলো! ফিরে এলাম।
অন্য আরেকটি দোকানে ঢুকলাম। হ্যাঁ দেশী খাবার, বিদেশী খাবার তবে হুক্কা বা সীসা ধরনের নয়। কিন্তু বাধ সাধল আমার ছেলে। সে মাঝে বসবেনা। ওই যে চিপায় যেই টেবিলটা আছে ওটায় বসবে। ওখানে দুইজন ছেলেমেয়ে রীতিমতো বেডরুম বানিয়ে প্রেম করছে। আমি লজ্জায় শেষ! কিন্তু আমার ছেলেও নাছোড় বান্দা আমি অই চিপায় বসবো! আঙ্কল আনটি তো খাচ্ছেনা। ওরা চলে যাক। এই তোমরা কি করো ? উঠো! আমি আমার বাবা মা কে নিয়া বসবো । ছেলেমেয়ে দুটি মাথা নত করে লজ্জায় একটি হাসি দিয়ে উঠে গেল । বলল বাবু বস ।
কোন বিনোদন কেন্দ্র?
বিনোদন কেন্দ্রগুলো তো একটা ব্যবসাকেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। ছোট একটি জায়গায় ঠাঁসা ঠাসি করে কিছু রাইড দিয়ে গড়ে উঠছে বিনোদন পার্ক। যারা কনসার্ট করে, নানা রকমারি অফার করে। কিন্তু আড়ালে কি হচ্ছে? কিছুই নাই। বাধ্য করে খেতে। কিংবা রাইড চড়তে। কখনো কখনো আবার রাইড ছিঁড়ে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। নিরাপত্তা নাই।
প্রত্নতাত্ত্বিক জায়গা?
সোনারগাঁ , আহসান মঞ্জিল , লালবাগ কেল্লা , কুমিল্লা কোটবাড়ি, ময়নামতি, শালবন বিহার এই সব জায়গাগুলো ঢাকার খুব নিকটে । কিছু কিছু আবার ঢাকা শহরের ভিতরেই। জায়গাগুলোতে যারা অতি সম্প্রতি গিয়েছেন তারা দেখেছেন কি বেহাল অবস্থা । নিরাপত্তা ব্যবস্থা তো খুবই নাজুক । নাই বললেই চলে । উপরন্ত পরিস্কার পরিছন্নও না । পাশাপাশি বেড়াতে গেলে ভাল মানের খাওয়ার ব্যবস্থা নাই, নাই বিশ্রাম নেয়ার একটি সুন্দর জায়গা ।
উল্টো জায়গাগুলোর ভিতরে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যারা যেই এলাকার তারা সেই এলেকারে ঐতিহ্যবাহী কোন একটা ব্যবসা গেঁড়ে বসেছে।
ঘরে বসে টি ভি দেখা?
ওরে বাবা ! টি ভি খুললে কি দেখা যায় ? টক শো, মেগা ধারাবাহিক, কিংবা কোন রিয়ালিটি শো। সবচেয়ে বাজে লাগে নাটক গুলো। মাতৃভাষার অপব্যবহার, উচ্চারণে পরিবর্তন তো আছেই পাশাপাশি নাটকের গল্প, অভিনেতা অভিনেত্রীর পোষাকেও নেই শালীনতা। নেই সামঞ্জস্যতা। বস্তাপচা কাহিনী টেনে হেঁচড়ে লম্বা করার প্রবনতা। আর যে চলচিত্রগুলো দেখানো হয় সেখানে এত বাজে গালি গালাজ শুনা যায় তা বর্ণনার মত না । গল্পের নির্মাণের দুর্বলতা সবার চোখে পড়ে। প্রতিটা বিনোদন চ্যানেল খবর প্রচারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ! একই খবর ২০টা চ্যানেলে। পাশাপাশি অনুষ্ঠানের সৌজন্যে আনলিমিটেড বিজ্ঞাপন মহা বিরক্তিকর। অনুষ্ঠান প্রচারে নাই কোন নীতিমালা। নাই সময় জ্ঞান।
রাস্তায় হাঁটতে যাবেন?
বিকেলে উন্মুক্ত রাস্তায় একটু হেঁটে বেড়াবো ? এখানে কে নিরাপত্তা দিবে? চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা চোখের সামনেই হতে দেখি। পুলিশ দেখেও দেখে না। পত্রিকায় পড়ি ওদের সাথে পুলিশের গোপন সমঝোতা আছে। সড়ক দুর্ঘটনা যে কেবল রাস্তায় গাড়ী চলাচলেই ঘটে সেটা তো বলা ঠিক হবে না। মার্কেটে ছুটে যাবো? ফুটপাতে হাঁটলেও নির্মাণাধীন ভবনের নির্মাণ সামগ্রী উপর থেকে পরে পথচারি নিহত হয়েছে একথা অনেকেই জানে।
দেশে নিরাপত্তা নেই তাই যেতে হবে বিদেশে ঘুরতে আনন্দ পেতে । ছুটি কাঁটাতে। এটাতো দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করার সামিল মনে হয়। যদি একটা পাহাড় দেখতে ভারত, গুছানো মালয়েশিয়া, সমুদ্র সৈকত দেখতে থাইল্যান্ড, নাকি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে নেপাল? কেন এটা ভাবতে হবে? আমাদের দেশে কি নেই? সুন্দরবন থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কিংবা সোনারগাঁ থেকে মহাস্থান গড় ! পুণ্ড্র নগর থেকে শের ই বাংলা নগর। সবই তো আছে।
সবাই আমাদের দ্বারা অর্থ উপার্জন করবে ধনী দেশ হবে আর আমাদের সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা গরীব দেশ থেকে যাবো। আমাদের দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক জায়গাগুলোর প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদার করতে পারলে আমরা যারা দেশের ভিতর স্বল্প আয়ের লোকজন আছি তারা বেড়ানোর জায়গা পেলাম, পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি কি হবে না? এ কথা সরকার কি বোঝে না? অবশ্যই বোঝে, কিন্তু কিছু করে না। আমাদের জন্য পর্যটন ব্যবস্থা একটি ট্র্যাজেডি মাত্র।
২৮-০৩-২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন