বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

ধ্যানে বসলেই কর দিতে হবে কেন?

সংসদ ভবন থেকে বাজেট অধিবেশন সরাসরি টিভি দেখানো হয়েছে। এক সময় বলা হচ্ছিল “কালো টাকা সাদা করার সুযোগের কথা” ওমনি আমার ৮ বছরের ছেলের প্রশ্ন তার মামা কে – টাকা কি সংসদ ভবনে বানায়? ওখান থেকে কালো টাকা সাদা হয়ে তারপর আমাদের কাছে আসে? তাই বলা হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এসেছে? আমার ভাই বুঝাল ” না মামা ওখানে কালো টাকা মানে টাকার রঙ কালো না এবং টাকাও সংসদ ভবন তৈরি হয় না”।
এখন পর্যন্ত এর ওর মুখ থেকে আর টিভি  ব্রেকিং নিউজ দেখে কিছু কিছু জেনেছি! বাজেটের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আমি খেলাম যখন সকালে/দুপুর মেলায় দেখতে পেলাম দৈনিক প্রথম আলোতে ”ধ্যানে বসলেই কর দিতে হবে!”
( আপনি হতাশাগ্রস্ত, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিংবা মনোদৈহিক রোগে ভুগছেন। কিন্তু কিছুতেই তা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। তাই একটু স্বস্তির জন্য অর্থের বিনিময়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে মেডিটেশন শিখতে ও চর্চা করতে যাবেন। কিন্তু স্বস্তিতে বাধা তৈরি করবে কর।
কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে কেউ যদি মেডিটেশন, কাউন্সেলিং, মোহিতকরণ বা অনুরূপ কোনো পদ্ধতিতে সেবা নেন, তাকে সেবামূল্যের সাড়ে ৭ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দিতে হবে। আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে এই করারোপ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মেডিটেশন সেবা নিলে সেবা প্রদানকারী কর্তৃক প্রাপ্ত সমুদয় অর্থের সাড়ে ৭ শতাংশ হারে মূসক প্রযোজ্য হবে। এই হার ৫০ শতাংশ ভিত্তিমূল্য ধরে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মানে হলো, কেউ যদি ২০০ টাকার সেবা নেন, তাহলে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বাকি ১০০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপিত হবে। আর তা সেবাপ্রদানকারীর প্রাপ্ত অর্থের সাড়ে ৭ শতাংশ হারে প্রযোজ্য হবে।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মেডিটেশন সেবার মানে হলো কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা, যিনি বা যাঁরা পণের (অর্থ) বিনিময়ে মনোদৈহিক রোগগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত এবং নানাবিধ শারীরিক জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীকে মেডিটেশন, কাউন্সেলিং, মোহিতকরণ বা অনুরূপ কোনো পদ্ধতিতে সেবা প্রদান করেন।
(বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান মেডিটেশন সেবার প্রসার ঘটিয়েছে। -দৈনিক প্রথম আলো)
হতভম্ব হয়ে গেলাম। কি সর্বনাশা খবর! এটা তো চিকিৎসা খাতে কর বসানো হল! কোনো মানুষ কি স্বাধে যায় নাকি চায় মানসিক রোগী হতে? মানসিক সেবা নিতে কারা যায়?
- মানসিকভাবে কোনো কারনে ভয়ানক ভেঙ্গে পড়েছে তারা
- মাদক গ্রহন করে যারা
- কিংবা আমাদের বলা কোথায় পাগল যারা ! (পাগল আবার কেউ কেউ জন্ম থেকে, কেউ কোন কারনে  অনেক অনেক কারন নিহিত)
- অটিস্টিক, সেরিব্রেরাল পালসি, ডাওঁন সিনড্রোম ইত্যাদি বাচ্চাগুলুরও মানসিক সেবা লাগে কোনো সেন্টারের সাথে জড়িত থেকে!
যেখানে সরকার “অটিজম” নিয়ে এতো হাক ডাক দিচ্ছে! একজন অটিস্টিক বাচ্চারও কিন্তু মানসিক ডাক্তারের কাছে যেতে হয় প্রতিনিয়ত। তাহলে এদের জন্য সরকার কি করলেন নতুন বাজেটে?
এতে সেবাদানকারী  প্রতিষ্ঠান কৌশলে নিজেদের মূল্য অধিক করে সেখান থেকে অর্ধেক কমিয়ে আবার যোগ বিয়োগ এর হিসাবে নামবে। দুইটি  কিনলে একটি ফ্রি। আসলেই কি ফ্রি? হিসাব করলে দেখা যায় তিনটির মূল্য এটা দেয়া হচ্ছে! এমন অনেক প্রতারনার স্বীকার হয়েছে অনেকেই! তার মানে এই পরিবারগুলো সেবা নিতে গেলে সুন্দর সুস্থ জীবন ফিরিয়ে আনতে গেলে ৭ শতাংশ হারে কর দিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
উল্টো খবরটা হলে আরও ভালো হতো যে, যারা মানসিক ভাবে অসুস্থ ধ্যানে বসেন সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চান তাদের জন্য ” সরকার সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বিনা মূল্যে  করবেন! “ এটা কোন ভাবেই বাস্তবায়ন করা ঠিক নয়! এতে হতাশাগ্রস্থদের মধ্যে আত্মহনন প্রবনতা বাড়বে এবং ঐ সকল পরিবারগুলোকে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হবে।
যারা ব্যবসা করছেন তারা কি খারাপ কিছু  করছেন? তাদের আয়ের উপর কর বসালেও মানা যেতো! সেটিও ঠিক নয় কারন এরা দেশ ও জাতিকে একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন এবং দিচ্ছেন। বরং এদের উপর থেকেও কর মওকুফ করে দেয়া দরকার। এবং আর অনেকেই যেন এগিয়ে আসে এমন মহতী উদ্যেগে সেই দিকে সুবিধা বাড়ানো দরকার। একজন সুস্থ মানুষ দেশের উন্নতির হাতিয়ার আর একজন অসুস্থ মানুষ দেশের ও পরিবারের বোঝা!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন