বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

আমি বন্দী কারাগারে, আছি গো মা বিপদে!

আমি বন্দী কারাগারে, আছি গো মা বিপদে বাইরের আলো চোখে পড়ে না  মা, আমি বন্দী কারাগারে! অপরাধ না করেও কারাগারে কত নিরিহ নির্দোষ মানুষ বন্দী জীবন যাপন করছে প্রতিদিন! এদের মানবেতর জীবন যাপনের জন্য দায়ি কেবল এদের দারিদ্রতা এবং আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর কুকুররুপী মানুষের হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতা।
আম্মা গো আম্মা ও আম্মা অহু অহু চিৎকার দূর থেকে কানে ভেসে আসলো! আর্তনাদ শুনে মনে হল একটি ১১/১২ বছরের মেয়ে কাঁদছে। এদিক ওদিক বারান্দায় গেলাম বুঝতে পারছি না।  বাসার মূল দরজা খুলে বুঝার চেষ্টা করলাম। এবার টের পেলাম ৫ম তলা থেকে শব্দটি আছে। আমি ৪ তলার বাসিন্দা। দৌঁড়ে গিয়ে দেখি দরজা বাইরে থেকে তালা ঝুলানো। ঈদের ছুটি! তাহলে মেয়েটি ভিতরে একা একা?
এই কিরে কাদতেছিস কেন? বাসার উনারা কোথায়? কি হয়েছে আমাকে বল। আমি চার তলার অ্যান্টি। তখন মেয়েটি বলছে – উনারা দেশে (গ্রামের বাড়ি) গেছেন আমাকে নেন নাই! তালা দিয়ে গেছে বাইরে থেকে আর ৫/৬ দিনের জন্য চাল, ডাল দিয়ে গেছে। কি ভয়ানক কথা রে বাবা ! তা তুই একা একা ভয় পাস না? টিভি দেখতে পারস? না অ্যান্টি আমি রান্না ঘর আর বসার ঘর এই আছি বাকি রুমগুলা তালা দেয়া। আজকে ভালো লাগতেছে না আর কষ্ট হইতাসে। সবাই ঈদের আনন্দ করতাছে আর আমি কই আছি!
ওর কষ্ট হলেও কিছুই করার ছিল না। অপরের বাসার তালা ভেঙ্গে মেয়েটিকে বের করার বুদ্ধি মাথায় আসেনি, উল্টো আতঙ্ক কাজ করেছে। খাল কেটে কুমির আনা হয় কিনা! কারন এই বাসার মহিলাটি বহুত শয়তান, ঝগড়াটে আগে থেকেই দেখেছি। রিকসা চালকের ২ টাকা নিয়ে দর কষাতেও সে কুণ্ঠা বোধ করে না!
কাঁদিস না রে, ভয়ও পাস না যেন; আমরা নিচে আছি! মেয়েটি কে? কেন ঐ বাসার সকলের ফরমায়েস খাটা সকলের রিমোট কন্ট্রোল কাজের সহযোগী জুলেখা। জুলেখাদের নিজেদের জন্য এত বেশী এত নিষ্ঠুরভাবে আমরা ব্যবহার করি যে ভুলেই যাই জুলেখা ও আমাদের মতোই একজন রক্ত মাংস গড়া মানুষ। কেবল দুর্ভাগ্যক্রমে গরীব পিতার সন্তান হয়ে জন্মে আমাদের কাছে আসে একটু খেতে আর সুন্দর জামা কাপর পরতে। তাদের কে আমরা খুনতি গরম করে ছেকা দেই, যখন তখন পিটাই, বন্দী করে রাখি।
পিটিপিটি চোখ দিয়ে দুই হাতে কবজি করে ধরে রেখে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ১০/১২ বছরের অনেক মেয়েগুলোকে। যারা বাইরের আলো দেখতে বাতাসের স্পর্শ পেতে কখনো হাত বাড়ায়। নীচে ছেলে মেয়েগুলো খেলছে। ইস আমি যদি ওদের সাথে খেলতে পারতাম! কিন্তু মালিকেরা বলে, তুই কাজের মেয়ে, কাজ করতেছিস কাজ কর। বেশী চাওয়া লোভের কারনেই তোরা ফকির বুঝলি …. দে মাইর ! এক ধাপ মাইরের, পরের ধাপ মাঝে মাঝে ধর্ষিতা হওয়া, শেষ ধাপ মৃত্যু খুন বা অপমৃত্যু ! ধর্ষণ কখনো গৃহকর্তা আবার কখনো বাড়ির মালিকের আত্মীয় বা ছেলের দ্বারা ! নিরবে সয়ে যেতে হয় চেপে যেতে হয় এই নিরব নোংরা অত্যাচার! দুর্ভাগ্যক্রমে পেটে সন্তান এসে গেলে মেয়েটিকে দুশ্চরিত্রা সাব্যস্ত করে গ্রামে ফেরত কিংবা বাসা থেকে গলা ধাক্কা! কখনো গোপনে গর্ভপাত।
বাসায় কিছু হারানো গেল, চোর কে? কে নিল? কোথায় গেল? তুই নিছিস শয়তান, চোর মেয়ে কোথাকার! কিংবা হারামজাদী তোরে রাখছি কেন? খাইয়া খাইয়া শরীর ফুলানর জন্য? তোর অনেক চর্বি জমছে! তুই খুঁজে এনে দিবি। নইলে তোর বেতন থেকে কেটে রাখমু !
শিশু শ্রম এবং গৃহপরিচারিকা আইন নতুন করে তৈরি হচ্ছে! বারবার অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়! কিন্তু প্রকৃত বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের শাস্তি কখনোই দৃষ্টান্তমূলক হয় না। নির্যাতনকারীরা শেষ পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে থানা পুলিশ ম্যানেজ করে ফেলে বলেই এরা বন্দী জীবন করছে, কোন অপরাধ না করেও। সরকার দরীয় বা বিরোধীদলের রাজনীতিতে ওদের জন্য কোন কাজ করার সময় নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন