বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

ম্যাজিক বাউলিয়ানা


আপনি যদি লোক সঙ্গীতে পারদর্শী হন , হয়ে থাকেন শহরে কিংবা গ্রামে বাংলাদেশের যেকোনো বয়সের নাগরিক তবে আপনিও অংশ গ্রহন করতে পারেন ম্যাজিক বাউলিয়ানা - যে গান বাজে বুকে / সে গান বাজুক মুখে ! লোকসঙ্গীতের প্রতিভা অন্বেষণে ৭ জুলাই ২০১৩ থেকে ফোন লাইন খুলা হয়েছে ! আয়োজনে মাছরাঙা টি ভি , মিডিয়া পার্টনার দৈনিক সমকাল , রেডিও পার্টনার রেডিও টু ডে , ওয়েব পার্টনার BANGLA NEWS 24 , পৃষ্ঠপোষকতায় SQUARE TOILETRIES LTD ! মুল বিচারক হিসাবে আছেন – কিরন চন্দ্র রায় , সুবীর নন্দী , কনকচাঁপা ! . যা আমাদের দেশে প্রথম বারের মত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ! সুন্দর উদ্যোগ ! দেশের আনাচে কানাচে থেকে অনেক প্রতিভা বের হয়ে আসবে !

রাতারাতি তারকা সঙ্গীত শিল্পী হবার সবচেয়ে সহজ উপায় হল লোকসঙ্গীত কিংবা বাউল গান রিমেক কিংবা পুরানো গান নতুন আঙ্গিকে গাওয়া ! গলায় সুর থাকুক বা নাইবা থাকুক ! আপনার সহযোগী হিসাবে কাজ করবে আধুনিক সব যন্ত্র এবং নানা রকম গলার সুর বদলানো সফটওয়্যার ! যার দৌলতে আপনিও চাইলে তারকা হয়ে সঙ্গীত অঙ্গনে নিজেকে একজন উজ্জ্বল তারকার আসন নিতে পারেন !

কেউ কেউ বলে গানের আধুনিকায়ন আবার কেউ কেউ বলেন কথা সুর সব থিক আছে কেবল আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার এর ফলে একটু পরিবর্তন ! কথা গানের কথায় আংশিক পরিবর্তন কিংবা সুরে ও কিছুটা পরিবর্তন কে তারা লালন কিংবা বাউল সঙ্গীত কে বিকৃত মনে করে না !

বাউল সঙ্গীত কি ? এবং সত্যিকারের বাউল শিল্পীরা কে কোঁথায় কেমন আছেন আমরা কি তাদের খবর রাখি ! অনেকে মারা গেছেন আর যারা জীবিত আছেন ! তারা বেঁচে থেকেও মৃত !
বাউল একটি বিশেষ লোকাচার ও ধর্মমত। এই মতের সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মাটিতে। বাউলকূল শিরোমণি লালন সাঁইয়ের গানের মধ্য দিয়ে বাউল মত পরিচতি লাভ করে। বাউল গান যেমন জীবন দর্শনে সম্পৃক্ত তেমনি সুর সমৃদ্ধ। বাউলদের সাদামাটা কৃচ্ছসাধনার জীবন আর একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাদের অভ্যাস।

বাউলেরা উদার ও অসাম্প্রদায়িক ধর্মসাধক। তারা মানবতার বাণী প্রচার করে। বাউল মতে বৈষ্ণবধর্ম এবং সূফীবাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বাউলরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় আত্মাকে। তাদের মতে আত্মাকে জানলেই পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তাকে জানা যায়। আত্মা দেহে বাস করে তাই তারা দেহকে পবিত্র জ্ঞান করে। সাধারণত অশিক্ষিত হলেও বাউলরা জীবনদর্শন সম্পর্কে অনেক গভীর কথা বলেছেন।

বাউল সাধকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে লালন সাঁই। লালন তার বিপুল সংখ্যক গানের মাধ্যমে বাউল মতের দর্শন এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রচার করেছিলেন। এছাড়াও বাউল কবিদের মধ্যে জালাল খাঁ, রশিদ উদ্দিন, হাছন রাজা, রাধারমণ, সিরাজ সাঁই, পাঞ্জু সাঁই, পাগলা কানাই, শীতলং সাঁই, দ্বিজদাস, হরিচরণ আচার্য, মনোমোহন দত্ত, লাল মাসুদ, সুলা গাইন, , শাহ আব্দুল করিম, উকিল মুন্সি, চান খাঁ পাঠান, তৈয়ব আলী, মিরাজ আলী, দুলু খাঁ, আবেদ আলী, উমেদ আলী, আবদুল মজিদ তালুকদার, আবদুস সাত্তার, খেলু মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, আলী হোসেন সরকার, চান মিয়া, জামসেদ উদ্দিন, গুল মাহমুদ, প্রভাত সূত্রধর, আবদুল হেকিম সরকার, ক্বারী আমির উদ্দিন, শেখ মদন, দুদ্দু সাঁই,কবি জয়দেব, কবিয়াল বিজয়সরকার, ভবা পাগলা, নীলকণ্ঠ, দ্বিজ মহিন, পূর্ণদাস বাউল, খোরশেদ মিয়া, মিরাজ উদ্দিন পাঠান, আব্দুল হাকিম, মহিলা কবি আনোয়ারা বেগম ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য।

হাসন রাজা একজন জমিদার ,মরমী কবি এবং বাউল শিল্পী ( মৃত ) -

হাসন রাজা জন্মগ্রহন করেন বাংলা ৭ পৌষ ১২৬১ ও ইংরেজি ২১/১২/১৮৫৪ সালে । সেই সময়ের সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে । তবে বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলায় পরিণত হয়েছে ।
তার হিন্দু পূর্বপুরুষদের মধ্যে বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ।তার পুর্বপুরুষের বাস ছিল ভারতের অয্যোধ্যায়। সিলেটে আসার আগে তাঁরা দক্ষিণবঙ্গের যশোর জেলার অধিবাসী ছিলেন।
হাসন রাজা প্রথম জীবনে জমিদার থাকলেও। মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে হয়ে উঠেন একজন মরমী কবি এবং বাউল শিল্পী ,হয়ে উঠেন ভাবের জগতের বাসিন্দা । বাংলাদেশে দর্শনচেতনার সাথে সঙ্গীতের এক অসামান্য সংযোগ ঘটিয়েছেন হাসন রাজা যা বলার অপেক্ষা রাখেনা । তার গাওয়া গানে ফুটে উঠে নিছক এই ভব রঙ্গ বাজার , নিজের দোষ গুন , স্রষ্টার সানিগ্ধ কামনা , অনুতাপ ইত্যাদি । তার সকল গান নিয়ে হয়েছে গবেষণা, চলছে গভীর ভাবের ইন্দ্রজাল থেকে মূল ভাব বের করার চেষ্টা। তার গানগুলো আজো মানুষের হৃদয়ে রয়েছে।
শাহ আব্দুল করিম ( মৃত ) -
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চলে গেলেন লোকসংগীতের কিংবদন্তী 'বাউল সম্রাট' শাহ আব্দুল করিম ! ১৯১৬ সালে শাহ আব্দুল করিম জন্মেছিলেন সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উজানধল নামের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। দারিদ্র্য আর কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয়েই বেড়ে উঠেছিলেন এই গুণী শিল্পী। সেই শৈশবেই তার সংগীত প্রতিভার যে স্ফুরণ তা ভবিষ্যতের এই ‘বাউল সম্রাট’ আব্দুল করিমের চারপাশের মানুষের কাছে তখন থেকেই বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছিলো। চিন্তা ও চেতনায় তিনি সেই শৈশব থেকেই এদেশের লোকসংগীতের সৃষ্টিশীলতার উত্তরীয় শিরোধার্য্য করেছিলেন !

লোকসংগীতের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য এই কিংবদন্তীর বাউলসংগীত শিল্পী ও সাধক এযাবৎ শতাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সৃষ্টিশীলতার সম্মাননা হিসেবে ২০০০ সালে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম কথা-সাহিত্যিক আব্দুর রউফ পদক ছাড়াও ২০০১ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’ এ ভূষিত হয়েছিলেন।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সম্মাননার মধ্যে রয়েছে রাগীব- রাবেয়া সাহিত্য পদক ২০০০, আইডিয়া সংবর্ধনা স্মারক ২০০২, লেবাক অ্যাওয়ার্ড ২০০৩, অভিমত সম্মাননা ২০০৬ এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন সম্মাননা ২০০৬। ২০০৫ সালে মেরিল প্রথম আলোর ‘আজীবন সম্মাননা’ পুরস্কার ছাড়াও ২য় সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘আজীবন সম্মাননা’য় ভূষিত হয়েছিলেন কালজয়ী এই বাউলসাধক।

বেড়ে ওঠার সময়টিতে শাহ আব্দুল করিম শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় কামাল উদ্দীন, সাধক রইস উদ্দীন, শাহ ইব্রাহিম মাস্তান বকশ প্রমুখ খ্যাতনামা শিল্পী ও বিদগ্ধজনের কাছে। এই বাউল সম্রাটের সংগীতের সীমানা সেই বাউল সংগীতের পাড় বেয়ে বিস্তৃত হয়ে প্রবাহিত হয়েছিলো আধ্যাত্মিক এমন কি ভাটিয়ালী গানের মোহনা পর্যন্ত।

কিংবদন্তীর এই বাউল সম্রাটের সৃষ্ট বসন্ত বাতাসে, মায়া লাগাইছে, গাড়ি চলে না চলে না, ঝিলমিল ঝিলমিল করে, আসি বলে গেলো বন্ধু, কেনো পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, আমি কুলহারা কলংকিনী, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম প্রমূখ অনবদ্য সংগীত এদেশের সংগীতবোদ্ধাদের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের সহস্র তরুণ সংগীতশ্রোতাদের অন্তকরণেও বিমুগ্ধ এক চিরকালীন শুদ্ধতার ধারা হিসেবেই প্রবাহমান থাকবে।

কাঙ্গালিনী সুফিয়া ( জীবিত আছেন দারিদ্রতা কে বরন করে ) -
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি অর্ন্তগত রামদিয়া গ্রামে ১৯৬১ সালে হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পিতা খোকন হালদার ও মাতা টুলু হালদার। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার পারিবারিক নাম ‘টুনি হালদার’। রাজবাড়ী তথা সমগ্র বাংলাদেশের ফোক সঙ্গিতের জনপ্রিয় এক সম্রাজ্ঞী। রাজবাড়ী জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুফিয়া অতিপরিচিত এবং আদরণীয় একজন ব্যক্তিত্ব। অসাধারণ প্রতিভাবান এই শিল্পির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তিনি উপস্থিত (Instant) গান তৈরি করেন এবং গান পরিবেশন করেন। গান তৈরি ও পরিবেশনের জন্য তাঁর কোন প্রকার পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। এটিই বাংলাদেশের অন্যান্য ফোক শিল্পির থেকে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার প্রধান ব্যতিক্রম। কাঙ্গালিনী সুফিয়া মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর নিজ গ্রাম রামদিয়াতে একটি অনুষ্ঠানে গান শিল্পী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার `সুধির হালদার' নামের একজন বাউল এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সুধির হালদারের সাথে বানিবনা না হওয়ায় অল্পকিছুদিনের মধ্যেই তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ৭ বছর পর কাঙ্গালিনী সুফিয়া উস্তাদ হালিম বয়াতির শিস্যত্ব গ্রহন করেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ‘টুনি হালদার’ নাম পরিবর্তন করে ‘সুফিয়া খাতুন’ নাম ধারণ করেন। পরবর্তীতে তিনি উস্তাদ হালিম বয়াতি ছাড়াও ফরিদপুর জেলার প্রখ্যাত বয়াতি ‘এনায়েত আলী’র কাছেও গান চর্চা করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসাবে অর্ন্তভূক্ত হওয়ার পর তৎকালীন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ডি.জি জনাব জনাব মুস্তফা মনোয়ার তাঁকে ‘কাঙ্গালিনী’ উপাধি প্রদান করেন। সেই থেকে ‘সুফিয়া খাতুন’ রাজবাড়ীসহ সমগ্র বাংলাদেশে ‘কাঙ্গালিনী সুফিয়া’ নামে পরিচিত।

তাঁর সৃষ্ট ও পরিবেশিত বিখ্যাত কয়েকটি গান- ‘কোন বা পথে নিতাই গঞ্জে যাই’, ‘পরাণের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারনে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’ ইত্যাদি। মূলত কাঙ্গালিনী সুফিয়া পাঁচ (৫) সদস্য বিশিষ্ট একটি দল নিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এই দলের অন্যান্যরা হলেন- বাউল জাহাঙ্গির, বাউল মান্দের ফকীর, পুষ্প (বোন), চুমকী কাঙ্গালিনী (বড় মেয়ে)।

কাঙ্গালিনী সুফিয়া বর্তমানে খুবই অসুস্থ্য। তিনি চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রির শেখ হাসিনার নিকট সাহায্য প্রার্থণা করেছেন। একজন অসম্ভব প্রতিভাবান শিল্পী এবং রাজবাড়ী জেলা তথা বাংলাদেশের গর্ব, অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে মারা যাবেন

আব্দুর রহমান বয়াতী ( জীবিত আছেন দারিদ্রতা কে বরন করে ) -
ঢাকার দয়াগঞ্জে ১৯৩৬ সালে ১ জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ ভারতের ঢাকার সূত্রাপুর থানার দয়াগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন আবদুর রহমান বয়াতী। দয়াগঞ্জ বাজারে তাঁর বাবা তোতা মিয়ার একটি হোটেল ছিল। সেখানে মাঝে মধ্যে অনেক গুণী বাউল শিল্পীর আসর বসত। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তাঁর ভেতর গানের প্রতি ভালবাসার সূত্রপাত। ছোটবেলা থেকেই বাউল গানের প্রতি ছিল তাঁর অদম্য আকর্ষণ।

অর্থের অভাবে লেখাপড়ায় বেশি অগ্রসর হতে পারেননি রহমান। মাত্র অষ্টম শ্রেণী পর্যনত্ম লেখাপড়া করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের একজন প্রসিদ্ধ লোকসঙ্গীত শিল্পী। তিনি একাধারে অসংখ্য জনপ্রিয় লোকগানের শিল্পী, গীতিকার, সুরকার এবং সংগীত পরিচালক৷ এ পর্যন্ত তার প্রায় পাঁচশ একক গানের অ্যালবাম বের হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি কোন মিস্তরি বানাইয়াছে’, ‘আমি ভুলি ভুলি মনে করি প্রাণে ধৈর্য্য মানে না’ প্রভৃতি।
পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তা-ই এখন তাঁর জীবন সর্বস্ব। এগুলো হলো-সিটিসেল চ্যানেল আই এ্যাওয়ার্ড, সোলস এ্যাওয়ার্ড, টেলিভিশন দর্শক ফোরাম কর্তৃক লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী কতর্ৃক গুণীজন সংবর্ধনা, নজরম্নল একাডেমী সম্মাননা ২০০৪, সমর দাস স্মৃতি সংসদ এ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ বাউল সমিতি আজীবন সম্মাননা এ্যাওয়ার্ড, মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতি আজীবন সম্মাননা এ্যাওয়ার্ড, ইউএসএ জাগরনী শিল্পীগোষ্ঠী এ্যাওয়ার্ড, স্বরবীথি থিয়েটার কতর্ৃক বাংলা নববর্ষ ১৪১২ উপলৰে সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান, কায়কোবাদ সংসদ আজীবন সম্মাননা, স্পেল বাউন্ড বিশেষ সম্মাননা, বাংলাদেশ বাউল সংগঠন কতর্ৃক গুণীজন সম্মাননা পদক, বিক্রমপুর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদক, জাতীয় যুব সাংস্কৃতিক সংস্থা কতর্ৃক সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি স্বর্ণ পদক ও আজীবন সম্মাননা-২০০৫, সিটি কালচারাল সেন্টার কতর্ৃক গুণীজন সম্মাননা পদক, বাউল একাডেমী পদক, একতা এ্যাওয়ার্ড, লোকসঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ লোকজ বাউলমেলা পদক ২০০৪, ওসত্মাদ মোমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমী কতর্ৃক সম্মাননা পদক ২০০৬ ও শ্রেষ্ঠ বাউলশিল্পী অডিও ক্যাসেট পুরস্কার। এই অসামান্য বাউল শিল্পীর অবদান বাঙালী জাতী ভুলতে পারবে না কোন দিন।
শিল্পী আব্দুর রহমান ২০০৩ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বদেশ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রেকর্ডিং করতে গিয়ে ব্রেন স্ট্রোক করেন। তারপর থেকে আজ অবধি তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। কিছুদিন আগেও এই শিল্পী খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ডাক্তাররা কোনরকমে মৃতু্যর হাত থেকে তাঁকে বাঁচিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেন। এটাও সম্ভব হয়েছিল মাত্র একটি সংগঠন ও সরকারের দেয়া সামান্য কিছু অর্থে।
কুদ্দুস বয়াতী ( জীবিত আছেন দারিদ্রতা কে বরন করে ) -
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার অন্তর্গত রাজিবপুর গ্রামে তার জন্ম। বাবা আরফান বয়াতীর এবং মা আমেনা খাতুন এর আট ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি তার কোনো আগ্রহ ছিল না। সেই স্কুল পালানো ছেলেটির নাম কুদ্দুস বয়াতী। তিনি দীঘল করর্শা স্কুলে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ার পর আর স্কুলমুখী হননি।
কুদ্দুস বয়াতী ছিলেন মনেপ্রাণে পালাকার। বাবা আরপান বয়াতী উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সব সম্পত্তি নষ্ট করেন বলে পরিবারের কেউই চাইতেন না তিনি শিল্পী হন।
১৯৮৯ সালের দিকে বাংলা একাডেমির ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমাকে ঢাকা আগমন !
১৯৯২ সালে হুমায়ূন আহমেদের খাদক নাটকে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পান এবং এর পরে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক বিজ্ঞাপনে কাজ করার সৌভাগ্য হয় ! এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে। এর পর বাল্যবিয়ে রোধসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ থিম নিয়ে ২২টিরও বেশি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন !
নিজে লেখেন, সুর করেন এবং কণ্ঠ দেন।
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত হন । সেখানে প্রথম গান ছিল মরজিনারে আজো তোরে ভুলতে পারি নাই। ওই বছরেই সঙ্গীতা থেকে প্রথম অ্যালবাম বের হয় সোনার নূপুর।
১৯৯৫ সালে কান্দো কেন মন মুভিতে তিতা তিতা নিম তিতা, নিসিন্দা তিতা গানটির মাধ্যমে শুরু হয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক।
কিচ্ছা ও লোক সংগীত বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছি কুদ্দুস বয়াতী ফাউডেশন। এখানে সারা বিশ্বের লোক ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই ফাইডেশনের ফাউনডেশনের মেন্বর হতে পারবে। ফাউনডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তারই ছেলে ইলিয়াস কুদ্দুস।
অসংখ্য পুরষ্কার পেলেও তবে জাতীয় এবং একুশে পদকে প্রতি রয়েছে না পাওয়ার আকাঙ্খা রয়েছে !
শেফালী ঘোষ ( মৃত )
১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় ! শেফালী ঘোষ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যা উপমহাদেশের সংগীতকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছে।
৩১ শে ডিসেম্বর ২০০৬ সালে তিনি পরলোকগমন করেন ! তার গাওয়া জনপ্রিয় গান হল – ওরে শাম্পনাওালা তুই আমারে করলি দিওয়ানা
শেফালী ঘোষ জীবদ্দশায় লাভ করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক পদক-১৯৯০, বাংলা একাডেমী আজীবন সম্মাননা পদক-২০০২ ও শিল্পকলা একাডেমী পদক-২০০৩। মৃত্যুর পর তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদকে-২০০৬ ভূষিত করা হয়।
ফরিদা পারভিন ( জীবিত )
কন্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর নাটোর জেলার সিংড়া থানার শাঔঁল গ্রামে ! ফরিদা পারভীনের বাবা প্রয়াত দেলোয়ার হোসেন পেশায় ছিলেন সাধারণ চিকিৎসক। মা রৌফা বেগম। ফরিদা পারভীনের স্বামী প্রখ্যাত গীতিকার ও কন্ঠশিল্পী আবু জাফর।
ফরিদা পারভীনের কর্মজীবন সঙ্গীতময়। শুধু লালনের গান নয়, তিনি একাধারে গেয়েছেন আধুনিক এবং দেশাত্মবোধক গান। ফরিদা পারভীনের গাওয়া আধুনিক, দেশাত্মবোধক কিংবা লালন সাঁইয়ের গান সমান ভাবেই জনপ্রিয়। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে 'এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা-সুরমা নদীর তটে' 'তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম', 'নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে প্রেমের কী সাধ আছে বলো', 'খাঁচার ভিতর', 'বাড়ির কাছে আরশি নগর' ইত্যাদি !
তিনি ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজ ২০০৮ এ সেরা সঙ্গীতের জন্য পুরষ্কৃত হন। এছাড়া একুশে পদক ১৯৮৭ এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পদকে ছায়াছবির গানে সেরা কন্ঠদানকারী হিসাবে ১৯৯৩ সালে পদক পেয়েছেন।

পবন দাস বাউল , কিরন চন্দ্র রায় ( বাব্লা পাতার কষ লেগেছে ) , রথিন্দ্রনাথ রায় , নিনা হামিদ প্রমুখ !
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন