বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

আমাদের প্রিয় রাজধানী ঢাকা!

DHAKA বানানটি  অতীতে  DACCA বানানে লিখা হতো। আবার মুঘল শাসকদের আমলে ঢাকা কে জাহাঙ্গীর নগর নামে পরিচিত ছিল। আধুনিক ঢাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক  জীবনের প্রধান কেন্দ্র! ঢাকার অবকাঠামো পৃথিবীতে সর্ব নিন্ম হলেও জন সংখ্যা বৃদ্ধি, যানজট, বায়ু দূষণের কারনে শহরের সমস্যা হয়েছে ভয়ংকর! প্রতিদিন প্রচুর মানুষ ঢাকার বুকে পাড়ি জমায় একটি কাজের আশায়। সকলের ধারনা ঢাকা গেলেই একটি চাকরী, একটি কাজ, কর্মসংস্থান মিলবে!
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। মসজিদের শহর ঢাকা। কিন্তু ঢাকা শহরের বর্তমান মানচিত্র  কেমন!
ঢাকা আসলে দুইটা-
-উত্তর ঢাকা

-দক্ষিন ঢাকা

তারপর যদি এলাকা অনুযায়ী ভাগ করতে হয়,
তাহলে হওয়া উচিত ছিল আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প, শিক্ষা, এভাবে! কিন্তু এভাবে কি পরিকল্পনা করা আছে? কিংবা বাস্তব চিত্রটা কি?
মিরপুর – আবাসিক এলাকা?  কিন্তু মিরপুরকে গার্মেন্টসের এলাকা বললেই বেশি দৃষ্টি নন্দন ও  অতি বাস্তব লাগে! এক সময় মিরপুর বাসিন্দা ছিলাম! সকাল বেলায় যখন অফিস আসতাম। তখন অনেক নারীর ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলতাম! সবাই ছুটছে গার্মেন্টসে কাজ করতে। ওই নারীদের মানবেতর জীবন যাপনের বর্ণনা দিলাম না। বহুদিন বছর আগে একজন গাড়ি চালক আমাকে বলেছিল, “ আপা এটা মিরপুর? শুনেছি এখানে নাকি অনেক গার্মেন্টস? খুব ইচ্ছা ছিল এই এলাকাটা দেখার! “ লোকটার কথায় বুঝা যাচ্ছিলো আমিও একজন গার্মেন্টস কর্মী! তাই মিরপুরে থাকি অথবা ছুটে আসা। খুব মজা পেয়েছিলাম সেদিন।
মতিঝিল – এটা এখনও বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে ধরা যায়। তবে ব্যাংক পাড়া বললেই বেশি মধুর শুনা যাবে!
মোহাম্মদপুর – আবাসিক এলাকা! অলিতে গলিতে প্রতিটি বাড়ির নিচেই গরে উঠেছে স্কুল এবং কোচিং সেন্টার! সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিছু সরকারী হাসপাতালের সংস্পর্শে গড়ে উঠেছে এইসব অসাধু, সাধু ব্যবসা! মানব সেবার নামে কসাই খানা।
ধানমণ্ডি- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, বিপণী বিতান, ক্লিনিক, হাসপাতাল, খাবার দোকানের ভিড়ে আবাসিক ভবনগুলু ছেয়ে গেছে বাণিজ্যিক কাজে। সাথে তো যুক্ত আছেই অসংখ্য ইংলিশ মাধ্যমের খ্যাত অখ্যাত স্কুল। প্রতিদিনের যানজট বলে দেয় এলাকাটির মুল বৈশিষ্ট্য। ইমারত নির্মাণ বিধিমালাও সবাই মানে না। কিছু সুউচ্চ ভবনও গড়ে উঠেছে ধানমণ্ডি এলেকায়। যেগুলু রাজউকের নীতিমালা বহির্ভূত।
গুলশান, বনানী – অফিস, ইংলিশ মাধ্যম স্কুল, বিপণী বিতান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, খাবার দোকানে ছেয়ে গেছে প্রতিটি ভবন। মাঝে মাঝে দু একটি ভবনের ভাড়া দেয়ার বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকে “ শুধু মাত্র আবাসিক “ কখনো বা ” শুধু মাত্র অফিস ভাড়া হবে “! কিন্তু প্রতিটি ভবনের নির্মাণের সময় অনুমতি নেয়া হয় রাজউক থেকে আবাসিক বলে! আবার মাঝে মাঝে সরাসরি গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক ভবন কিংবা সুউচ্চ শপিং মল।
রাজধানীতে বংশাল, বেচারাম দেউরি, সুত্রাপুর, চকবাজার, তাঁতিবাজার, শাঁখারিবাজার, ইত্যাদি  এলাকাগুলু নিজেদের ঐতিহ্য মানচিত্র ধরে রাখতে আজ সক্ষম হয়েছে। যদিও ঐ এলাকাগুলু খুব ঘনবসতি, পুরানো ভবনগুলু ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তা ঘাট খুব সরু।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি, সিটি কপরেশনের  দুর্নীতি অবহেলার কারনে রাজধানীর সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে। ঢাকা বাঁচাও নামে একটি সংগঠনও আছে। আরবান ডিজাইনাররা কি করছেন সেটাও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। টিভিতে  টক, ঝাল, তিতা শো করতে প্রায়শই দেশের নামকরা স্থপতিবৃন্দ, আবার কখনো আরবান ডিজাইনাররা এসে লম্বা নীতিমালা শুনিয়ে যান! আসলে তারা আসেন নিজেদের ব্যক্তিগত পরিচতি বাড়াতে! তারপর থেকে সব বাকী! স্বপ্ন হয়ে যায় দুঃস্বপ্ন।
আমাদের দেশের বেশির ভাগ স্থপতিদের অফিসগুলুই গড়ে উঠেছে ধানমণ্ডি, গুলশান, বনানী, লালমাটিয়ায়! যারা ঢাকা নগরের পরিকল্পনা করেন তারাই আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছেন  যুগ যুগ ধরে!  যারা নগর ভবন অঙ্কন করছেন, যারা নগর পরিকল্পনা করছেন তারাই দুর্নীতিগ্রস্থ, নিয়ম ভঙ্গে তারাই এক নম্বর !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন