বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

‘জয়িতা’

বৌ বাজার। নামটার সাথে অনেকেই পরিচিত। অনেকে গিয়েছে দেখেছে। বৌ বাজার বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই আছে । এমনকি ঢাকা শহরেও একাধিক বৌ বাজারের সন্ধান আমি জানি দেখেছি। বৌ বাজার কি? যেখানে বিক্রেতা মহিলা/মেয়েরা! কিন্তু ক্রেতা নারী পুরুষ সকলেই! মহিলাদের দারা পরিচালিত এবং একমাত্র গ্রাহক মহিলা শুধু বিউটি পার্লার গুলুতেই। হস্তশিল্পের কাজেও মহিলারা এগিয়ে। কেমন করে যেন মহিলাদের সাথে কিংবা মহিলারা হস্তশিল্পটাকে অনেকেই শখের বশে আবার অনেকে পেশা হিসেবে নিয়েছে।
২০১২ সালের রোজার ঈদের সময় বেশ কিছু বেসরকারি টি ভি চ্যানেলে একটি দোকানের নাম শুনতে পাচ্ছিলাম। সেটা হল “জয়িতা “! এদের উপর নানা তথ্য চিত্র দেখে আমি লোভ সামলাতে পারলাম না না যেয়ে থাকতে। কিন্তু বিধি বাম। সবাই জয়িতার কথা বলে কিন্তু এটা কোথায় অবস্থিত কেউ বলে না ! ৮/১০ দিন খবরে দেখলাম কিন্তু ঠিকানা পেলাম না। ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে একদিন রিক্সা করে বাসায় যাচ্ছিলাম একটি হলুদ রঙের ব্যানার চোখে পড়লো খুব হালকা ধরনের। সেদিন খেয়াল করতে না পারলেও পরবর্তীতে হলুদ রঙের ব্যানার দেখলেই তাকাই এবং সন্ধান পেয়ে যাই আমার গন্তব্য ‘জয়িতার’।
ধানমণ্ডি রাপা প্লাজায় ‘জয়িতা’ ! উপরে গিয়া দেখি সে কি বিশাল কাণ্ড! পুরু একটা তলা জুড়ে ছোট ছোট অসংখ্য দোকান! সবগুলু পরিচালনা করছে ক্ষুদ্র হস্তশিল্প কাজে জড়িত নারীরা ! এদের সাথে কথা বলে জানলাম ! উদ্যোক্তা হল সরকারের “ নারী ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর “। ভাল লাগলো উদ্যোগ দেখে। এবং সকল কিছুই সুন্দর পরকল্পনা মাফিক। দোকান ভাড়া ও সকলের হাতের নাগালে। যেহেতু দোকানের আকার ও ছোট তারপর সরকারের অধীনে, কিন্তু হতাশ আমি । কারন এই প্রজেক্টটা চালু হয়েছে ২০১১ সালে। যেটার খোঁজ আশা করছি অনেক হস্ত শিল্প প্রিয় নারী/পুরুষ অনেকেই জানে না। কারন কোন প্রচার নেই, বিজ্ঞাপন নেই। নেই উন্নতির কোন চিন্তা। চলছে চলবে। কিভাবে সেটা জানি না। এত ভাল একটা উদ্যোগ যিনি/যারা নিলেন তারা বাস্তবায়ন করে ছেড়ে দিলেন কেন? সেটাকে সচল করে রাখা, আকার বড় করার কোন পরকল্পনাই বা নেয়া হয়নাই হচ্ছেনা কেন?
গতকাল আমি আবার জয়িতা’য় গেলাম। সুন্দর দৃশ্য, সব দোকানে মেয়েরা/মহিলারা কেউ কাজ করছে হাতের কাজ কেউ গান শুনছে, কেউ দোকান গুছাচ্ছে, কেউ ঝিমাচ্ছে, কেউ হতাশ। কেউ বাতাস খাচ্ছে, কেউবা দোকান বন্ধ করে অনুপস্থিত, কেউ দোকান খোলা রেখে দোকানে নেই! ক্রেতা তো নাই বললেই চলে। ৩/৪ জন হবে হয়ত। হিড়িক পরেছে আবার যারা নতুন এসেছে। অনেকেই ব্যবসা গুঁটিয়ে পালিয়েছে বলা যায়। গতকাল দেখে যা মনে হল কিছুদিন পর ‘জয়িতা’ বন্ধ হয়ে যাবে! সবাই লোকসানের ঘানি টানতে না পেরে পালাবে। আর সরকারের ‘জয়িতা’ উদ্যোক্তারা হাতিয়ে নিয়েছেন তাদের উৎকোচ! কারন একটি দোকান বরাদ্দ পেতে অনেক তেল ঢালতে হয়। সেটাও জেনেছি আমার এক পুরনো সহকর্মীর কাছ থেকে।
প্রথমবার ওখানে গিয়ে আমি ওই আপাকে পেয়েছিলাম। আপা তখন অনেক তথ্য দিয়েছিল। ওই আপাও গতকাল দোকান ছেড়ে চলে গেছে! শুরুর দিকে জিনিস পত্রের যা দাম ছিল গতকাল গিয়ে দেখি সব উল্টা পাল্টা! খুব চড়া দাম। পরে বোঝার চেষ্টা করলাম যে ক্রেতা নেই বিক্রি নেই সেই ঘাটতি গুছাতেই এই পরিকল্পনা সকল বিক্রতাদের। যেটার ফলাফল আসলেও ভাল হবেনা। যদিও বিক্রেতারা ভেবে থাকেন যে তারা এভাবে টিকে থাকবে! কারন যারা ক্রেতা তারা’তো ৫০০ টাকার পণ্য ১০০০ টাকা দিয়া অযথা কিনবে না !
সরকারের ‘নারী ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরকে অনুরোধ করছি দয়া করে নজর দিন জাগিয়ে তুলুন ‘জয়িতা’কে ! যেটা একটা ভাল উদ্যোগ ছিল ক্ষুদ্র হস্তশিল্প কাজে জড়িত মানুষগুলোর সাথে।
৩১-০৩-২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন