বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

সঠিক বাংলা উচ্চারণ ও নির্ভুল বানান

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ – এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে !
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আমার মায়ের ভাষা। আমরা আমাদের সেই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করি সব সময়। সালাম বরকত রফিক জব্বারের কথা আমরা কখনো ভুলি না ভুলব না। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা একদিন নয় প্রতিদিন প্রতিক্ষণ করা উচিত আমাদের। সেই শ্রদ্ধা শুধু শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে নয় বাংলা ভাষার সঠিক উচ্চারণ ও প্রয়োগ করে। নির্ভুল বাংলা শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করে।
ভাষার জন্য আমরাই একমাত্র জাতি যারা যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমরা ভাষা প্রয়োগে কতোটা দায়িত্বশীল এবং আবেগপ্রবণ। সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে কোথা থেকে? চোখ কান খোলা রাখলেই আমরা সকলেই জানতে পারব দেখতে পারব।
রাস্তা ঘাটে বড় বড় বিজ্ঞাপন ঝুলছে সেখানে বানানে ভুল লক্ষ্য করার মতো। অনেক দোকানপাট, রেস্তোরাঁ  এসব জায়গায় তো বানান ভুলের মহা উৎসব। আর ভাষা প্রয়োগের কোথায় যদি আসি ব্যাপারটা এমন। কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি টি ভি চ্যানেলে কয়েকটি তরুণের সাক্ষাতকার দেখলাম একটি চলচ্চিত্র সম্পর্কে। প্রশ্ন করা হল ভাইয়া ছবিটি কেমন লাগলো?
- উত্তর: ব্যাপক ভাই ব্যাপক
কেমন আছো বন্ধুরা?
- উত্তর: ” বিশাল ভালো আছি
দেখতে কেমন হয়েছে
- উত্তর: মারাত্মক সুন্দর!
এভাবে মজা করতে করতে কিন্তু আসল ভাষা প্রয়োগ ভুলে বসতে চলেছি আমরা সকলে। আঞ্চলিক ভাষা আছে থাকবে। কিন্তু তাই বলে ভুল প্রয়োগ কিংবা অপপ্রয়োগ মানা যায় না।
অতি সম্প্রতি আমাদের জাতীয় সঙ্গীতকে শেষ থেকে শুরু করে গেয়েছেন ব্রিটেনে বংশদ্ভুত একজন বাঙালি নারী সঙ্গীত শিল্পী। তার ব্যান্ড দলের নাম ” ক্ষ”  । সেটা নিয়ে অনেক লিখালিখি, তুমুল আলোচনার ঝড় উঠেছিল। আমি গানটি একাধিকবার শুনেছি! মুগ্ধ হয়েছি গায়িকার উচ্চারণ দেখে। এত সুন্দর উচ্চারণ করেছেন যিনি বড় হয়েছেন বাংলাদেশের বাইরে! আদৌ তিনি কতোটা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন তা আমি নিশ্চিত নই।
সেদিন রাতে খেয়াল করলাম টিভিতে বানান ভুল । হুড়মুড় করে কি সব ভুল বানান দিয়ে একটা নিউজ টাইটেল দেখলাম।
উচ্চারণ ভুল তা অনেক ক্ষেত্রে মার্জনীয়। কারণ জেলাভেদে নানা ধরনের আঞ্চলিকতার কারনে ভাষা উচ্চারণে সমস্যা হয়। এবং সঠিক উচ্চারণ করানোর চেষ্টা অনেক সময় অসফল হতে হয় । আমি এমন সমস্যা মুখোমুখি হয়েছি। আমার অফিসে একটি পিয়ন আছে যে হাই কোর্ট বলতেই পারেনা ! যতই বলি বল হাইকোর্ট ততই সে বলে আইকোর্ট! হেসে অসফল আমি।
একজন সহকর্মী আছেন যিনি গ্রে’ কে ‘গেরে’ বলে , ব্ল্যাক কে ‘বেলাক’ বলে ! উনিও পারেন না সঠিক উচ্চারণ করতে। এটা অনেক সময় বেড়ে ওঠা পারিবারিক পরিবেশ আবার জন্মস্থানভেদে হয়ে থাকে।
কিন্তু তাই বলে ‘ভুল’ লিখতে ‘ভুল’ করলে তো হবে না। বিশেষ করে প্রচার মাধ্যমগুলোর শতভাগ সতর্কতা প্রয়োজন। যেখানে খুব দায়িত্বহীনতার পরিচয় রেখেছেন প্রচার মাধ্যমের সকল মাধ্যমগুলো। আমার সংগ্রহে এমন অনেক ছবি আছে। কিন্তু এগুলো কোথাও দেয়ার সুযোগ আমি পাই নাই।
সব সময় অসংগতিগুলো নজরবন্দী করা আমার সচেতনতা আবার একটা স্বভাবও বলা যায়।
সকলের আন্তরিক সচেতনতাতেই কেবল আমাদের ভাষাটিকে সুন্দরভাবে বিশ্বব্যাপি তুলে ধরা সম্ভব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন