বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার একজন নারীর গল্প

অনার্স পরীক্ষা দেয়ার পর মিতুর পরিবার তোড়জোড় করে নামলো বিয়ে দিতে এবং ঠিকঠাকই একজন পাত্রের সন্ধান পেল। যাকে সুপাত্র হিসেবে মানতে কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না।  পাত্র -শিক্ষিত, নামাজী, ভদ্র, খুব ভাল পরিবারে সুন্দর করে বেড়ে ওঠা। এক দেখায় সবাই বলে অসাধারন ছেলে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল পাত্র ১৫ বছরের চেনা জানা সকলের!
বিয়ের তারিখ ঠিক হল। ধুমধাম করে দিয়ে। বিয়ের আগে মিতু চাকরি করত। শুরুতে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আপত্তি থাকলেও পরে সেটাও  করেনি। আহা কি ভাল পরিবার! কিন্তু মিতু নিজে থেকেই চাকরিটা ছেরে দিল কারন, যে বেতন পায় আর যে দূরত্ব পার হয়ে চাকরি করতে আসতে হয় সেটা খুবই কষ্টের। এভাবেই কাটল মাত্র ১৫ দিন। তারপর বেরিয়ে আসলো থলের বিড়াল টা! মিতুকে মাস্টার্স করতে দিবে না! পড়াশুনার দরকার নাই!
যার স্বামী একজন উচ্চ শিক্ষিত, সে কি বলে? ধনীর দুলাল। রাজপুত্র  অপদার্থ! সাথে শাশুড়ি  ও গলা মিলালো। মিতু দমে থাকার মেয়ে নয়। ভর্তি হল মাস্টার্স-এ। ক্লাসও শুরু করল। কিন্তু অশান্তির আগুন যে বাড়তেই থাকল। কেন মিতু পড়বে? বাইরে যাবে বউ? বউ চাকরি করতে পারবে না। পরাশুনা বন্ধ করে দিয়ে শুধু ঘরের কাজ করতে হবে। বাসা থেকে কাজের মানুষ গুলিও তাড়িয়ে দিল। সব কাজ মিতু একাই সামলায় পাশাপাশি পরাশুনা সে চালিয়ে যাবেই! স্বামীর পরিবারও দিবে না পড়তে।
হুট করে নয়া শর্ত জুড়ে দিল বাচ্চা নিতে হবে। কিন্তু মিতু বলল আমি বাচ্চা নিব কিন্ত সেটা হবে মাস্টার্স পরীক্ষার পর। সেটাও মানতে নারাজ। আমার বোন বাচ্চা নিতে রাজি হল। তখন জানতে পারল নতুন আর এক আইন ! সেটা হল যতদিন না তারা নিশ্চিত হচ্ছে যে বোনের পেটে বাচ্চার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় ততদিন তাকে বাসা থেকে বের হতে দিবে না। কারন দিল, নইলে নাকি বাচ্চার পিতৃ পরিচয় নিয়ে ঝামেলা হবে? এই অসুস্থতার রহস্য আজও অজানা!
ইতিমধ্যেই বিয়ের ৬ মাস গড়িয়ে গেল এবং এই ৬ মাসে মিতু ৪/৫ বার চলে এসেছে সংসার করবে না বলে। কারন তার স্বামী তাকে ইতিমধ্যেই শারীরিক নির্যাতন শুরু করেছে। মানসিক নির্যাতনের তো ইয়ত্তা নেই। যেটা  লুকিয়ে গেছে সকলের কাছ থেকে।
মিতু চলে এল বাবার বাড়ি। এসে মাস্টার্স পরীক্ষা দিল। ভাল ফলাফল করল। শ্বশুর বাড়ি আর ফিরা হয়নি!
সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে সোনার হরিণ একটা চাকরি পেতে! কবে যে পাবে? অথবা পাবে কিনা জানে না। চাকরি ক্ষেত্রে তালাক প্রাপ্তাদের মূল্য নাই। তারা তাদেরকে অসম্মনের চোখে দেখে। যেটা  মিতুকে দিয়ে পরীক্ষিত। তবে মিতু এবং মিতুদের মতো সকলেই ভাল থাকুক এরই মধ্যে এটাই আমাদের সকলের চাওয়া।
কিন্তু মিতুর আজকের পরিনতির জন্য কে দায়ি? কি বিচার হবে? মিতু এখন একজন  তালাকপ্রাপ্তা নারী! মিতু বলে চাকরি দরখাস্তে তালাক প্রাপ্তা লিখে কেউ ঐ  দরখাস্ত খুলেও দেখে না ডাকেও না!
মিতুকে বিয়ে করতে হবে একজন বিপত্নীক কিংবা তালাকপ্রাপ্ত পুরুষকে! মিতুরা আমাদের সমাজে চোখে খুব অসম্মানের! কারন সে তালাকপ্রাপ্তা!মেয়েরাই পারে সংসার সুখের করতে। যে সংসার ভেঙ্গে যায় সেটার জন্য মেয়েরাই দায়ী। একজন তালাকপ্রাপ্তা নারী আমাদের সমাজে টিকে কীভাবে, কীভাবে থাকে সেটা ওই নারীর কাছে থেকে না দেখলে বুঝা যাবেনা। অনেক বাধা। অনেক লজ্জা। অনেক কষ্ট।
মিতু এখন অনেকটা মানসিক রোগী। চাকরী নেই। তালাকপ্রাপ্তা! আশে পাশের সবাইকে মিথ্যে বলে- বলে স্বামী বিদেশে চলে গেছে। আবার কারও কাছে বলে বিয়ে হয়নি! তালাক প্রাপ্তা সেটাও বলে! অতীত স্মৃতি এখন বর্তমান কষ্টের দিনগুলো তেড়ে বেড়ায়। পাশে এসে কে দাঁড়াবে? মিতুদের মতো অসংখ্য মেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় একটি সম্মানজনক কাজ পেতে!
 কর্মক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীদের প্রাধান্য দেয়া দরকার। তাহলে আত্মহত্যা কিংবা  মানসিক রোগে রোগাক্রান্ত হবে না।  কিন্তু এদের মতো নারীদের দেখলে সকলেই মুখ ফিরিয়ে নেই! ভদ্র সমাজের মুখোসধারীরা।
কেউ কি জানেন মিতুর দোষটা কোথায়? মিতু কি পারবে উঠে দাঁড়াতে দেশের আত্মনির্ভর মেয়েদের মত করে? সন্মানের সাথে বাকি জীবনটা কি কাটাতে পারবে? উত্তরটা কোথাও পাওয়া যায় না। নারী যেন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এক কষ্টের প্রাণী। এক একা নিরবে গুমরে কাঁদে, শুধুই কেঁদে চোখ ভাসায়…।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন