বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

প্রিয় নেতাজী, ফিরে তাকান একটু!

প্রতিদিন সকালে অনেক লম্বা একটা মানুষের লাইন পেরিয়ে বাসে করে অফিস আসি। লম্বা লাইনের মুখোমুখি হই একটাই কারন, একটি খালি আসন পাওয়ার যুদ্ধ! তাই একটু ভোর বেলায়ই বের হই। যথারীতি বাসে উঠে আসন গ্রহন করলাম। নির্ধারিত ১১ টি মহিলা শিশু ও প্রতিবন্দী আসন থাকাতে অনেক মহিলাকেই প্রতিদিন দাঁড়িয়ে ঝুলে চলাচল করতে হয়!
সন্তান কিংবা বাচ্চাদেরকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর মানুষ আছেন যারা ভিক্ষা বৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। ঠিক এমনি একজন মা মেয়ে বাস উঠলেন। মেয়েটাকে বয়স ৯/১০ বছর হবে। মায়ের কোলে মেয়েটি খুব জ্বালাচ্ছে, কাঁদছে। তাকিয়ে দেখি একটি চোখ নেই। ভাবলাম মা বুঝি অন্ধ মেয়েটিকে দেখিয়ে ভিক্ষা চাওয়া শুরু করবেন। না ভিক্ষা চাচ্ছেন না । মেয়েটি কেঁদেই চলেছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম মেয়েটির অন্ধ চোখটি ক্ষত এবং বা হাতে একটি কেনলা লাগানো। (উল্লেখ্য কেনলা হল লম্বা সময় ইঞ্জেকশান কিংবা স্যালাইন দিতে গেলে যেই ব্যবস্থা নেয়া হয়)। বুকটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো। হুড়মুড় করে নিজের আসনটি ছেড়ে দিলাম মা মেয়েকে। দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে জানতে পারলামঁএবং দেখতেও পেলাম মেয়েটির অন্য চোখটি ভাল আছে এবং বা চোখে ক্যান্সার হয়েছে ! মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে কেমোথেরাপি দিতে। অনেকদিন কেমোথেরাপি দিতে পারেনি দুইটা কারনে।
০১. টাকা পয়সার সমস্যা
০২. হরতালে কি করে আসবে এই মা মেয়েকে নিয়া ?
জিজ্ঞেস করলাম কি অবস্থা শরীরের? বললো, আজ ডাক্তার বলে দিবে ক্যান্সার কি পুরু শরীরে ছড়ায়ে গেছে কিনা! যদি ছড়ায়ে যায় তাইলে …..আর বলতে পারলনা। দুই চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়তে শুরু করল। অস্থির হয়ে গেলাম মায়ের চোখের জল দেখে। পরক্ষনেই মা আবার স্বাভাবিক হয়ে মেয়েকে নিয়া ব্যস্ত হয়ে গেলেন। মেয়েটা যে কি জ্বালাচ্ছে মাকে সেটা আমি একজন মা হয়ে সহ্য করতে পারছিলাম না খুব রাগ হচ্ছিলো ক্ষোভ হচ্ছিলো। কিভাবে চিকিৎসার খরচ জোগান দিচ্ছেন? MADAM দেয়! একটু স্বস্তি পেলাম কি করবো আমি? কি করতে পারি এই মেয়েটার জন্য? আমার কতটুকু সামর্থ্যই বা আছে? আমরা তো ব্যস্ত নগরীর যান্ত্রিক মানুষ! এটাও বুঝলাম মেয়েটা আসলে আর…..! তাইলে ওর কিছু ইচ্ছা শখ পূর্ণ করতে কি পারি আমি? মাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি খায় কিছু কি চায়? মা আবার চোখের জল ফেলেই গেলে। না রে আপা আমার মেয়েটার কিছুই চাওয়ার নাই ! তারপর ও ব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা বের করে দিলাম। বললাম ওর ইচ্ছা হয় যা সেটা কইরেন এই টাকাটা দিয়ে। আমার পাশে বসা ছিল যেই মেয়েটি সে এখন ওই মা মেয়ের পাশে বসে আছেন এখনো। উনি ১০০০ টাকা দিলেন।
মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতাল আসলো মা মেয়ে নেমে গেল। আপা আসি।
যতক্ষণ দেখা যায় পিছন ফিরে তাকিয়ে রইলাম ওদের পানে। হয়তো আর কোনোদিন কখনোই মা মেয়ের দেখা মিলবে না। এই ছোট মেয়েটি আমার মতো বড় হয়ে মা হতে পারবেনা ! ওর জীবনটা ৯/১০ বছরেই থেমে গেল। হে আল্লাহ তুমি কেন এমন কষ্ট দাও আমাদের? এত কঠিন পরীক্ষায় কেন ফেল আমাদের? এই নিস্পাপ মেয়েটির কি অন্যায়ের শাস্তি তুমি তাকে এই বয়সেই দিয়ে দিলে ? ও তো এখনো নিস্পাপ ।
বাস থেকে নামার সময় টের পেলাম আমার হাত পা কাঁপছে যেটা এখনো বর্তমান। মেয়েটির চিৎকার আমার কানে বেজে উঠছে। মনে হচ্ছে আমার সন্তানটি আমাকে ডাকছে!
আজ আমার খুব কষ্ট হল এই ছোট মেয়েটির অকাল ঝড়ে যাওয়ার গল্পটি শুনে ও দেখে। ওর পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের সমাজে। আজ যেই মেয়েটির মা দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার মেয়ের প্রাণ ভিক্ষা চাইতে এটা কি তার নৈতিক অধিকার না? একটু সুচিকিৎসা, একটা ভালো সুন্দর জীবন এই মেয়েটি এবং মেয়েটির মায়ের কি গণতান্ত্রিক অধিকারে পড়েনা? তাহলে কেন আজ ঘরে ঘরে খোঁজ নাই তাদের? নির্বাচনী ভোট চাইতে তো প্রতিনিধিরা ঠিকই দ্বারে দ্বারে যেতে পারেন। বুকে জড়িয়ে ধরতেও ঘেন্না লাগেনা।
আমাদের দেশ প্রিয় বুদ্ধিজীবীদের কাছে হাত জোর, নেতাদের অনুরধ করবো, দয়া করে প্রতিমাসে না পারেন ৩ মাসে একবার করে সকলের খোঁজ নিন! আপনি শুধু আপনার নির্বাচনী এলেকার লোকদের খোঁজ নিন। একটু পিছনে ফিরে তাকান। আমরা তো আপনাদেরই একজন। রাজার নীতি নয় রাজনীতি সকলের মঙ্গলের জন্য এমন কিছু করুন যাতে সকলেই হাঁসতে পারে। একটু তাকান আমাদের দিকে। খোঁজ নিন ফিরে তাকান !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন