বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

আম্মু পদ্মা সেতু বানায় না কেন সরকার? মেঘনা সেতু ভাঙল কি করে?

হাসিন, বয়স ৭+, ক্লাস টু তে পড়ে। এ বয়সী ছেলে মেয়েগুলো এমনিতেই অনেক কৌতুহুলি হয়। এমন একজন হাসিন। গত মাসে রাজশাহী থেকে বেড়িয়ে আসলাম। প্রথম বারের মতো বঙ্গবন্ধু সেতু দেখার সুযোগ, একসাথে মা ছেলেসহ পুরো পরিবার পেলাম। এত বড় ব্রিজ! আম্মু আমাদের দেশে আর কয়টা বড় ব্রিজ আছে? বললাম যে কয়টা মনে পরল তখন ।
হুট করে আমাকে আমাকে প্রশ্ন করল পদ্মা নদীতে কোনো ব্রিজ নাই ?
- না বাবা নাই!
কেন নাই?
- তৈরি করা হয়নাই!

কেন তৈরি করা হচ্ছেনা?

- হবে বাবা হবে ?
কিন্তু কবে? এখনও হচ্ছেনা কেন?
বাধ্য হয়ে বললাম বাবা সরকার চেষ্টা করছে ব্রিজ বানাতে। অনেক বড় ব্রিজ তো অনেক টাকা লাগবে, সে জন্য দেরি হচ্ছে।
কেন সরকারের টাকা নাই আম্মু?
- এত টাকা নাই বাবা !
আম্মু তুমি মিথ্যা কথা বলতেছ। সকারের টাকা নাই! হি হি কি বোকা আমার আম্মু!
অনেক বুঝালাম, বললাম সত্যি বাবা। আমরা গরিব দেশ তো, এত টাকা আমাদের নাই! বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ বাবা! আমরা সাহায্য চাচ্ছি। পাচ্ছি না!
কেন পাচ্ছেনা আম্মু?
কি করে বুঝাই দুর্নীতি জড়িয়ে গেছে! কি করে বুঝাই কেন টাকা নাই? কেন বানানো হচ্ছেনা পদ্মা ব্রিজ!
শেষ করে দিলাম বাবা শোনো খুব শীঘ্রই বানাবে! এত প্রশ্ন করোনা বাবা। (বিরক্ত হয়েই গেছি বলা যায়)। যখন বানাবে দেখতে পাবা জানতে পারবা!
কি করে আম্মু? টাকা পাবে কই? বাংলাদেশকে কেন গরীব দেশ বলা হয়? উন্নয়নশীল দেশ কি?
বললাম এমনও হতে পারে আমার বেতন থেকে, তোমার বাবার বেতন, মামার বেতন সবার বেতন থেকে কিছু পরিমান টাকা কেটে রাখবে! তারপর শুনেছি এই আমরা মোবাইল দিয়ে কথা বলি সেখান থেকেও টাকা কেটে রাখবে! বুঝলা বাবা! আমাদের টাকা দিয়ে বড় ব্রিজটা বানানো হলেও হতে পারে! আবার অন্য ভাবেও হতে পারে! আমি জানি না বাবা! তুমি যখন বড় হবা তখন সব বুঝবা!

একটু পর আবার প্রশ্ন, মেঘনা সেতু ভেঙ্গে গেল কেন? এটা কেন মেরামত করতে হচ্ছে? কেন এতদুর ঘুরে বাবাকে কুমিল্লা যেতে হয়? বাবা কি আজো ভাঙ্গা ব্রিজটার উপর দিয়ে গেল? 
হ্যালো বাবা তুমি আর বাসায় ফিরবানা? যেদিন বাবা ওই রাস্তা দিয়ে ঢাকার বাইরে যাবে সেই সে বাবাকে ফোন দিয়া জানতে চাইবে! ভয় পায়! বাবা তুমি যখন ব্রিজের ওপর উঠো তখন কি ব্রিজটা কাঁপতে থাকে? বেশী নড়ে? ভয় পাওনা? ছিদ্র হয়ে গেছে?
হাসিন ব্রিজ মেরামত হচ্ছে! চুপ থাকতো বাবা!
কতদিন লাগবে? আম্মু সত্যি কি মেরামত হচ্ছে? নাকি গাড়িসহ ব্রিজ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাবে! আম্মু তুমি না ইঞ্জিনিয়ার? তুমি আমাকে বল!
বাবা এত গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করে যে ব্রিজের যতটুকু ক্ষমতা ওজন নেয়ার তার থেকে অনেক বেশী নিতে হচ্ছে। যে ইঞ্জিনিয়ার ডিজাইন করেছে তিনি ভাবতেও পারেন নাই আমাদের দেশে এত দ্রুত গাড়ির সংখ্যা বেরে যাবে। বাবা জনসংখ্যার উপর একটা হিসাব। প্রতিদিন রাস্তা দিয়ে কয়টা গাড়ি চলে সেটার একটা জরিপ  করে পড়ে একটা ব্রিজ ডিজাইন করা হয় এবং তাই হয়েছিল! তারপর তো সিমেন্ট, রড, বালি এইসবের ঘাপলা আছেই বাবা!
তখন ছেলে বলে, তাইলে মা চলো আমরা আমেরিকা চলে যাই। নইলে অস্ট্রেলিয়া। যেটা ধনী দেশ। এখানে কেবল হরতাল, যানজট, মারামারি হয়।
নাহ যাবনা! ওখানে গেলে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। আমি বাংলা বলতে ভালবাসি। শুনো, তুমি কিন্তু আমাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ভর্তি করবেনা। নানা কথা নানা প্রশ্ন।
আমার স্বামী তার ছেলের প্রশ্নের দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে শুনল আর বলল এই GENERATION বড় হলে কি হবে দেখলা? সব খুঁটিয়ে বের করবে । অনেক সচেতন! আমার তোমার মতো না। আমার সন্তানের দিকে তাকিয়ে আমিও সত্যি অবাক হই। আবার আতকে উঠি আমাকে আবার ত্বকীর মা হতে হবে নাতো ? কিংবা বিশ্বজিৎ? আমাদের দেশে বেশি সচেতন হওয়া কি ভাল? নিজের প্রশ্নে নিজেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পুড়ে মরি। বড় করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি!
তবুও আশায় বুক বাধি। আমার ছেলে এই দেশের মাটিতে দেশকে ভালোবেসে বড় হোক, দেশের জন্য ওর মেধাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাক। ভাল মানুষ হোক এটাই আমি চাই! সুস্থ জীবন যাপন করুক! একজন গর্বিত নাগরিক হয়ে উঠুক। আমার দেশের রাজনীতি কি ওদের জন্য হয়ে উঠবে না?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন