বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

হরতালের সুবিধা অসুবিধা

হরতাল দিলে কি হয়, দেয়া ঠিক না ইত্যাদি নিয়ে অনেক লিখা লিখি, টক শো হয়েছে এবং হচ্ছে! একটু ভিন্ন ভাবে বলছি আমি। হরতাল দেয়ার অসুবিধা আর সুবিধাগুলু কি কি কেমন হয়:
অসুবিধা- 
১ । দেশে বিরোধী দল যে আছে টের পাওয়া যায় না
২। গাড়ি জ্বালাও পোড়াও খেলা খেলে
৩। নিরীহ মানুষ নিহত আহত হয়
৪। দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসাপাতি পণ্ড হয়
৫। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে, ফলে শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে পড়ছে
৬। যাতায়াত খরচ বেড়ে যায়
৭। রাস্তায় চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় পরতে হয়
৮। দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে যায়
সুবিধা সমূহ-
১। দেশে বিরোধী দল সক্রিয় আছে মনে হয়
২। দেশের সেবায় দেশের এক শ্রেনির মানুষ সক্রিয় সেটা টের পাওয়া যায়
৩। রাস্তাঘাট ফাঁকা, যানজট নেই
৪। সময় বেঁচে যায় বাইরে চলাচলে
৫। কিছু বেকার মানুষ গাড়ি পোড়ান, পিকেটিং করার জন্য টাকা পায়
কি অদ্ভুত লাগে শুনতে! বলতে! জানতে ! কিন্তু কোনো মানে আছে কি? মানে ছাড়া, ভালো পরিনতি ছাড়া এমন কিছু কি করা উচিত ! আসলেই কি হরতালে কোন সুবিধা আছে? যেগুলোকে সুবিধা বলে বলছি ওগুলো কি সুবিধা? নাকি হঠকারিতা? সাধারন মানুষ ঠকানোর খেলা বন্ধ করা দরকার।
ব্যাংক, বীমা, অফিস, আদালত, সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সময়মতোই চলছে। লেনদেন কম হলেও সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে অফিসে উপস্থিত থাকতেই হচ্ছে এবং থাকছেন।
কিন্তু সর্বনাশের রোষানলে পড়ছেন ব্যবসায়িরা ! যারা দোকানপাট খুলে ব্যবসা করে থাকেন। কাপড়, গয়না, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, বড় বড় শপিং কমপ্লেক্স  ইত্যাদি বন্ধ করা ছাড়া কোনো  উপায় থাকে না। এই ক্ষতি কি পুষিয়ে দেয়ার মতো? বিশেষ করে অতি দরিদ্র এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের?
হরতালের বিকল্প কিছু চিন্তা বাস্তবায়ন করার সময় এখন খুব জরুরি। কিন্তু কেউ কি কিছু করবেন বলে মনে হয়। দেশের সকল ব্যবসায়িরা এক হয়ে হরতাল প্রত্যাখ্যান করার জন্য পাল্টা আন্দোলন করার দরকার হয়ে পড়েছে জরুরী ভিত্তিতে? নইলে আমাদের দরিদ্র দেশ মহামারী দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে আর বেশী দেরি নেই।
হরতাল শব্দটি একেবারে মুছে দেয়ার একটি ভীত তৈরি করতেই হবে। রাজণিতবিদরা আন্দোলন নামক ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করুন। নইলে আমার সন্তান ক্লাস টু থেকে তৃতীয় শ্রেনিতে কখনো উঠতে পারবে না। আমার ভাই এইসএসসি পাশ করতে পারবে না। আমার কাকার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে! বাসা ভাড়া  দিতে পারছেনা! ছোট ভাইটি বিশ্ববিদ্যালয় পাশ দিতেই পারছে না! বাজার থেকে কিছু কিনতে পারছিনা! দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য! আমার নানু গাড়ি চড়ে হাসপাতাল যেতে পারছেন না! উনার বয়স ১০০ হয়ে গেছে! প্লিজ ভাই, ও ভাই আমার নানুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গাড়িটি পুড়বেন না! আমার মামা অনেক কষ্ট করে গাড়িটি কিনেছে! শুধু তার বৃদ্ধ মায়ের একটু সুবিধার জন্য! মায়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে লোন নিয়ে কেনা গাড়িটি নিয়ে তোম ধ্বংসের খেলা খেলতে পারনা!কে দিয়েছেেএমন অধিকার তোমাদের?
আমার ভাইটিকে রাজনীতিতে ব্যবহার করে তাকে হত্যা করো না! আমরা খুব সাধারণ পরিবারের মানুষ! আমার ভাইটিকে মেরে ফেললে, পঙ্গু করে ফেললে চিকিৎসা করানোর কেউ নেই! আমার বাবা মায়ের দেখাশোনার কেউ থাকবে না!
তোমরা যারা দেশের জন্য এত ভাবছ, আন্দোলন করছ, হরতাল অবরোধ মিছিল মিটিং করছ, তারা নিজেরাই নেমে এসো রাস্তায় পরিবার সন্তান নিয়ে! তোমরা তোমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিশ্বজিতের মতো ছেলেকে মারতে পারনা!  
আমার রাজনীতিবিদ ভইয়েরা, দেশ আজ তোমাদের হাতে জিম্মি! আমি আমার ভাইয়ের জীবন ভিক্ষা চাইছি! আমার পরিবারের নিরাপত্তা তোমাদেরই দিতে হবে। তারপর তোমরা আন্দোলন করো, দেশ প্রেম দেখাও! ক্ষমতার মসনদে বসো। আমাদের ভালো রাখো তোমরাও ভালো থাকো। একা একা ভালো থাকতে আর চেয়ো না। আজ আমি আমার পরিবারের জন্য স্বার্থপর, তোমাদের নোংরা রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করছি, এবং করব। যারা যুগ যুগ ধরে দেশপ্রেম নামক দেশের ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত মানুষরূপী নেতারা! ধিক তোমাদের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন