বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

চলতি পথে হঠাৎ থামিলাম! (বিড়ম্বনা-২)

মোহাম্মদপুর থেকে গুলশান-১ বাস আছে তরঙ্গ আর বিআরটিসি। যাত্রাস্থল এবং গন্তব্য একই, কিন্তু ভাড়া আলাদা! তরঙ্গ বাস ভাড়া  নেয়– ২০/- টাকা, আর বিআরটিসি বাস নেয় ১৫/- টাকা! এমন করে প্রতিটি দূরত্ব পরিমাপ করে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বাসের আসন প্রতি।
 কিন্তু(!) অদ্ভুত ব্যাপারগুলো হল–
বাসের আসন পূর্ণ হলে বাস গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার কথা! কিন্তু এটা কখনো মানা হয় না। বাসের যাতায়াত গলিতে যতক্ষণ লোকজন বাদুর ঝুলা না ঝুলছে ততক্ষণ বাস ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে এবং মাঝ পথ থেকে বাড়তি ২০/৫০ আয় করতে চালক ও সহকারীর যন্ত্রণা তোঁ আছেই।
একে তো অসহনীয় যানজট যন্ত্রণা মস্তিষ্ক দখল করে ফেলেছে অনেক আগেই। তারপর বাস চালক, মালিক, সহকারীদের হঠকারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি বহুদিন যাবত।
যন্ত্রণা সইতে না পেরে ঠিক করলাম সকাল ৯ টার অফিস আরাম করে পৌঁছাতে সকাল ৭.৩০ মিনিট যাত্রা শুরু করার। তাই করলাম। বুদ্ধি করে লাইনে দাঁড়িয়ে যাই। আসন পাব বুঝলে শুরুতেই টিকিট কেটে দাঁড়াই। যদি বুঝি নাহ আর দুইটা বাস গেলে আসন পাবো তাহলে টুক করে ঢুঁকে পরি লাইনে। কিছুক্ষণ পর সামনে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ভাই/বোনকে বলে যাই টিকিট নিয়ে আসি বলে টিকিট এনে সোনার হরিণ বাসের আসনটিতে বসি। আমি নই বেশীরভাগ যাত্রী-ই এই বুদ্ধি করে বাসে উঠেন প্রতিদিন। আবার অনেকে জায়গা রাখেন কেউ আসবে বলে! হি হি হি! রাস্তার এই বিড়ম্বনাগুলোকে আমি মজা হিসাবে নেয়ার চেষ্টা করছি। পারছি না, আবার পারছিও।
কিন্তু ঐ ঝুলন্ত বাবুদের ঝুলা না পর্যন্ত বাস ছাড়বেই না! এত দেরি দেখে বুদ্ধি করে অগত্যা বেছে নিয়েছি ঘুম! ঘুমিয়ে যে খুব উপকৃত হয়েছি তার নমুনাটাও জানাচ্ছি।  ঘুমিয়ে বেশ কয়েকদিন গুলশান পার হয়ে বাড্ডা গিয়ে নামতে হয়েছে আমাকে! এমন করে বাড্ডা চলে যাই বলে আমাকে বাসা থেকে বলে দিলো- ”পাশে বসা মানুষটির গন্তব্য জেনে উনাকে বলবে জাগিয়ে দিতে”। হায় খোদা! একজন আপুকে বললাম, উনি আমাকে বলে ‘আমিও তো ঘুমাই’ । হি হি! অন্য আরেক দিন আরেকজন। আপনি আমাকে মহাখালী আসলে জাগায়ে দিয়েন দেখবেন নিজেও জেগে গেছেন। কি আর বলবো! আমার স্বামীকে বললাম, তুমি ঠিক ১৫ মিনিট পর ফোন দিয়ে জাগিয়ে দিবে! বিধিবাম, উনি আমাকে ৫ মিনিট পর জাগিয়ে দিয়ে বললেন ১৫ মিনিট হয়নি! চরি (সরি)!
সেদিন তোঁ একজন ভদ্রলোক  বলেই ফেললেন, ”মা ১৫/ – টাকা ভাড়া দিয়ে কিন্তু দারুন একটি ঘুম দিলা”! হেঁসে বাস থেকে নেমে পড়লাম!
তবে ইদানিং আর ঘুমাই না। ঘুমালেও জেগে উঠি উঠতে পারি।
বাস মালিক এবং পরিবহন সমিতির সকলের আশু দৃষ্টি কি আকর্ষণ করতে পারি? যে এক দূরত্ব কিন্তু ভাড়া আলাদা কেন? আসন অনুযায়ী ভাড়া বণ্টন করে কেন ঝুলন্তভাবে অফিসগামী মানুষগুলুর মন মেজাজ সকাল বেলায় খিটমিটে করে দেয়া হয়?
আমরা ভাড়া দিব সঠিক এবং একটু আরামদায়ক ভ্রমন করতে চাই ঢাকার ভিতর এবং বাইরে। যাত্রাপথের এই বিড়ম্বনা ঘুচবে কি? ঘুচবেনা! বদলে যাবো কি বদলে গেছি! বদলে দিবে কি সব বদলে দিয়েছেন! এখন কেবল রানা প্লাজা, তাজরিন গার্মেন্টস কিংবা বিশ্বজিতের মতো অবস্থায় পরি নাই!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন